জীবনযাত্রা স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা

চোখের হাসপাতালের অচলাবস্থা চতুর্থ দিনে, চিকিৎসাসেবা বন্ধ: চরম ভোগান্তিতে রোগীরা

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ৩১-৫-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০২০

ঢাকার জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চতুর্থ দিনের মতো চিকিৎসাসেবা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রয়েছে। সম্প্রতি জুলাই গণআন্দোলনে আহতদের সঙ্গে হাসপাতাল কর্মচারী ও চিকিৎসকদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে গত বুধবার সকাল থেকেই এই অচলাবস্থা শুরু হয়। এতে করে প্রতিদিন শত শত রোগী চিকিৎসা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরছেন।

আজ শনিবার সকালেও হাসপাতালের মূল ফটকে রোগীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো সেবা না পেয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। আজিমপুর থেকে আসা রোগী আজিজ মিয়া বলেন, “সরকারি হাসপাতালে চারদিন সেবা বন্ধ, অথচ সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্য নেই আমাদের। তাহলে আমরা যাব কোথায়?”

গতকাল শুক্রবারও পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে হাসপাতালের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ছাত্র প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও কোনো কার্যকর সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। হাসপাতালের চিকিৎসাধীন আন্দোলনকারী রোহান আহমেদ জানান, “সব ধরনের সেবা বন্ধ। ওষুধ ও খাবারও বাইরে থেকে সংগ্রহ করতে হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার বিষয়ে বৈঠক হলেও চিকিৎসা চালুর বিষয়ে কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।”


হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সহিংস আচরণ এবং ভাঙচুরের ঘটনায় চিকিৎসক ও কর্মচারীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ফলে তারা কাজে ফিরতে অনিচ্ছুক। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জানে আলম বলেন, “চিকিৎসক ও কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত সেবা কার্যক্রম চালু করা সম্ভব নয়। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সমাধানে পৌঁছাতে।”

বর্তমানে হাসপাতালটিতে জুলাই আন্দোলনের ৫০ জন আহত সদস্য ভর্তি রয়েছেন। এর বাইরে আত্মহত্যার চেষ্টা করা চারজন সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও একজন সিএমএইচে চিকিৎসাধীন। নিরাপত্তার অভাবে প্রায় ১৫০ জন সাধারণ রোগী হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন।

সংঘর্ষের পেছনের ঘটনা: হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ মে চারজন আন্দোলনকারী বিষপান করলে উত্তেজনার সূচনা হয়। এরপর ২৭ মে এক আহত রোগী পরিচালকের কক্ষে গিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ ঘটনার রেশ ধরেই ২৮ মে সকাল ১১টার দিকে তিন পক্ষের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ বাঁধে—জুলাই যোদ্ধা, হাসপাতাল কর্মচারী ও রোগীদের স্বজনদের মধ্যে। এই ঘটনার পর থেকেই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা স্থগিত রয়েছে।

উল্লেখ্য, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে প্রতিদিন গড়ে ১২০০ থেকে ১৫০০ জন বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা নেন। সেবা বন্ধ থাকায় এসব রোগী এখন অন্য হাসপাতালের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হচ্ছেন।