Logo

নিকোটিন: করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে আশার আলো

অনিন্দ্য বাংলা
রবিবার, এপ্রিল ২৬, ২০২০
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক: করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতে পারে নিকোটিন এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছেন ফ্রান্সের নতুন এক গবেষণা।

প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন, সাধারণ মানুষের তুলনায় ধূমপায়ীরা কোভিড-১৯ আক্রান্ত কম হচ্ছে। এর পরই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি এবং আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে গিয়ে সংক্রমিত স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর নিকোটিনের পরীক্ষা চালাতে যাচ্ছেন গবেষকরা।

এদিকে নিকোটিনে করোনা সংক্রমণ কমে-এই খবরের পর ফ্রান্সে রাসায়নিকটির বিক্রি বহুগুণে বেড়ে গেছে। মজুদ সংকট এড়াতে তড়িঘড়ি বিক্রি নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাত্রেঁদ্ধার সরকার।

এএফপি জানিয়েছে, ফরাসি বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড সংক্রমণ রুখতে পারে নিকোটিন। এটা তাদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। প্যারিসের এক নামি হাসপাতালে ৩৪৩ জন কোভিড পজিটিভ রোগীর ওপর সমীক্ষা চালিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলেছেন, ওই রোগীদের মধ্যে ১৩৯ জনের শরীরে মৃদু সংক্রমণ ছিল। দেখা গেছে, রোগীদের মধ্যে সংক্রমণ কম বা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, এমন সবাই ধূমপানে আসক্ত। বাকিরা তেমনভাবে ধূমপান করেন না। প্যারিস হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিনের ডাক্তার ও গবেষক জাহির আমোরা বলেছেন, হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের ৫ ভাগ ধূমপান করেন। বাকিদের নিকোটিনে নেশা নেই।

গবেষকরা বলেছেন, নিকোটিন-প্যাচ দিয়ে করোনা রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। এই ট্রায়ালের রিপোর্ট এলেই বোঝা যাবে নিকোটিন সংক্রমণ আটকাতে কতটা কার্যকরী। ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী পাস্তুর ইন্সটিটিউটের নিওরোবায়োলজিস্ট জিন-পিয়েরে চ্যাংসাজ বলেছেন, নিকোটিন ভাইরাস প্রোটিনকে মানুষের দেহকোষের ভেতরে ঢুকতে দেয় না। দেহকোষের যে সারফেস প্রোটিন বা বাহক প্রোটিনের সঙ্গে জোট বেঁধে ভাইরাস কোষের মধ্যে ঢোকে, সেই জোট বাঁধার প্রক্রিয়াকে আটকে দেয় নিকোটিন। গবেষক বলেছেন, তার মানে এই নয় যে, সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য মানুষকে ধূমপান করতে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে, বরং নিকোটিনের অনেক খারাপ দিকও আছে। অতিরিক্ত ধূমপানে শরীরের ক্ষতি হয়, নষ্ট হয়ে যায় ফুসফুস, যা পরিণামে মৃত্যু ঘটায়। গবেষক বলছেন, নিকোটিন কীভাবে করোনা রোগীদের ওপর প্রয়োগ করা যাবে, সেটা বারবার ট্রায়ালের পরেই বোঝা যাবে। আপাতত নিকোটিন-প্যাচ প্রয়োগ করা হতে পারে স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর। করোনা রোগীদের ওপরও প্রয়োগ করে দেখা হতে পারে এর প্রভাব কতটা কার্যকর হচ্ছে। নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে চীনের বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশিত হয় মার্চ মাসে। সেখানে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, ১০০০ জন করোনা রোগীর মধ্যে মাত্র ১২.৫ ভাগ ধূমপায়ী। নিকোটিন রয়েছে যাদের শরীরে তারা সংক্রমণ ঠেকাতে পেরেছেন অনেকটাই। ফ্রান্সের সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্যারিসের নানা হাসপাতালে ভর্তি ১১ হাজার রোগীর মধ্যে মাত্র ৮.৫ ভাগ ধূমপায়ী। গবেষক জাহির আমোরা বলেছেন, কোভিড সংক্রমণে রোগীদের শরীরে অধিক সাইটোকাইন ক্ষরণ অর্থাৎ ‘সাইটোকাইন ঝড়’-কে নিকোটিন থামাতে পারবে বলেই আশা করা হচ্ছে। সাইটোকাইনের মাত্রা বাড়লে যে প্রদাহ তৈরি হয় তাতে শরীরের কোষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও গবেষকের দাবি, নিকোটিন সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে কি না, সেটা এখনও গবেষণাস্তরেই রয়েছে। প্রাথমিক সমীক্ষায় এমন তথ্য সামনে এসেছে। নিকোটিনের কার্যকারিতা কতটা সেটা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরেই বোঝা যাবে। তবুও নিকোটিন হতে পারে করোনা ঠেকানোর আশার আলো, সবাই এমনটা ভাবছেন।