আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে নামছে বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। এ মাস থেকেই শুরু হবে তাদের আন্দোলন কর্মসূচি, যার মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করবে তারা। বিএনপি নেতারা আগামী সপ্তাহে আবারও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন, যেখানে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে এবং নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানানো হবে।
বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের একাধিক বক্তব্যের কারণে নির্বাচনের বিষয়ে একটি অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তাদের মতে, এ ধরনের অনিশ্চয়তা রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতে পারে, যা দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। দেশ-বিদেশে ভুল বার্তা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া, দীর্ঘসময় পর্যন্ত অনির্বাচিত সরকারের ক্ষমতায় থাকা জাতির জন্য একটি নেতিবাচক উদাহরণ হতে পারে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ সমকালকে জানান, তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার জন্য দীর্ঘদিন ধরে আহ্বান জানিয়ে আসছেন এবং ঈদের পর একাধিক দল নিয়ে আবারও আনুষ্ঠানিকভাবে সেই দাবি জানানো হবে। তিনি আরও বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যদি একাধিক বার একে অপরের সাথে মিলিত না হতে বলেন, তাহলে তাদের পক্ষ থেকে সরকারকে সংশোধন করার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু করা হবে।
এদিকে, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস মহাসম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার সময় বলেছেন, "এ বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।" তবে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বক্তব্যকে অস্পষ্ট হিসেবে উল্লেখ করেছেন এবং রোডম্যাপের দাবির সুর চড়িয়েছেন। তিনি স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা এবং দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, যদি সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে না। এছাড়া রাজনৈতিক মহলে নতুন একটি দাবির উত্থাপনও হয়েছে, যেখানে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস সরকারকে অন্তত ২০২৯ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় রাখার প্রস্তাব করেছেন। এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের মতে, সরকারের ঘনিষ্ঠ কিছু বুদ্ধিজীবীর পরামর্শে এটি একটি প্রচেষ্টা হতে পারে, যা জাতীয় সরকারের রূপান্তর হতে পারে।
বিএনপির নেতারা নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের বিরুদ্ধে নানা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা জানান, সরকারের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব দেশের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে এবং তা অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত। বিএনপি নেতাদের মতে, সরকারের ব্যর্থতা এবং নানা অস্থির পরিস্থিতি জনমনে অস্বস্তি তৈরি করেছে।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, "এ সরকার দুর্বল এবং অকার্যকর হওয়ায় নৈরাজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।" তিনি আরও বলেন, এ অবস্থা চলতে দিলে দেশের মানুষের জীবন আরও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। এ কারণে, সরকার যদি নির্বাচন ঘোষণা না করে তবে আন্দোলন আরও তীব্র করা হবে।
এদিকে, আওয়ামী লীগ বিরোধী দলগুলো এক প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ করে নির্বাচন নিয়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে। তারা জানিয়ে দিয়েছে, যদি নির্বাচন বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসে, তবে আগামীতে বড় ধরনের আন্দোলনের ঘোষণা আসতে পারে।