নির্যাতিত শিশু নিশির চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন ময়মনসিংহের এসপি আহমার উজ্জামান
অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২১
জান্নাতুল ফেরদৌস রাণু : ময়মনসিংহের শিশু গৃহকর্মী নিশি আখতারের চিকিৎসা দায়িত্ব নিয়ে আবারও মানবিক পুলিশের প্রমাণ দিলেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আহমার উজ্জামান।
জানা যায়, জেলার নান্দাইল উপজেলার রাজাবাড়িয়া গ্রামের দরিদ্র শারীরিক প্রতিবন্ধী মজিবুর রহমানের মেয়ে নিশি আক্তার। পাঁচ বছরের নিশিকে রেখে মা দিতি আক্তার মজিবুর রহমানকে বিয়ে করে চলে যান অন্যত্র। দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটছিলো প্রতিবন্ধী মজিবুরের। অভাবের তাড়নায় এক সময় নিশিকে গৃহকর্মীর কাজে দিয়ে দেন ঢাকায়। অগ্রণী ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) মিজানুর রহমান বাবুলের বাসায়। তার বাড়ি কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজারে। তিনি বসবাস করেন রাজধানীর ইন্দিরা রোডের একটি বাসায়। নিশির বেতন নির্ধারণ হলো প্রতি মাসে তিন হাজার ৫০০ টাকা। তাকে ঢাকায় নিয়ে যায় এলাকার হেলাল নামে একজন।
গৃহকর্মী নিশি বাসায় কাজে যাওয়ার পর থেকেই গৃহকর্ত্রী শারমিন ও গৃহকর্তা মিজান কারণে অকারণে নির্যাতন চালাতেন। চার বছর ধরে মেয়েটি কাজে গেলেও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দেখা করা ও কথা বলতে দেওয়া হতো না। মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনে নিশির সঙ্গে তার বাবার কথা বলিয়ে দিলেও গত সাত মাস কোনো যোগাযোগ করানো হচ্ছিল না নিশির সাথে।
মেয়ের খোঁজ না পেয়ে, নিশির মা অসুস্থ হওয়ার খবর শুনিয়ে কৌশলে মেয়েকে দেখার সুযোগ চান মজিবুর। পরে গত শনিবার সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ পাটগুদাম সেতু এলাকায় নিশিকে রেখে পালানোর চেষ্টা করে শারমিন ও মিজান। এসময় স্থানীয়রা আটক করে ফেলেন গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীকে। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা বাদী হয়ে গৃহকর্তা মিজানুর রহমান, গৃহকর্ত্রী মুন্নি ও হেলালকে আসামি করে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন। মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে রোববার বিকেলে গৃহকর্তা ও গৃহকর্ত্রীকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
শিশু নিশি জানায়, প্রায়ই তার শরীরে গরম ইস্ত্রি ও কাঁটা চামচ গরম করে ছ্যাঁকা দেওয়া হতো। ঢেলে দেওয়া হতো শরীরে গরম পানি। রোববার বিকেলে নিশিকে আদালতে নেয়া হয় ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার জন্য। তখন শারীরিক প্রতিবন্ধী মজিবুর একটি বাঁশের লাঠি হাতে আদালত চত্বরে ঘুরে নিজের মেয়ের ওপর হওয়া অত্যাচারের বিচার দাবি করেন।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. ফিরোজ তালুকদার বলেন, শিশুটি তার ওপর বর্বর নির্যাতনের জবানবন্দি দিয়েছে আদালতে। দুই আসামির রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ডে এনে বিস্তারিত তথ্য বের করা হবে।
মানবাধিকার জোটের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, গৃহকর্মীদের ওপর নৃশংস নির্যাতন কখনও কাম্য নয়। নির্যাতিত পরিবারগুলো তাদের কাছে সহায়তা চাইলে বিনামূল্যে আইনি সহায়তা দেবেন।
নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার শিশু গৃহকর্মী নিশি আক্তারের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামান। সোমবার দুপুরে পুলিশ সুপার মোহা. আহমার উজ্জামানের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুটির বাবা মজিবুরকে। এ সময় পুলিশ সুপারের কাছে তিনি মেয়ের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতনের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। পুলিশ সুপার নিশির চিকিৎসার জন্য প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার টাকা সহায়তা দেন। এছাড়া নিশিকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলার জন্য যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় বহনের দায়িত্ব নেন। পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় নিশিকে। সেখানে চিকিৎসকরা তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও চিকিৎসা শুরু করেন।
নিশির বাবা মজিবুর রহমান বলেন, পুলিশ তার মেয়ের সব চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ায় খুশি। তবে নির্যাতনকারীদের সর্ব্বোচ্চ শাস্তি চান তিনি। পুলিশ সুপারের কাছ থেকে এ বিষয়ে আশ্বাসও পেয়েছেন।
ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার (এসপি) মোহা. আহমার উজ্জামান বলেন, শিশু গৃহকর্মী নিশিকে দেখার পর খুব খারাপ লেগেছে। তার (শিশুটির) চিকিৎসার সব ব্যয় তিনি বহন করবেন। এছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে পুলিশি কার্যক্রম শেষে বিচার কার্যক্রম যেনো শুরু হয় সেজন্য তাদের তৎপরতা থাকবে।
Like this:
Like Loading...
মতামত লিখুন :