Logo

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার ৪ বছর !

অনিন্দ্য বাংলা
শুক্রবার, জুন ২৩, ২০২৩
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক : ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর স্থাপিত ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন দেশের সর্বকনিষ্ঠ সিটি কর্পোরেশন। ২০১৯ সালের মে মাসের নির্বাচনে সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচিত পরিষদ একই মাসের ২৭ তারিখে শপথ গ্রহণ করে এবং এ পরিষদের প্রথম সভা হয় ২০১৯ এর ২০ জুন। সে হিসাবে নির্বাচিত পরিষদ তার যাত্রার ৪ বছর পূর্ণ করেছে।

৪ বছরের যাত্রায় বিলুপ্ত পৌরসভার জনবল, দূর্বল অবকাঠামো আর নানা সীমাবদ্ধতা নিয়েই উন্নয়ন প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে নির্বাচিত পরিষদ।

এ মুহূর্তে দেশের নবীনতম এ সিটি কর্পোরেশনে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডের মূল সড়ক ও অলি-গলিতে চলছে সড়ক ও ড্রেনের নির্মাণকাজ। মেয়র ইকরামুল হক টিটুর নেতৃত্বে এখন ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে চলছে স্মরণকালের সর্বাধিক কাজ।

বর্তমানে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের সড়ক ড্রেনেজ অবকাঠামো নির্মাণ ও নাগিরক সেবা উন্নতকরণে ১৫৭৫ কোটি টাকার প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার কাজ চলমান আছে। এতে তৈরি হচ্ছে ৯০ কিলোমিটার বিসি রোড, ১৬১ কিলোমিটার আরসিসি রোড, ১.৬১ কিলোমিটার সিসি রোড, ১৭৯ কিলোমিটার ড্রেন, ৯.৬৬ কিলোমিটার পাইপ ড্রেন, ১০ কিলোমিটার ফুটপাত। এছাড়াও তৈরি করা হচ্ছে কালভার্ট সহ অন্যান্য অবকাঠামো।

এছাড়াও সিটি কর্পোরেশন অন্যন্য প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যে ৯২ কিলোমিটার নতুন রাস্তা এবং ৪৫ কিলোমিটার ড্রেনের কাজ অনেক আগেই সম্পন্ন করেছে।

ব্যপক এই উন্নয়ন কার্যক্রমের ফলে পরিবর্তনটা ইতোমধ্যে চোখে পড়তে শুরু করেছে। বিশেষ করে সিটি কর্পোরেশনে অর্ন্তভুক্ত ২২ থেকে ৩৩ নং ওয়ার্ড যেগুলো ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সিটি কর্পোরেশনে যুক্ত হয়েছে সেগুলোতে প্রশস্ত রাস্তা ও ড্রেন দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রত্যন্ত অনেক ওয়ার্ডে যেখানে যাওয়ায় ছিল কষ্টসাধ্য তা এখন উন্নয়নের যাদুকাঠির ছোঁয়ায় বদলে গেছে। আর এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রয়েছে।

শহরের অন্যতম সমস্যা জলবদ্ধতা নিরসনে শুরু থেকেই কাজ করেছে সিটি কর্পোরেশন। মিন্টু কলেজ থেকে বিপিন পার্ক স্টেশন রোড থেকে থানাঘাট পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ ড্রেন নির্মাণ, কাশবন আবাসিক এলাকার ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক নির্মাণ, নাটককঘর লেন থেকে ডিবি রোড হয়ে সেহড়াখাল পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপড্রেন ইত্যাদি নির্মাণের ফলে মূল শহরের অভ্যন্তরে আর জলাবদ্ধতার সমস্যা অনেকটাই নিরসন হয়েছে। এছাড়াও, বর্তমানে চলমান শহরের ভেতরে নতুন বাজার রেল ক্রসিং থেকে ব্যাটবল চত্বর পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড পাইপ ড্রেনের কাজ একটি ভালো উদ্যোগ বলে মনে করছে নগরবাসী। এতে করে শহরের খালগুলো থেকে পনি বের হওয়াটা আরও সহজতর হবে, যা সমগ্রিক জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটাবে।

শহর আলোকিতকরণেও গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি দেখাতে সক্ষম হয়েছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের প্রায় ১৭১ কিলোমিটার সড়কে পোলসহ আধুনিক এলইডি বাতি স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গত কয়েকমাসে এসব সড়কবাতির উদ্বোধন করেছেন মাননীয় মেয়র।

তবে, পৌরসভা থেকে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনে উত্তোরণে বিষয়টি সকলের নজর কেড়েছে তা হলো বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। বিলুপ্ত পৌরসভার জনবল নিয়েও প্রতিদিন প্রায় ৫০০ মে.টন বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা করছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। চলছে রাত্রীকালীন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। এছাড়া, বাসা-বাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহে ক্লিনসিটি নামক প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে বর্জ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রিজম ফাউন্ডেশন লি. এর সহযোগিতায় নির্মাণ করা হচ্ছে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। এছাড়াও, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকল্পটিও অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

