Logo

আদিবাসীদের অফিস ভাঙচুর, লুটপাট, দখল; অতঃপর মামলা; পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ আদালতের

অনিন্দ্য বাংলা
শুক্রবার, জুন ৪, ২০২১
  • শেয়ার করুন

বিশেষ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহে আদিবাসীদের সংগঠন ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় অফিস ভবন ভাঙচুর, লুটপাট, দখলের ঘটনায় ময়মনসিংহ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাদী হয়ে মামলা করেন সংগঠনটির আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সেক্রেটারী বিপুল হাজং। আদালত অভিযোগটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কে তদন্তের নির্দেশ দেন।

আদালতের প্রাপ্ত তথ্য মতে, গত ২৮মে, শুক্রবার দুপুরে মামলায় অভিযুক্তরা ধারালো অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ৪৯, বলাশপুর রোড, আঘ্রাকান্দা কেন্দ্রীয় ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন সেন্টারে হামলা চালায়। প্রধান ফটকসহ ৫তলা ভবনের প্রতিটি কক্ষের তালা ভেঙে লুটপাট, নথিপত্র তছনছ ও ভাঙচুর করে আনুমানিক বিশ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি করে বলে মামলায় উল্লেখ রয়েছে। এসময় স্থানীয়রা ঘটনা প্রতিহত ও বাধা দিলে গেলে অভিযুক্তরা হুমকী-ধামকী-ভয়ভীতি প্রদর্শন করে তান্ডব চালিয়ে যায়। ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা ঐ ভবনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংগঠনের আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সেক্রেটারী বিপুল হাজংকে খবর দিলে তিনি  হতভম্ব হয়ে যান। তিনি নেত্রকোনা শশুরবাড়ী থেকে ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি দেখে ময়মনসিংহ কোতোয়ালী থানায় সুবিচারের আসায় অভিযোগ করতে গেলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আদালতে মামলা করার পরামর্শ দেন। পরে সংগঠনের আইন ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সেক্রেটারী বিপুল হাজং বাদী হয়ে ময়মনসিংহ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন, যার নং-৬০৫/২০২১। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন, হালুয়াঘাট রাংরাপাড়ার রজিন্দ্র ঘাগ্রার ছেলে ভদ্র ম্রং, ভালুকা সীডস্টোর পাখিরচালা গ্রামের সমরেন্দ্র মারাকের ছেলে যোহন সাংমা, মধুপুর পীরগাছা গ্রামের মৃতঃ রাফায়েল সাংমার ছেলে উইলিয়াম দাজেল, ধোবাউড়া বনিক্যপাড়া গ্রামের ফ্রান্সিস মানখিনের ছেলে এডওয়ার্ড নাফাক ও দীঘলবাগ গ্রামের ক্ষিতিষ মানখিনের ছেলে অরন্য ই চিরান, সখিপুর মহানন্দপুর গ্রামের কার্তিক চন্দ্র বর্মনের ছেলে রবীন্দ্র চন্দ্র বর্মন, কালিয়াকৈর বাশাকৈর গ্রামের মৃতঃ ডাঃ নিবারন বর্মনের ছেলে বিকাশ বর্মন ও সঙ্গীয় লোকজন।

অভিযুক্তরা সেক্রেটারী জেনারেলের পরিবারের ব্যক্তিগত ব্যবহার্য  জিনিসপত্র, ভাঙচুর, লুটপাট এবং বিশলক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র অন্যায়ভাবে আটক করে সংগঠনের ভবনটি তালাবদ্ধ করে দেয়। ঘটনার দিন বাদী, বাদীর পিতা ও পরিবারের সদস্যরা অনুপস্থিত থাকায় তারা প্রাণে রক্ষা পায়।

এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আদিবাসী সংগঠনটির কর্মকর্তা-সদস্যরা ব্যাপক অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সাংগঠনিক সেক্রেটারী সমীরন কুমার সিংহ বলেন, শুক্রবার জুমার নামাজের সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে অভিযুক্তরা সংগঠনের কেন্দ্রীয় অফিসে নির্বাচিত সেক্রেটারী জেনারেলের অস্থায়ী আবাসিক কক্ষে অসৎ উদেশ্যে বেআইনীভাবে অতর্কিতে হামলা চালিয়ে অফিসের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র তছনছ, ভাঙচুর করে। এতে সংগঠনের ভাবমুর্ত্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং দোষী ব্যক্তিদের অবিলম্বে শাস্তির দাবী জানাই।

এ বিষয়ে স্থানীয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানান, আদালতের নির্দেশে ঘটনাটি দ্রুত তদন্ত করা হচ্ছে।

এখানে উল্লেখ্য, আদিবাসীদের এই সংগঠনটি ১৯৭৭ সালে হালুয়াঘাটের সংসদ সদস্য এডভোকেট প্রমোদ মানকিন এম.পি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে প্রমোদ মানকিনের সহচর হিসেবে বাদীর পিতা স্বর্ণকান্ত হাজং সংগঠনটির স্বার্থে কাজ করে আসছেন। এরপর তিনি ২০১০ সাল থেকে নির্বাচিত সেক্রেটারী জেনারেলের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

বাদী বিপুল হাজং আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হলে ঐ তালাবদ্ধ ভবনে থাকা ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ অমূল্য কাগজপত্রাদি বিনষ্ট হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। বিপুল হাজং ও তার পরিবার বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। প্রতিনিয়ত অভিযুক্তরা বিভিন্ন ভাবে হুমকী-ধামকী ও মামলার ভয়-ভীতি দেখিয়ে যাচ্ছে। তিনি নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেন।