Logo

আসুন মানবিক হই !

অনিন্দ্য বাংলা
রবিবার, মার্চ ২৯, ২০২০
  • শেয়ার করুন

আসুন মানবিক হই !

সম্প্রতি একজন নারী এসিল্যান্ডের অমানবিক কর্মকান্ড নিয়ে সারা বাংলাদেশ তোলপাড়। অনেকেই বিষয়টি নিয়ে সহনিয় মতামতের পাশাপাশি ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন।

একজন এসিল্যান্ড অন্যায় করেছে তাকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় থামছেই না। কেউ বলছেন তাকে রেইপ করা উচিত। কেউ তার জন্ম নিয়েই প্রশ্ন উঠাচ্ছেন! অপর এক জায়গায় করোনা সন্দেহে একজন মৃত ব্যক্তিকে দাফন করতে দিতে চায়নি এলাকাবাসী। দুই জায়গায় কবর খুরা হয়েছিলো। দিনভর নাটকীয়তার পর সংশ্লিষ্ট ইউএনও দায়িত্ব নিয়ে মৃত মুসলিম ব্যক্তির ধর্মীয় বিধান অনুযায়ী গোসল দিয়ে জানাজা সম্পন্ন করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান নিজে জানাজায় ইমামতি করেছেন।

এসিল্যান্ডকে নিয়ে মাতামাতি যারা করছেন তারা ঐ ইউএনও, ওসিকে নিয়ে কেনো করছেন না? চরম মানবিক বিপর্যয়ে প্রশাসন একটি উদাহারণ তৈরী করেছে। তারা তো বাহবা পাচ্ছে না? যার যা কাজ সেই কাজের জন্যে বাহবার দরকার কী? এই কথা বলতেই পারেন! কিন্তু দায়িত্বের বাইরে গিয়ে শুধুমাত্র মানবিক মূল্যবোধকে বিবেচনায় নিয়ে যারা কাজ করে যান তাদের প্রশংসা করাতে দোষের কিছু নাই। বরং তা সমাজের জন্যে ইতিবাচক ইতিবাচক হিসেবেই বিবেচিত হবে।

আমরা যারা প্রতিদিন বাসা থেকে বিভিন্ন দূরত্ব অতিক্রম করে কাজে যাই যাই তারা টেরপাই বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষজন কতোটা অসভ্যতা দেখায়। রাস্তাঘাটে শৃঙ্খলা দূরের কথা অামরা যে সভ্য জাতি এটা বেমালুম ভুলে যেতে বাধ্য হই।

যে কোন মানবিক বিপর্যয়ে আমি ঘরের মধ্যে বসে থাকিনি। চলন্ত ট্রেনে মানুষকে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। মানুষটি মৃত্যুপথযাত্রী। কেউ এগিয়ে অাসছে না। সেলফি তুলে ভাইরাল করে লোকজন। রাস্তায় এক্সিডেন্ট হয়েছে কেউ এগিয়ে আসে না। একবার ভাবুন তো, অপরিচিত একজন মানুষ অাপনার কোলে মাথা রেখে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলো। কেমন অনুভূতি হবে? এই মারা যাওয়া মানুষটি রাস্তায় পরে মরা অার হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রার সময় কারো কোলের মধ্যে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার মধ্যে পার্থক্য অনেক। আমার একাধিক অভিজ্ঞতা আছে এমনটির।

রাষ্ট্রযন্ত্র মানুষকে ঘরে রাখার জন্যে নিরন্তর চেষ্টা করছে। মানুষ কী ঘরে থাকতে চায়? কখনো আইন শৃঙ্খলায় নিয়োজিতদের কঠোর হতে হয়। কখনো বাড়াবাড়িও হয়ে যায়। এগুলো কাজেরই অংশ। এইসব বিষয় নিয়ে এতো মাতামাতি করলে আমাদের অাসল উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাবে।।

গোটা বিশ্ব অদৃশ্য এক শক্তির সাথে লড়াই করছে। সেই লড়াইয়ে সর্বোচ্চ সচেতনতা যেমন জরুরী তেমনি মানবিক মূল্যবোধকে জাগ্রত রেখে রাষ্ট্রযন্ত্রের অর্গানগুলোর সাথে তাল মিলিয়ে মানুষের পাশে থাকাও জরুরী।

কোভিক-১৯ এর ছোবলে আক্রান্ত হওয়া কিংবা মৃত্যুবরণ করা মানুষজন এবং পরিবারের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। করবস্থানের সামনে “করুনা মৃতদের দাফন হয়না ব্যানার টানানো কিংবা মৃতদের দাফন করতে না দেয়ার মধ্যে মানবতার কিছু নাই। সর্বোপরি মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। লকডাউনের এই সময়ে সমাজের ছিন্নমূল মানুষ যাদের ঘরবাড়ী নাই তাদের খাবারের ব্যবস্থা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী আমাদেরকেই করতে হবে। শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার মতো- ‘মানুষ বড় কাঁদছে, তুমি মানুষ হয়ে পাশে দাঁড়াও,মানুষই ফাঁদ পাতছে, তুমি পাখির মতো পাশে দাঁড়াও,মানুষ বড় একলা, তুমি তাহার পাশে এসে দাঁড়াও…।

প্রাকৃতিক এই বিপর্যয়ের মধ্যেও “মানবিক বিপর্যয়” রোধে আমরা সবাই একযোগে কাজ করবো এমন অঙ্গিকারে আমরা আবদ্ধ হই।।

তুহিন তালুকদার
সাবেক ছাত্র নেতা এবং ব্যাংকার।।