২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের মধ্যে দায়ের হওয়া রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো প্রত্যাহারের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ইতোমধ্যে সারা দেশে ১০ হাজার ৫০৬টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন-১ শাখার এক কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৯ নভেম্বর মানিকগঞ্জে নাশকতা ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির অভিযোগে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ১৫ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই রাতেই জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুদ পারভেজ ও ছাত্রদল কর্মী জসিম উদ্দিন ওরফে আকাশকে গ্রেফতার করা হয়। মামলায় অভিযোগ আনা হয় ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে নাশকতা সৃষ্টির।
তবে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা এই মামলাকে ‘গায়েবি’ ও ‘হয়রানিমূলক’ মামলা আখ্যা দিয়ে বলেন, ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশ বানচাল করতেই সরকার এমন মামলা ও গ্রেফতারের আশ্রয় নিয়েছিল। জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এসএ জিন্নাহ কবির অভিযোগ করেন, তার নামে বিগত সরকারের আমলে ৩৩টি হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই ধরনের রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের লক্ষ্যে দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে—একটি জেলা পর্যায়ে, অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ে। জেলা পর্যায়ের কমিটির সভাপতি থাকছেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং সদস্য হিসেবে আছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার ও পাবলিক প্রসিকিউটর। এ কমিটি মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে যদি মনে করে মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তাহলে তা প্রত্যাহারের জন্য সুপারিশ পাঠাবে।
সুপারিশ পাওয়া মামলাগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি, যার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।
আইন অনুযায়ী, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুসারে মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে কার্যকর করা হচ্ছে। প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পাবলিক প্রসিকিউটরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে মামলা চালানো না চলানোর বিষয়ে আদালতকে অবহিত করছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নিরাপরাধ রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি থেকে মুক্তি দিতে এ উদ্যোগ চালু রাখা হবে। এই উদ্যোগের আওতায় ব্যক্তি পর্যায়েও স্বরাষ্ট্র বা আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা যাবে। তবে আবেদনের সঙ্গে মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রের সত্যায়িত অনুলিপি জমা দিতে হবে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আওতাধীন মামলাগুলো প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে রয়েছে বিশেষ বিধান। ২০০৪ সালের দুদক আইনের আওতায় হওয়া মামলাগুলোর জন্য কমিশনের লিখিত অনুমোদন ছাড়া মামলা প্রত্যাহার সম্ভব নয়। এ ধরনের মামলা চিহ্নিত করে পরে আলাদাভাবে করণীয় নির্ধারণ করবে মন্ত্রণালয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ পরিচালক ফয়সল হাসান বলেন, "নিরপরাধ ও রাজনৈতিকভাবে হয়রানির শিকার ব্যক্তিদের মুক্তি দিতে সরকার সচেষ্ট। জননিরাপত্তা এবং আইন মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।"