Logo

নেতাজির আজ ‘প্রয়াণ দিবস’ অন্তর্ধান নিয়ে রহস্যে

অনিন্দ্য বাংলা
মঙ্গলবার, আগস্ট ১৮, ২০২০
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক : প্রসঙ্গত নেতাজির অন্তর্ধান। ১৮ অগস্ট, ১৯৪৫ সাল। ৭৪ বছর আগে এই দিনেই নেতাজি তাইহকু বিমানবন্দর থেকে নিখোঁজ হন। কিন্তু তারপর নেতাজির কী হয়েছিল, সেই সত্য আজও জনসমক্ষে নেই। বিভিন্ন দিক থে বিভিন্ন মতামত আসে। বিভিন্ন সরকারি তদন্ত কমিশন মতামত দিয়েছে। তবুও ভারতীয় নাগরিকদের মনে প্রশ্নটা থেকেই গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই রবিবার (১৮ অগস্ট) নেতাজির মৃত্যুদিন হিসাবে চিহ্নিত করে শ্রদ্ধা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো। দেখাদেখি অনেক কংগ্রেস-বিজেপি নেতারাও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

ইতিমধ্যেই রবিবার (১৮ অগস্ট) নেতাজির মৃত্যুদিন হিসাবে চিহ্নিত করে শ্রদ্ধা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালিত প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো। দেখাদেখি অনেক কংগ্রেস-বিজেপি নেতারাও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

শোনা গিয়েছে যে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো পরে তাদের টুইট মুছে দিয়েছে। কিন্তু চন্দ্রকুমার বেশ কিছু প্রশ্ন তুলেছেন।

১. বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু , রাশিয়ায় নেতাজির মৃত্যু বা গুমনামি বাবাই নেতাজি – এই তিন মতের বাইরেও একটি চতুর্থ দিক রয়েছে। তা হলো জাপান। নেতাজির অন্তর্ধান রহস্য জানে জাপান। জাপান সরকারকে কূটনৈতিক চাপ দিক ভারত।

২. চন্দ্রকুমার কেন জাপানের কথা বলছেন, তা তিনি ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। ২০১৬ সালে বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ জাপান, আমেরিকা, জার্মানি, ইংল্যান্ড, রাশিয়ায় চিঠি লেখেন। নেতাজি সম্পর্কে ওইসব দেশগুলি থেকে তথ্য চেয়ে পাঠান। জাপান ছাড়া বাকি সবকটি দেশ-ই জানায়, নেতাজি সম্পর্কে তাঁদের কাছে বাড়তি কোনও তথ্য নেই, যা আছে তা ‘পাবলিক ডোমেনে’ রয়েছে। কিন্তু, জাপান জানায় তাদের কাছে নেতাজির ৫ টি ফাইল রয়েছে। দুটি ফাইল ভারত সরকারকে পাঠান হয়। কিন্তু, বাকি ৩টি ফাইল সম্পর্কে গোপনীয়তা রাখে জাপান। চন্দ্রকুমারের বক্তব্য, ওই তিনটি ফাইলে কি আছে তা জানা জরুরি। সম্ভাবনা রয়েছে, নেতাজির অন্তর্ধান রহস্যের সমাধান হয়তো ওই ফাইলেই রয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়। চন্দ্রকুমারের মতে আইবি বা গোয়েন্দা দফতরের হাতে ৭৭ টি ফাইল রয়েছে। নরেন্দ্র মোদী সরকার ওই ফাইলগুলি উন্মোচিত করুক। তা রহস্যের সমাধান করতে সাহায্য করবে।

সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন কিংবদন্তি নেতা, যুগে যুগে বাঙালিদের জন্য সর্বত্র যিনি অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থেকেছেন।

তিনি বলেছিলেন “ভারত পুনরায় স্বাধীন হইবেই হইবে। এবং স্বাধীনতার সূর্য উদয়ের খুব বেশি বিলম্বও নাই।”

তাঁর অনুরাগীদের কাছে সুভাষ চন্দ্র বসু ছিলেন ‘নেতাজি’। তাঁর জন্ম ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের কটক শহরে ১৮৯৭ সালের ২৩শে জানুয়ারি। বাবা ছিলেন আইনজীবী জানকীনাথ বসু ও মা প্রভাবতী দেবী।