নগর উন্নয়নে আরও অধিক অগ্রগতি সম্ভব ছিলো বলে মনে করেন সিটি কর্পোরেশন মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু। তিনি জানান, করোনার অভিঘাত এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট সৃষ্টি না হলে হলে নগর উন্নয়নে আরও কাজ করা সম্ভব হত।

তবে, করোনা পরিস্থিতিতে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে করোনা মোকাবেলা, মানুষকে নিরাপদে রাখা এবং মানুষের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে যে কাজ করেছেন তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। সরকারী ও সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ১৩২৭ টন চাল ও ৬৫ লক্ষ টাকার খাদ্য সহায়তা ছাড়াও তিনি নিজ উদ্যোগে লক্ষাধিক প্যাকেট খাদ্য সমাগ্রী অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করেছেন। করোনা টিকা প্রদানেও মেয়রের উদ্যোগ ছিল প্রশংসনীয়। কোভিড টিকার রেজিস্ট্রেশন সহায়তা, এলাকা ও গ্রুপ ভিত্তিক টিকা ক্যাম্পেইন ইত্যাদি কারণে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এলাকার প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষকে ২ ডোজ টিকা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে।

এছাড়া ২০২২ সালে স্থাপন করা হয়েছে একটি নগর মাতৃসদন এবং তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। এসব কেন্দ্র থেকে মা, শিশু সহ সাধারণ জনগণ কম খরচ বা বিনামূ্ল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন। মশক নিধনে হটস্পট চিহ্নিতকরণ এবং নিয়মিত ক্রাশ প্রোগ্রামের ফলে সিটিতে এখনও স্থানীয়ভাবে এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়নি। তাছাড়া, ভিটামিন এ প্ল্যাস ক্যাম্পেইন, ইপিআই কার্যক্রম, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিতেও মসিকের রয়েছে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সফলতা।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জীবনমান উন্নয়নে মসিকের প্রচেষ্টাও ছিলো চোখে পড়ার মত। ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১৯২ জনকে বিউটি পার্লার, কম্পিউটার, ড্রাইভিং, মোবাইল সার্ভিসিং ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষণ, ২৫৭৬ জন শিক্ষার্থীকে শিক্ষা বৃত্তি, ১৪৭৬ জনকে পুষ্টি সহায়তা, ৩১২ জন কিশোরীকে স্বাস্থ্য-পুষ্টি পরামর্শ ও পুষ্টি উপকরণ প্রদান, প্রান্তিক জনগোষ্ঠির জন্য নলকূপ, রোড লাইট, ড্রেন, টয়লেট, সেপটিক ট্যংক ইত্যাদ নির্মাণের মাধ্যমে সহযোগিতা প্রদান করেছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন।

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে মেয়র মো: ইকরামুল হক টিটু শম্ভুগঞ্জ ব্রিজের কাছে স্থাপন করেছেন জয়বাংলা চত্বর। চত্বরটি মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর স্মরণে এক অনন্য স্থাপত্যে পরিণত হয়েছে। এছাড়া, টাউনহলে স্থাপন করেছেন বঙ্গবন্ধু গ্যালারি। এখানেও প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থী বঙ্গবন্ধু দুর্লভ ছবি, ডকুমেন্টারি, বানী ইত্যাদি দেখার সুযোগ পাচ্ছেন।

সিটি কর্পোরেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকে নাগরিকসেবার মানোন্নয়নে মসিকের প্রচেষ্টাও বেশ লক্ষণীয়। ইতোমধ্যে বেশ কিছু সেবাকে অনলাইনে নেওয়া হয়েছে, সিটি কর্পোরেশনকে তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত করে জন্মনিবন্ধন, মশক নিধন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কাজগুলোর বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে। এতে নাগরিককের সময় ও শ্রম সাশ্রয় হচ্ছে।

মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু এ প্রসঙ্গে বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্নে ময়মনসিংহবাসীকে সিটি কর্পোরেশন উপহার দিয়েছেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবাইকে সাথে নিয়ে কাজ করছি। করোনা মহামরি ও বৈশ্বিক সংকট আমাদের গতিকে কিছুট ধীর করে দিলেও আমরা আমাদের সর্বোস্ব দিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি।

সিটিকে একটি আধুনিক ও টেকসই নগরী করতে একটি বাস ও ট্রাক স্ট্যান্ড, শিশু পার্ক, নগর ভবন, গোরস্থন, শশ্মানঘাট, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নির্মাণে কাজ করছে ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে নগরবাসীর প্রত্যাশা অনেকাংশে পূরণ হবে বলে আশা করা যায়।