চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক (জানুয়ারি-মার্চ) শেষে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৯ লাখ ২৩ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা, যা গত ডিসেম্বর শেষে ছিল ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসে আমানত বেড়েছে ৩৯ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা বা ২ শতাংশের বেশি। এই তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে।
এর আগের ছয় মাসে— অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত— ব্যাংক খাতে আমানত বেড়েছিল সাড়ে ৩৪ হাজার কোটি টাকা। ফলে তুলনামূলকভাবে ২০২৪ সালের শুরুতেই আমানত বৃদ্ধির গতি কিছুটা বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই প্রান্তিকে (২০২৩ সালের জানুয়ারি-মার্চ) ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৩০৩ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে আমানত বেড়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ২০২ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আমানতের সুদহার বৃদ্ধিই এই প্রবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, গত বছরের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকে আমানতের গড় সুদহার ছিল ৬.০৪ শতাংশ, যা চলতি বছরের মার্চ শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬.২৫ শতাংশে। সুদের হার কিছুটা বাড়ায় মানুষ ব্যাংকে টাকা রাখায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তথ্য অনুযায়ী, গ্রামীণ এলাকায় আমানত বৃদ্ধির হার শহরের তুলনায় বেশি হয়েছে। জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে গ্রামে আমানত বেড়েছে ৩ শতাংশের বেশি, যেখানে শহরে বেড়েছে ১.৯৪ শতাংশ। তবে মোট আমানতের দিক দিয়ে এখনো শহর এগিয়ে। মার্চ শেষে শহরাঞ্চলে জমা ছিল ১৬ লাখ ২২ হাজার ১৫৭ কোটি টাকা, আর গ্রামাঞ্চলে ছিল ৩ লাখ ১ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, মোট আমানতের ৮৪ শতাংশের বেশি এসেছে শহরাঞ্চল থেকে।
অন্যদিকে, তিন মাসের ব্যবধানে ঋণ বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের মার্চ শেষে দাঁড়ায় ১৭ লাখ ১২ হাজার ৬১৮ কোটি টাকায়। এতে ঋণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১.৭৭ শতাংশ। এর মধ্যে শহরাঞ্চলে বিতরণ করা হয়েছে ১৫ লাখ ৭৫ হাজার ৮৯৮ কোটি টাকা বা ৯২ শতাংশ, আর গ্রামীণ অঞ্চলে গেছে মাত্র ৮ শতাংশ ঋণ।
এদিকে, নিু–আয়ের জনগোষ্ঠীর জন্য চালু করা ‘নো ফ্রিলস অ্যাকাউন্ট’ বা স্বল্পমূল্যের ব্যাংক হিসাবেও আমানতের পরিমাণ বাড়ছে। এসব অ্যাকাউন্টে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে আমানত ছিল ৪ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের মার্চ শেষে বেড়ে হয় ৪ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা। এক বছরে এসব হিসাবে জমা বেড়েছে ২২০ কোটি টাকা বা ৪.৬৯ শতাংশ।
এই ধরনের ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে কৃষক, পোশাক শ্রমিক, অতিদরিদ্র ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের দাবি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে এসব উদ্যোগ আরও জোরদার করা হবে।