সকল খবর দেশের খবর

সুপারনিউমারারি পদোন্নতিতে প্রশাসনে ক্ষোভ!

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ২৬-৪-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫১০০

গণ-অভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে নজিরবিহীন সংখ্যক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি কর্মকর্তাকে উপসচিব, যুগ্ম সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫৫০ জনকে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, যা অনুমোদিত কাঠামোর বাইরে গঠিত অস্থায়ী পদ।

বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের অতিরিক্ত পদোন্নতি প্রশাসনিক শৃঙ্খলা ও ন্যায্যতার প্রতি সরাসরি হুমকি। সাবেক সচিব ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞ আব্দুল আউয়াল মজুমদার বলেন, “এভাবে নির্বিচারে পদোন্নতি সিভিল সার্ভিসের মান পতনের অন্যতম কারণ। এটি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।” তিনি একটি কাঠামোবদ্ধ ও যোগ্যতাভিত্তিক পদোন্নতির পক্ষে মত দেন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানায়, অতিরিক্ত সচিব পদে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১২১টি হলেও বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৩৮২ জন। এর মধ্যে ১৪২ জনকে শুধু গত বছরের আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। যুগ্ম সচিব পদে অনুমোদিত সংখ্যা ২৭২ হলেও পদে রয়েছেন ১ হাজার ৩৫ জন কর্মকর্তা। উপসচিব পদে ৩৫০টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে কর্মরত ১ হাজার ৪০৪ জন।

অধিকপদস্থ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব জানান, অনেক কর্মকর্তাকে প্রকল্প পরিচালক বা দপ্তরের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দিতে হয় বলেই অতিরিক্ত পদোন্নতি দেওয়া হয়। তবে বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মন্ত্রণালয়গুলোর ভেতরেই প্রয়োজনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি কর্মকর্তা অবস্থান করছেন। উদাহরণস্বরূপ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে মাত্র দুটি অনুমোদিত অতিরিক্ত সচিব পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন আটজন, এবং স্বাস্থ্যসেবা বিভাগে দুটি পদের স্থলে রয়েছেন ১১ জন কর্মকর্তা।

এমন পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডার সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী হলেও, বাকি ২৫টি ক্যাডারের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। অন্যান্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা অভিযোগ করছেন, নিয়মিত পদোন্নতির দাবিগুলো উপেক্ষা করে প্রশাসন ক্যাডারের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তাদের একের পর এক পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন ক্যাডারের অনেক সাবেক কর্মকর্তাকে “পূর্ব তারিখ থেকে” পদোন্নতি দিয়ে আর্থিক সুবিধাও প্রদান করা হয়েছে।

তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন অনেকটা রাজনৈতিক সরকারের মতোই একটি ক্যাডারকে অন্যদের চেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। ৬ হাজার প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তার জন্য সরকার ৬০ হাজার অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বৈষম্যের মুখে ফেলেছে।”

এই অসন্তোষ আরও তীব্র হয় যখন দেখা যায়, জানুয়ারিতে শিক্ষা ক্যাডারের ৭৬৫ জন কর্মকর্তাকে সুপারনিউমারারি পদে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে এবং শিগগিরই স্বাস্থ্য খাতে ৭ হাজারের বেশি চিকিৎসককে পদোন্নতি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

কৃষি ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা জানান, গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মনোভাবে পরিবর্তন এসেছে। আগে তারা অন্যান্য ক্যাডারের পদোন্নতির বিরোধিতা করলেও এখন আর করেন না। তিনি বলেন, “তারা এখন বলেন, আপনারাও পদোন্নতি নেন, শুধু আমাদের বিরোধিতা করবেন না।”

অবসরপ্রাপ্ত এক তথ্য ক্যাডার কর্মকর্তা এই ধারা সম্পর্কে বলেন, “এটি করদাতাদের অর্থের অপচয়ের একটি স্পষ্ট উদাহরণ। আমি জানি না, পৃথিবীর আর কোনো দেশে এমনভাবে প্রশাসন চলে কি না।”