আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষিত নতুন শুল্ক নীতিমালা। হাতে রয়েছে মাত্র তিন দিন। তবে এই সময়ের মধ্যেও বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়নি।
মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক রোববার (২৭ জুলাই) ফক্স নিউজে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, নির্ধারিত সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না। তবে শুল্ক কার্যকর হওয়ার পরেও আলোচনার সুযোগ থাকবে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন।
বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছেছে। যুক্তরাজ্য, জাপান, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম এবং সর্বশেষ ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তিতে সম্মত হয়েছে। এসব দেশ যে হারে শুল্ক দিতে রাজি হয়েছে, তা এপ্রিলের ঘোষিত ১০ শতাংশ হারের চেয়েও বেশি হলেও, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্কের তুলনায় তা অনেকটাই সহনীয়।
বাংলাদেশের পক্ষে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের নেতৃত্বে দলটি ইউএসটিআরের (যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর) সঙ্গে তিন দিনব্যাপী বৈঠকে বসছে। আলোচনায় মার্কিন শুল্কহার, বাজারে প্রবেশাধিকার এবং দ্বিপাক্ষিক আমদানি-রপ্তানির ভারসাম্য নিয়ে সরাসরি দর-কষাকষি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাল্টা শুল্ক কমাতে বাংলাদেশ এরই মধ্যে কিছু কৌশলগত প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বোয়িং কোম্পানি থেকে ২৫টি বিমান কেনার সিদ্ধান্ত, প্রতিবছর ৭ লাখ টন গম আমদানির চুক্তি এবং তুলা ও সয়াবিন আমদানির পরিমাণ তিনগুণ বৃদ্ধির ঘোষণা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে বর্তমানে ৩০ কোটি ডলারের ভোজ্যতেল আমদানির পরিমাণ বাড়িয়ে ১০০ কোটি ডলারে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাজারের বাস্তবতা মাথায় রেখে পারস্পরিক স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে। পাল্টা শুল্কের চাপ কমাতে এখন কিছু প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যাতে ভবিষ্যতে আলোচনার দরজা খোলা থাকে।”
তিনি আরও জানান, “চীনের বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়া কিছু উৎপাদন বাংলাদেশে স্থানান্তরের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে মার্কিন বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা নিশ্চিত করা জরুরি।”
এদিকে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু জানান, “ভারত ও ভিয়েতনামের মতো বাংলাদেশকেও শুল্কছাড় সুবিধা না দিলে মার্কিন বাজারে অবস্থান ধরে রাখা কঠিন হবে। তৈরি পোশাক শিল্প সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।”
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি কোনো একক নির্ভরতার প্রতীক নয়। ভবিষ্যতে বৈচিত্র্য আনতে অন্যান্য উৎস থেকেও আমদানি করা হবে। তবে এই মুহূর্তে মূল লক্ষ্য মার্কিন শুল্কহার হ্রাস, যা না হলে রপ্তানি কার্যক্রমে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।