Logo

প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে বাজেট বক্তৃতায় যা বলা হলো

অনিন্দ্য বাংলা
শনিবার, জুন ৫, ২০২১
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক: এবারের বাজেটে প্রাথমিকে ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে এ বরাদ্দ ছিল ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে গত অর্থবছরের থেকে এবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বাজেট বক্তৃতার লিখিত কপি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

করোনা মোকাবিলা করে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান, দেশি বিদেশি বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে নানামুখী কৌশলসহ ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার জাতীয় বাজেট উপস্থাপন শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল। বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকাল তিনটায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদে এ বাজেট উপস্থাপন করছেন তিনি। এবারের বাজেটের আকার প্রস্তাব করা হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঘাটতি রয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা।

বাজেট বক্তৃতায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের গত ১২ বছরে সরকারের গৃহীত যুগোপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় বিভিন্ন সূচকে সাফল্য অর্জিত হয়েছে এবং পাশাপাশি মানব সম্পদ উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষার মান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নীত করার ও প্রায়োগিক শিক্ষার প্রসারে বহুমুখী উদ্যোগ চলমান রেখেছি আমরা। যেমন, প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় বিদ্যালয় ও পিটিআই স্থাপনসহ অন্যান্য অবকাঠামো স্থাপন কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন আছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যালয়বিহীন এলাকায় ১ হাজার ৫০০ বিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের আওতায় ১ হাজার ৪৯৫টি নতুন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। ২১ হাজার ৫৫৬টি বিদ্যালয়ে ৮০ হাজার ৬৩৮টি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারিকালীন ও চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখ থেকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে। ৪ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করে ২ বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমরা ‘স্কুল মিল পলিসি ২০১৯’ এর আলোকে ‘স্কুল মিল প্রকল্প’, ‘৬৪ জেলায় মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্প,’ ‘সাপোর্ট টু কোয়ালিটি এনহান্সমেন্ট ইন প্রাইমারি এডুকেশন প্রকল্প’, ‘কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করবো, এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে ৫০৯টি আইসিটি ল্যাব স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত রাখবো।

অর্থমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পাঠ চর্চা ও পাঠে মনোযোগী রাখার লক্ষ্যে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের মাধমে ‘ঘরে বসে শিখি’ প্রাথমিক পর্যায়ের পাঠ সম্প্রচার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীকে শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত রাখা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কোভিড মহামারির মাঝেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মাঝে উপবৃত্তি প্রদান কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপকারভোগী শিক্ষার্থীর মায়েদের অভিভাবকদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে উপবৃত্তির অর্থ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। এ সংকটকালে এ উপবৃত্তির অর্থে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারসমূহ কিছুটা হলেও সহায়তা পেয়েছে। এছাড়া, কার্যক্রমটি সার্বজনীন করার ফলে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের মাঝে ধনী-গরীবের বিভেদ দুরীভূত করা যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের স্কুলে গমণের আনন্দ আরও জোড়ালোকরণের প্রয়াসে প্রতি শিক্ষার্থীকে বছরের শুরুতে কিট এ্যালাউন্স ( ড্রেস, জুতা ও ব্যাগ) বাবদ প্রাথমিকভাবে ১ হাজার টাকা এবং উপবৃত্তির মাসিক হার ১০০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা করে প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেন। এজন্য বর্তমান অর্থবছরে ৩ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছি আমরা, যার মধ্যে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা কিট এ্যালাউন্স বাবদ এবং অবশিষ্ট টাকা উপবৃত্তি বাবদ ব্যয় হচ্ছে। উপবৃত্তি কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে চলমান রাখার লক্ষ্যে ৩০ জুন এ সমাপ্য এ কার্যক্রম আগামী অর্থবছর হতে রাজস্ব বাজেটে পরিচালনা করা হবে।

বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়, কোভিড ১৯ এর সংক্রমণকালেও সরকার দেশের দারিদ্র্যপ্রবণ ১০৪ উপজেলায় পরিচালিত ‘দারিদ্র্য পীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং কর্মসূচি’ এর কার্যক্রম চলমান রেখেছে। গত ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাস হতে কোভিড-১৯ মহামারি এর কারণে দেশের সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ থাকা সত্বেও যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণপূর্বক নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে প্রকল্পের বিভিন্ন ধরণের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন বিস্কুট প্রত্যেকটি শিশুর বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ফলে শিশুদের পুষ্টি চাহিদা পূরণ হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল উপজেলা/থানার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চালু করার লক্ষ্যে জাতীয় স্কুল মিল নীতিমালা অনুযায়ী জুলাই-২১ থেকে জুন-২৬ মেয়াদে ‘প্রাইমারি স্কুল মিল প্রকল্প’ শীর্ষক নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করবো।

অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, শিক্ষাকে যুগোপযোগী করা ও শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা ১ লাখ ৫ হাজার শিক্ষকের চাকরি সরকারিকরণ, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে এ পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক এবং সহকারী শিক্ষক পর্যায়ের ১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৬৪ জন শিক্ষক নিয়োগ, প্রধান শিক্ষকপদ ২য় শ্রেণির মর্যাদায় উন্নীতকরণ এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন দুই ধাপ উন্নীতকরণসহ ৭৯ হাজার ৩৩২ জন প্রধান শিক্ষককে লিডারশীপ প্রশিক্ষণ প্রদান, সকল শিক্ষককে বিষয়ভিত্তিক ও আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান ইত্যাদি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই, উপবৃত্তি প্রদান অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ‘স্কুল মিল পলিসি ২০১৯’ বাস্তবায়নের ফলে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন নিশ্চিত হয়েছে। যেমন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের ভর্তির হার বৃদ্ধি, ঝরে পড়ার হার বহুলাংশে হ্রাস এবং নিয়মিত উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পেয়েছে।

নিরক্ষর ব্যক্তিদের মোটিভেশনাল ও সেনসিটাইজেশন কার্যক্রম নিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষার বাইরে আছে এমন নিরক্ষর ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের জন্য মোটিভেশনাল এবং সেনসিটাইজেশন কার্যক্রম গ্রহণের প্রচেষ্টা নেয়া হবে। এই কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য হবে- উক্ত ব্যক্তিবর্গকে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বিষয়াদি, যেমন স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক তথ্য, স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা, কোয়ালিটি অফ লাইফ, যথোপযুক্ত শিক্ষার গুরুত্ব ইত্যাদি সম্পর্কে সেনসিটাইজ করা এবং তাদেরকে অনুপ্রাণিত করা যাতে তারা তাদের সন্তানদের এসকল বিষয়ে সম্যকভাবে সেনসিটাইজ করতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ লক্ষ্যে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোকে শক্তিশালীকরণের উদ্যোগ নেয়া হবে এবং তাদের মাধ্যমে এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় ২৬ হাজার ৩১১ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি, যা বর্তমান ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ছিল ২৪ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।