সকল খবর ময়মনসিংহের খবর

ময়মনসিংহে ব্রহ্মপুত্র নদ ড্রেজিংয়ের বালু চুরি: স্থানীয় প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ !

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ২২-৩-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫১১২

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কুষ্টিয়া পাড়া ও ডিগ্রি পাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদ ড্রেজিং প্রকল্পের উত্তোলিত বালু চুরি করে বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে এ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এতে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। অন্যদিকে, যেসব কৃষকের জমির উপর বালু স্তূপ করে রাখা হয়েছে, তারা ক্ষতিপূরণ না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।  

জানা গেছে, ২ হাজার ৭৬৩ দশমিক ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ খনন প্রকল্প শুরু হয়। প্রকল্পটির কাজ ২০২৪ সালের ৩০ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনা ও অন্যান্য কারণে এর মেয়াদ ২০২৭ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী, ড্রেজিংয়ে উত্তোলিত বালু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও দরিদ্র পরিবারদের জন্য বিনামূল্যে বরাদ্দ দেওয়ার কথা। অবশিষ্ট বালু নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে সরকারি কোষাগারে জমা করার নিয়ম রয়েছে।  

সম্প্রতি সদর উপজেলার বোররচর ইউনিয়নের কুষ্টিয়া পাড়া ও ডিগ্রি পাড়া এলাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে এক কিলোমিটার দীর্ঘ সারিতে উত্তোলিত বালু স্তূপ করে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড জরিপ চালায়। নিলামের জন্য কমিটি গঠন করা হলেও তার আগেই স্থানীয় প্রভাবশালীরা রাতের আঁধারে এবং দিনের বেলাতেও বালু চুরি করে বিক্রি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, দুটি ভেকু মেশিন দিয়ে বালু তুলে ১০-১২টি লরি ও হ্যান্ড ট্রলিতে করে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানান, গত এক মাস ধরে এ কর্মকাণ্ড চলছে এবং গত কয়েকদিনে চুরির পরিমাণ বেড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ ও ভূমি অফিসের সামনে দিয়ে বিনা বাঁধায় বালু বোঝাই গাড়ি চলাচল করছে।  

স্থানীয় বোররচর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সাদ্দাম হোসেনের নেতৃত্বে বালু বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সাদ্দাম হোসেন পশ্চিম কাচারি বাজারে কীটনাশক ও সার বীজের ব্যবসার পাশাপাশি স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয়।  

কুষ্টিয়া পাড়া এলাকায় রেজোয়ান হোসেন বাবু নামে এক ব্যক্তি ভেকু দিয়ে বালু ভর্তি করছিলেন। তিনি জানান, সাদ্দাম হোসেন তাকে ভেকুসহ ভাড়া করে এনেছেন এবং বালু কোথায় যাচ্ছে তা তিনি জানেন না।  

পাশ্ববর্তী ফুলপুর উপজেলার মাইচ্ছাপুর গ্রামের রমজান আলী বলেন, তিনি সাদ্দাম হোসেনের কাছ থেকে একটি ছোট হ্যান্ড ট্রলি ভর্তি বালু ৫০০ টাকায় কিনেছেন।  

সাদ্দাম হোসেন দাবি করেন, তিনি একা নন, স্থানীয় বেশ কয়েকজন এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, ‘কৃষকদের জমি খালি করার জন্য শুধু পরিবহন খরচে বালু বিক্রি করা হচ্ছে।’  

স্থানীয় কৃষক আব্দুর রহমান বলেন, ‘আমাদের জমির উপর বালু ফেলে পাহাড়ের মতো স্তূপ করা হয়েছে। আমরা ক্ষতিপূরণ পাইনি, অথচ কয়েকজন মিলে বালু বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন।’  

এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বালু বিক্রির জন্য নিলাম কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মিটিংয়ে নিলামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। বালু চুরির অভিযোগ পাওয়া গেলে অভিযান চালানো হয়। যারা বালু চুরি করছে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’  

তিনি আরও বলেন, এলাকাটি উপজেলা সদর থেকে কিছুটা দূরে হওয়ায় কিছু অসাধু ব্যক্তি সুযোগ নিচ্ছে। তবে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং বালু চুরি বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।