Logo

ন্যাশনাল টি কোম্পানির ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

অনিন্দ্য বাংলা
শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০২৩
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক : ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে শাহাদাত হোসেনের  বিরুদ্ধে। জানা গেছে তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও ক্রয়) পদে দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন। অনিয়ম ও দুর্নীতি করে গড়ে তুলেছেন নামে-বেনামে সম্পদের  পাহাড়, বানিয়েছেন বিলাসবহুল প্রাসাদ।

দেশের চা শিল্পে প্রতি বছর যখন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগছে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে চা উৎপাদনে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল টি কোম্পানির কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে কোটি কোটি টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। কোম্পানির ক্রয়নীতি উপেক্ষা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নানা অনিয়মে ডুবতে বসেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের কোম্পানি ন্যাশনাল টি। কোম্পানিটির সম্পদের পরিমাণ অঢেল হলেও বছর শেষে সেখান থেকে আয় তুলনামুলকভাবে কম আসে। ফলে বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিক লোকসান গুনছে কোম্পানিটি ।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে,  শাহাদাত হোসেনের  পিতা রওশন আলী ছিলেন বিভিন্ন চা বাগানের ওজন কল মেকানিক। বিভিন্ন বাগানে গিয়ে পাতা ওজন স্কেল মেরামত করতেন। তার এই পরিচয়ের সূত্র ধরে যোগাযোগের দ্বারা তৎকালীন উর্ধতন কতৃপক্ষের মাধ্যমে ন্যাশনাল টি কোম্পানিতে সহকারী বাগান ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। নিয়োগপ্রাপ্ত হবার পর থেকেই তিনি নানা রকম অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আত্নসাৎ শুরু করেন।

জানা গেছে, কুরমা চা বাগানে সহকারী ব্যবস্থাপক থাকাকালীন সময়ে চার বস্তা চা পাতা চুরির দায়ে অভিযুক্ত হন। তৎকালীন উর্ধতন কতৃপক্ষের সাথে ঘুষ প্রদান ও যোগসাযোসের মাধ্যমে বিষয়টি ধামাচাপা প্রদান করেন। এছাড়াও তৎকালীন সময়ে বাগান থেকে জ্বালানী তেল ও বিভিন্ন মূল্যবান গাছ চুরির অভিযোগ ও প্রত্যক্ষদর্শী আজও বাগানটিতে রয়েছেন।

সাতছড়ি চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক থাকাকালীন সময়ে বাংলোর জনৈকা গৃহকর্মীর সাথে তিনি অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। একই সাথে সেখানেও তিনি অর্থনৈতিক লুটপাট অব্যহত রাখেন। সেখানে তিনি মূল্যবান গাছ, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সহ আরো নানা অপকর্মের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে তার ভাগ দিয়ে দূর্নীতিগ্রস্থ সাবেক উর্ধতন কতৃপক্ষের সুনজরে আসেন।

সেখান থেকে প্রমোশন পেয়ে প্রেমনগর চা বাগানের ব্যবস্থাপক হিসেবে যোগদান করেন এবং নিয়মিত মাসোহারা প্রদানের মাধ্যমে কতৃপক্ষের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। সেখানে অবৈধভাবে জমি বিক্রি, ভুয়া বিল, শ্রমিক হাজিরা থেকে অর্থ আত্নসাৎ জ্বালানী তেল চুরির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন।

পারকুল চা বাগানে বাগানে ব্যবহারের জন্য টাইলস চুরি করে তার নিজস্ব বাসায় ব্যবহার করেন। যা পরবর্তীতে কোম্পানির নিরীক্ষাতেও উঠে আসে। এছাড়াও, সেখানে অবৈধভাবে ভুয়া বিল, শ্রমিক হাজিরা থেকে অর্থ আত্নসাৎ জ্বালানী তেল চুরির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। সেখানে নারী চা শ্রমিকের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলার কারনে শ্রমিক অসন্তোষের শিকার হন। ফলে তাকে সেখানথেকে মদনমোহনপুর চা বাগানে বদলি করা হয়।

মদনমোহনপুরে দশজন চা শ্রমিক কে নিয়োগ দিয়ে অর্থ আত্নসাৎ করেন। সেখানে অবৈধভাবে ভুয়া বিল, শ্রমিক হাজিরা থেকে অর্থ আত্নসাৎ জ্বালানী তেল চুরির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এখানেও সীমাহীন দুর্নীতির কারনে শ্রমিক অসন্তোষের মুখে পড়েন। এবারেও তাকে মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে তৎকালীন কতৃপক্ষ সুকৌশলে তাকে বাচিয়ে দিয়ে জগদীশপুর বাগানে প্রেরন করেন।সেখানেও তিনি অবৈধভাবে ভুয়া বিল, শ্রমিক হাজিরা থেকে অর্থ আত্নসাৎ জ্বালানী তেল চুরির মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এবার তিনি তার অপকর্মের দায়ে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হন। এবারও কতৃপক্ষের সরাসরি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে চাকরিতে পুনরায় বহাল হয়ে কুরমা চা বাগানে যোগদান করেন। এখানেও দূর্নীতির কারনে টিকতে না পেরে বিজয়া চা বাগানে বদলি হন। সেখানে চোরাই ভাবে বিপুল পরিমান রাবার চোরাইভাবে বিক্রি করেন এবং ভুয়া ভাবে শারীরিক অসুস্থতার নাম করে বিপুল টাকা আত্নসাৎ করেন। সেখানেও এক নারী চা শ্রমিকের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এমতাবস্থায় তাকে কতৃপক্ষ প্রধান কার্যালয়ে বদলি  দিয়ে উভয়ে মিলে এইসমস্ত দূর্নীতি ধামাচাপা দেন।

তার এই দীর্ঘ দূর্নীতির মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন দিকে নানা সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। তার মধ্যে হবিগন্জে গড়ে তুলেছেন স্বপ্ননীড় নামে কোটি টাকার বিলাসবহুল বাড়ি। এই টাকার উৎস কোথায় জানতে চান সচেতস মহল।

সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন কোম্পানির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এ দুর্নীতিবাজ ব্যবস্থাপক শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে তা দুদকের মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্ত করা সময়ের দাবী।