Logo

করোনা ভাইরাস সচেতনতায় এবার মাঠে নেমেছেন নেত্রকোনার পরিবেশবন্ধু আবদুল হামিদ

অনিন্দ্য বাংলা
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ৯, ২০২০
  • শেয়ার করুন

জেলা প্রতিনিধি, নেত্রকোনা :  বিনামূল্যে সাধারণ মানুষকে সেবা দিয়ে আলোচনায় এসেছেন নেত্রকোনার আবদুল হামিদ। তিনি এলাকায় বৃক্ষ প্রেমিক কবিরাজ হামিদ ভাই নামেও পরিচিত । প্রকৃতিক দুর্যোগ ঝড়, বন্যা-খরা, রোগব্যাধীতে সব সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান তিনি । করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন ষাটোর্ধ বয়সী আবদুল হামিদ। নেত্রকোনা জেলা শহর ও শহরের বাইরে প্রতিদিন বাইসাইকেল করে প্রশাসনের পাশাপাশি আবদুল হামিদ সাধারণ মানুষকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতন থাকা, সরকারি নির্দেশ মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।

প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাই-সাইকেলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন জেলা শহরের অলিগলি ও গ্রাম থেকে গ্রামে। তার সাইকেলে বাঁধা ক্যাসেট বাজিয়ে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতন করছেন সাধারণ মানুষকে। এ ছাড়া অসুস্থ্য কোন দরিদ্র মানুষ অর্থের অভাবে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেনা শুনলেই ছুটে যান আবদুল হামিদ। সাধ্যমত চেষ্টা করেন রোগ সারিয়ে তোলার জন্য। এমনকি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করেন। আর তা তিনি করেন সম্পূর্ন বিনে পয়সায়। গত বছর ডেঙ্গু প্রতিরোধ সচেতনতা বিষয়ে পরামর্শ ও বিনামূল্যে সেবা দিয়েছেন এলাকার অনেক মানুষকে ।

নেত্রকোনা পৌর সভার নতুন হাসপাতাল রোডে আবদুল হামিদ গাছের ছাল, পাতার রস দিয়ে শরবত বানিয়ে মানুষকে খাওয়ান এবং হার্বাল ওষুধ বানিয়ে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। গত বছর সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কাল বৈশাখী ঝড়ে জেলা শহরে বিদ্যুৎ বিপর্যয় দেখা দিলে  বিশুদ্ধ পানীয় জলের বিরাট সংকট সৃষ্টি হয়। তখন আবদুল হামিদ ভ্যানে করে মানুষের বাসা বাড়িতে বিনে পয়সায় পানি সরবরাহ করেন।

এলাকার পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন ধরে। জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে বিভিন্ন সময়ে ওষুধি গাছের চারা বিতরণ করেন তিনি। বজ্রপাত প্রতিরোধের জন্য নিজ উদ্যোগে জেলার হাওরাঞ্চলে একই বছর ৫০০ তাল গাছের বীজ রোপন করেন আবদুল হামিদ। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করার জন্য বিভিন্ন সংগঠন থেকে তিনি পুরস্কৃতও হয়েছেন অনেকবার।

বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী অহিদুর রহমান বলেন, আবদুল হামিদ প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন। একজন বৃক্ষ প্রেমিক হিসেবে তাকে সবাই চিনে। তিনি একজন নিবেদিত প্রাণ সমাজ সেবক। সমাজ সেবা করতে গিয়ে তিনি কোন মূল্য গ্রহণ করেন না তাকে সকলের সহযোগিতা করা উচিত।

জেলা শহরের কুড়পাড় এলাকার বাসিন্দা সমাজসেবক শফিকুল ইসলাম বলেন, আবদুল হামিদ একজন সাধারণ দরিদ্র মানুষ। কিন্তু তার মন-মানষিকতা অনেক উপরে। তিনি প্রায় সময় মানুষের উপকারে কোন না কোন কাজ করে যাচ্ছেন; যা আমাদের সমাজে অনেক বিত্তশালীরাও করে না। তার কাজ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।

আবদুল হামিদ বলেন, মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। ইচ্ছে করলে মানুষ সমাজের জন্য অনেক কিছু করতে পারে। কিন্তু আমাদের অনেকের মধ্যে সে ইচ্ছে শক্তি নেই। অন্যের উপকার করতে পারলে আমার ভাল লাগে, তাই সেবা করি। এ জন্য মানুষের কাছ থেকে আমার কোন চাওয়া নেই। আমি চাই সৃষ্টি কর্তার সৃষ্টি সব কিছু ভাল থাকুক।