মেধাবী ছাত্র সুভাষ চন্দ্র বসু ম্যাট্রিক পরীক্ষায় খুব ভাল ফল করার পর ভর্তি হন কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে। কিন্তু ওই নামী কলেজ থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছিল তাঁর জাতীয়তাবাদী চেতনার বহি:প্রকাশের কারণে।

“ওই কলেজের ইংরেজ অধ্যাপক প্রফেসর ওটেনকে ছাত্ররা প্রহার করেছিল তার ভারত-বিরোধী মন্তব্যের জন্য। সেই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে তাঁকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছিল। পরে তিনি কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে দর্শনশাস্ত্রে দ্বিতীয় স্থান পেয়ে স্নাতক পাশ করেন,” বলেন কৃষ্ণা বসু।

বড়ভাই শরৎ চন্দ্র বসুকে তিনি লিখেছিলেন, “বহু কষ্ট এবং আত্মত্যাগের মধ্যে দিয়েই শুধু একটি জাতিকে আমরা নির্মাণ করতে পারি।”

বহুদিন ধরে বাঙালি আত্মত্যাগের মাধ্যমে দেশসেবা করার যে আদর্শ তুলে ধরেছিল, যার জন্য অগণিত লোক আন্দামানে নির্বাসন বেছে নিয়েছিলেন সেই ধারাটিকে আরও প্রজ্জ্বলিত করলেন সুভাষ বসু।”

দেশে ফিরে চিত্তরঞ্জন দাশের নেতৃত্বে সুভাষ চন্দ্র বসু যোগ দেন স্বাধীনতার আন্দোলনে। সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের সভাপতি হবার পর পরপর দুবার তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতিও নির্বাচিত হন।

‘স্বরাজ’ নামে একটি সংবাদপত্র শুরু করেন তিনি ভারতে ফিরে যাবার পর এবং বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচারণার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিবাদে অংশ গ্রহণের কারণে অনেকবার তাকে জেল খাটতে হয়েছিল।

মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত মতৈক্যের কারণে শেষ পর্যন্ত সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সুভাষ চন্দ্র। অনেকেই মনে করেন সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রতি মি. গান্ধী সেইসময় অবিচার করেছিলেন।

এই অনুষ্ঠান প্রচারের সময় প্রেসিডেন্সি কলেজে ইতিহাস বিভাগের প্রধান ছিলেন রজতকান্ত রায়। বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেছিলেন যে “রবীন্দ্রনাথও সেই সময় গান্ধীকে বলেছিলেন যাতে সুভাষ চন্দ্রকে কংগ্রেস থেকে তাড়ানো না হয়। রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে সাধারণ বাঙালি পর্যন্ত সবার তখন একটা অনুভূতি হয়েছিল যে অন্যায়ভাবে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”

উনিশশ’ তিরিশের দশকে সুভাষ চন্দ্র বসু ইউরোপে পাড়ি জমান, যে সফরে তিনি ইটালির নেতা বেনিতো মুসোলিনি সহ বেশ কিছু ইউরোপীয় নেতার সঙ্গে দেখা করেন। তিনি দেখেন বিভিন্ন দেশে কম্যুনিজম এবং ফ্যাসিবাদ কীভাবে কাজ করছে।

এই সময় তিনি লেখেন “দ্য ইণ্ডিয়ান স্ট্রাগল” নামে তার বইয়ের প্রথম পর্ব। এই বইয়ে তিনি তুলে ধরেছিলেন ১৯২০ থেকে ১৯৩৪ পর্যন্ত ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা। বইটি লন্ডন থেকে প্রকাশিত হলেও ব্রিটিশ সরকার বইটি ভারতীয় উপমহাদেশে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে একটা অন্য ধারার প্রবক্তা সুভাষচন্দ্র বসু শুধু স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন না। কলকাতা পৌরসভার মেয়র থেকে জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি সব ক্ষেত্রেই তিনি কম বয়সে তার নিজস্ব চিন্তাধারার প্রমাণ রেখেছিলেন।