কাশ্মীরের পেহেলগামে সাম্প্রতিক ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর সন্ত্রাস মোকাবেলায় আরও কঠোর ও কৌশলগত পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ নিরাপত্তা বিশ্লেষক মাইকেল রুবিন। ভারতের জনপ্রিয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভিকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ভারতের উচিত সাবেক ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গোল্ডা মেয়ারের মতো বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসীদের নির্মূল করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে ইসরায়েলি অ্যাথলেটদের হত্যাকাণ্ডের পর ইসরায়েল ‘অপারেশন র্যাথ অব গড’ চালু করে, যার মাধ্যমে প্রায় সাত বছর ধরে বিশ্বজুড়ে দায়ী সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে হত্যা করা হয়েছিল। রুবিনের মতে, ভারতকেও তেমনি দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত প্রতিশোধমূলক কৌশলের দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
প্রসঙ্গত, কাশ্মীরের পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পাকিস্তানপন্থী সন্ত্রাসীদের হামলায় ২৬ জন ভারতীয় পর্যটক নির্মমভাবে নিহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, হামলাকারীরা প্রথমে পর্যটকদের ধর্ম জানতে চায় এবং যারা মুসলিম ছিলেন না, তাদের প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। এ সময় হামলাকারীরা বলেছিল, "গিয়ে মোদিকে বলো।"
ভারত এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করেছে। বিশেষ করে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির-এর সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক বক্তব্যকেই হামলার পেছনে দায়ী করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ঘটনার পর কড়া বার্তা দিয়ে বলেন, “ভারত এমন শাস্তি দেবে যা সন্ত্রাসীরা ও তাদের পৃষ্ঠপোষকেরা কল্পনাও করতে পারবে না।”
বিশ্লেষক মাইকেল রুবিন মনে করেন, সন্ত্রাস মোকাবেলায় শুধু সামরিক শক্তি নয়, প্রয়োজন ধৈর্য, পরিকল্পনা এবং বৈশ্বিক পরিসরে দীর্ঘমেয়াদি কৌশল। তিনি বলেন, “যখন কূটনীতিকরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে, তখনই সন্ত্রাসীরা নিজেদের পুনর্গঠিত করে—এভাবে সন্ত্রাস চক্র বারবার ফিরে আসে।”
পাকিস্তানকে আক্রমণাত্মক সমালোচনা করে তিনি বলেন, “একদিকে তারা বলে, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই, আবার অন্যদিকে তাদের মৃত্যুতে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দেয়। যদি পাকিস্তান সত্যিই সন্ত্রাসে জড়িত না হয়, তাহলে তাদের উচিত সব সন্ত্রাসী ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং তাদের হস্তান্তর করা, এমনকি যদি তারা সামরিক পোশাকেও থাকে।”
রুবিন ভারতীয় প্রতিক্রিয়া ও কৌশলগত সংযমের প্রশংসা করে বলেন, “ভারত প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত নির্দিষ্ট ও পরিকল্পিতভাবে নিচ্ছে। অপারেশন সিন্দুর চালু করতে সময় নিয়েছে, কারণ তার পেছনে ছিল সুপরিকল্পিত সামরিক কৌশল।”
সম্প্রতি পাকিস্তান ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে হামলার চেষ্টা করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে, তবে রুবিন জানান, ভারতীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দক্ষতায় এসব হামলার সবকটিই ব্যর্থ হয়েছে।