সকল খবর দেশের খবর

জাতীয় কবি নজরুলের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী আজ: দেশজুড়ে শ্রদ্ধা ও উদযাপন!

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ২৫-৫-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৪৯

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ (২৫ মে), জাতির চিরবিদ্রোহী কণ্ঠ, কবিতা ও গানে সাম্য, মানবতা ও দ্রোহের মন্ত্রগাথা—জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিকপাল, বিদ্রোহের কবি নজরুল আজও বাঙালির চেতনায় প্রেরণার উৎস, সংগ্রামে অগ্রদূত।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ এই কবি ১৮৯৯ সালের ২৫ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর সাহিত্যজীবন, সঙ্গীতচর্চা, রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ এবং সাংস্কৃতিক সংগ্রাম আজও প্রজন্মের পর প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি

জাতীয় কবির জন্মদিন উপলক্ষে আজ সকাল সোয়া ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তারা সমবেত হন। সেখান থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের নেতৃত্বে একটি শোভাযাত্রা বের হয়ে কবির সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও ফাতেহা পাঠের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

পরে কবির মাজার প্রাঙ্গণে আয়োজিত স্মরণসভায় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা, প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম (সিরাজ সালেকীন)।

এবারের জন্মবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে: ‘চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার’।

জাতীয় পর্যায়ে তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠান

জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় কুমিল্লায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য আয়োজন।

আজ বিকেল ৩টায় কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মফিদুর রহমান।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মো: লতিফুল ইসলাম শিবলী এবং কবিপৌত্রী ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান খিলখিল কাজী। স্মারক বক্তব্য প্রদান করেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। স্বাগত বক্তব্য দেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো: আমিরুল কায়ছার।

অনুষ্ঠানে ‘নজরুল পুরস্কার ২০২৩ ও ২০২৪’-এর জন্য মনোনীত গুণীজনদের হাতে সম্মাননা তুলে দেওয়া হয়।

কবি নজরুল: দ্রোহ, প্রেম ও মানবতার প্রতীক

কাজী নজরুল ইসলাম শুধু কবিতায় দ্রোহের আগুন জ্বালাননি, সমানভাবে প্রেম ও সাম্যের গান গেয়েছেন। তিনি লিখেছেন প্রায় তিন হাজার গান, যার অধিকাংশই তিনি নিজে সুরারোপ করেছেন। এই গানের ধারা আজও ‘নজরুলসঙ্গীত’ হিসেবে সমাদৃত।

‘বিদ্রোহী’, ‘কান্ডারী হুঁশিয়ার’, ‘লাঠি মার ভাঙরে তালা’, কিংবা ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’ — এসব কবিতায় যেমন রয়েছে বিপ্লবের আহ্বান, তেমনি ‘ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে’, কিংবা ‘ইয়া মোহাম্মাদ’ গানের মাধ্যমে ধর্মীয় অনুভূতির গভীর বহিঃপ্রকাশও ফুটে উঠেছে।

তাঁর সাহসী ও মানবিক অবস্থানের কারণে তিনি জেল-জুলুম, বই বাজেয়াপ্ত—সবই সহ্য করেছেন, তবু দমে যাননি। বাংলা সাহিত্যে নজরুল ছিলেন এক অমিত শক্তির নাম, যিনি পরাধীন জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন জাগরণের, স্বাধীনতার।

স্মরণে চিরবিদ্রোহী ‘দুখু মিয়া’

মাত্র ৯ বছর বয়সে পিতৃহারা হওয়া ‘দুখু মিয়া’ গ্রামের মসজিদে মুয়াজ্জিন থেকে সৈনিক, তারপর সাহিত্যিক ও জাতীয় কবি হয়ে ওঠার পথ ছিল চরম সংগ্রামের। মধ্যবয়সে পিকস ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারিয়ে ফেললেও, তাঁর সৃষ্টি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে অনন্তকাল পর্যন্ত।

১৯৭২ সালের ২৪ মে, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে কাজী নজরুল পরিবারসহ বাংলাদেশে আগমন করেন। তাঁকে জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট কবি পৃথিবী থেকে বিদায় নেন, তবে তাঁর লেখনী আজও জাগিয়ে তোলে বাঙালির চেতনাকে।

নজরুলের উচ্চারণ আজও কাঁপিয়ে দেয় হৃদয়—

“কাণ্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর
বাঙালির খুনে লাল হলো যেথা ক্লাইভের খঞ্জর।”

বাঙালি আজও সেই বিদ্রোহীর পথেই জাগে, গাই—

“বাজিছে দামামা, বাঁধরে আমামা/ শির উঁচু করি মুসলমান।”