Logo

করোনায় বিদ্যাময়ীর প্রাক্তন ছাত্রীদের ভালোবাসা

অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, মে ১৮, ২০২০
  • শেয়ার করুন

স্টাফ রিপোর্টার:
বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়া করোনায় ময়মনসিংহের কর্মহীন অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালো বিদ্যাময়ী স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। নগদ টাকা দিয়ে আসলো স্কুলের সামনে থাকা মুড়ি, চানাচুর ও আচার বিক্রেতা সামসুদ্দিনের বাড়িতে।

গল্পটা মুড়ি-চানাচুর-আচার বিক্রেতা সামসুদ্দিনের। বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে স্কুল চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীদের ঝালমুড়ি, চানাচুর ও আচারের ঝাঁপি ফেলে বিক্রি করে চলতো সামুদ্দিনের সংসার। বিদ্যালয় ও তার আশেপাশের সবাই তাকে চেনেন গুল্লি আচার মামা হিসেবে।

তিনি প্রায় ৪০ বছর ধরে বংশ পরম্পরায় বিভিন্ন ধরনের আচার ও ঝালমুড়ি বিক্রি করেছেন এই স্কুলের সামনে। সত্তর বছর বয়সী সামসুদ্দিন বর্তমানে শহরের ভাটিকাশর এলাকায় নিজ বাসায় প্যারালাইসিস হয়ে চিকিৎসাহীন অবস্থায় আছেন। সময়ের কড়াল গ্রাস ও বাধর্ক্যের কারনে কাজে সম্পৃক্ত না থাকলেও তার দুই ছেলে কাশেম ঝালমুড়ি ও চটপটি এবং হাসেম আচার বিক্রি করে ব্যবসা চালাচ্ছিলেন । স্ত্রী, ছেলে-ছেলের বউ ও নাতি-নাতনি নিয়ে ভালোভাবেই কেটে যাচ্ছিলো সামসুদ্দিনের দিন।

কিন্তু করোনা মহামারিতে সকল স্কুল ও কলেজ বন্ধ হয়ে গেলে সংসারে নেমে আসে অভাব অনটন। তার ওপর গত ডিসেম্বরে স্ট্রোকে প্যারালাইসিসে একবারে চিকিৎসাহীন হয়ে পড়েন। এমন সময়েও তাঁরা পায়নি কোন সাহায্য সহযোগিতা। তাঁদের কথা কখোনো কারো মনে থাকার কথা ছিলো না।

এরই মাঝে এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফারজানা রুম্পা তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) এই সামসুদ্দিন গুল্লি আচার মামার বর্তমান অবস্থার কথা বলে সহযোগিতা চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেয়। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা বিদ্যাময়ীর কিছু প্রাক্তন ছাত্রীরা। শুরু হয় অর্থ সংগ্রহ।
অনেক কষ্টে সামুসদ্দিনের বাড়ি খুঁজে সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষে লামিয়া নোভা ও ফারজানা রুম্পা তাঁর হাতে তুলে দেয় ভালোবাসার সহায়তার অর্থ। এ সময় কল্পনাতীত সামসুদ্দিন ছাত্রীদের এমন ভালোবাসায় আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। পরে প্রাক্তন ছাত্রীরা পরবর্ত্তীতে তাঁর চিকিৎসা সেবারও আশ্বাস দেন।

এমন মহতী উদ্যোগ নেয়া এক প্রাক্তন ছাত্রী মেহনাজ শারমীন তৃনা জানান , স্কুলের সঙ্গে যেমন আমাদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে তেমনি জড়িয়ে আছে প্রতিটি মানুষও। এই মামাও আমাদের শৈশব-দুরন্ত কৈশরকে তাজা করে রেখেছেন বছরের পর বছর।

স্মৃতির আয়নায় আঁেজা স্কুলের গেইটে আমরা গুল্লি আচার মামাকে খুঁজে ফিরি। তাই কে-কত আর্থিক সহায়তা দিলো বা না দিলো তা বড় কথা নয়। আমরা আনন্দিত যে অন্তত এ মানুষটির মুখে হাসি ফোঁটাতে পেরেছি। এই ভালবাসা বিদ্যাময়ীর সকল প্রাক্তনদের ভালোবাসা। এটাই বিদ্যাময়ীয়ানদের ভালোবাসা।