Logo

প্লাস (+) চিহ্ন দেখালে কল ধরবেন না! হাতিয়ে নিবে আপনার টাকা!

অনিন্দ্য বাংলা
বুধবার, জুন ১০, ২০২০
  • শেয়ার করুন

প্লাস (+) চিহ্ন দেখালে কল ধরবেন না! হাতিয়ে নিবে আপনার টাকা!!!

অন্তত পাঁচটি দলে বিভক্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে দেশের গ্রাহকদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের (ডেবিট-ক্রেডিট কার্ড) গো’পন তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছিল সংঘবদ্ধ একটি প্রতারকচক্র।সম্প্রতি এমন কিছু অ’ভিযোগের ত’দন্তে নেমে ঘটনার সঙ্গে জ’ড়িতদের গ্রে’প্তারে রাজধানী ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা থা’না এলাকায় অ’ভিযান চালান র‌্যা’­ব-২ ও র‌্যা’­ব-৮-এর সদস্যরা।

অ’ভিযানে গত ২৪ ঘণ্টায় সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রটির ১৩ সদস্যকে গ্রে’প্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যা’­বের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম।গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যা’­ব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, গ্রে’প্তাররা সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্রের সদস্য।

এরা বিশেষ কৌশলে প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল। প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সময় এদের কলের ক্ষেত্রে সাধারণত নাম্বারের আগে ‘প্লাস চিহ্ন’ থাকে। ওই চক্রের সদস্যদের গ্রে’প্তার করা হয়েছে। দেশজুড়ে এমন চার-পাঁচটি গ্রুপ সক্রিয় আছে। চক্রের এসব সদস্যের বেশির ভাগ বয়সে তরুণ।

গ্রে’প্তার ব্যক্তিরা হলেন নাজমুল জমাদ্দার (১৯), হাসান মীর (১৮), ইব্রাহিম মীর (১৮), তৌহিদ হাওলাদার (২৩), মোহন শিকদার (৩০), পারভেজ মীর (১৮), সোহেল মোল্যা (২৬), দেলোয়ার হোসেন (৩৫), সৈয়দ হাওলাদার (২০), রাকিব হোসেন (২৪), মোহাম্ম’দ আলী মিয়া (২৬), পলা’শ তালুকদার (৩৪) ও ইমন (২৫)।

গ্রে’প্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৪৬২ টাকা, ৩১টি মোবাইল ফোন, দুটি ল্যাপটপ, দুটি ট্যাব, ১২০টি সিম, একটি রাউটার এবং একটি টিভি কার্ড উ’দ্ধার করা হয়েছে। আ’ট’ক ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জন মাস্টারমাইন্ড। এর মধ্যে মোহন গত দুই মাসে প্রায় এক কোটি টাকা প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, করো’না পরিস্থিতির কারণে মানুষের বাইরে যাওয়া এড়াতে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে লেনদেন বেড়েছে। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে প্রতারকচক্র। বেশ কিছু অ’ভিযোগ পাওয়ার পর ত’দন্ত চালিয়ে এই চক্রের ১৩ সদস্যকে আ’ট’ক করা হয়। তারা প্রত্যেকে প্রাথমিকভাবে এই অ’প’রাধে জ’ড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। একজন মাস্টারমাইন্ডের নিয়ন্ত্রণে চক্রের

৩০-৩৫ জন সদস্য কাজ করে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। সাধারণত পাঁচটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজটি সম্পন্ন করে চক্রটি। প্রথমত, চক্রের ‘হান্টার টিমের’ সদস্যরা মাঠপর্যায়ে গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ করে। তারা বিভিন্ন ব্যাংকের কর্মক’র্তা, মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টদের নাম্বার সংগ্রহ করে মাস্টারমাইন্ডদের সরবরাহ করে।

দ্বিতীয় ধাপে ‘স্পুফিং টিমের’ সদস্যরা কাস্টমা’র কেয়ার নাম্বার কিংবা ব্যাংক কর্মক’র্তার নাম্বার ক্লোন করে। এর ফলে প্রতারকরা যখন গ্রাহকদের টার্গেট করে ফোন দেয়, তখন হুবহু সংশ্লিষ্ট নাম্বারটি দেখতে পায়। এতে গ্রাহকরা সহ’জেই বি’ভ্রান্ত হয়ে ফাঁদে পা দিচ্ছেন। প্রতিটি নাম্বার ‘স্পুফিং’ বা ক্লোন করতে এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা পায় টিমের সদস্যরা।

তৃতীয় ধাপের প্রধান কাজটি করে ‘কাস্টমা’র কেয়ার’ টিমের সদস্যরা। তারা ১৫-২০ জন একসঙ্গে একটি রুমে বসে কথাবার্তা বলে একটি সত্যিকার কাস্টমা’র কেয়ার সেন্টারের আবহ তৈরি করে। গ্রাহককে ফোন দিয়ে আশপাশের শব্দের মাধ্যমে বি’ভ্রান্ত করা হয়।

চক্রের মাস্টারমাইন্ড নিজে দল পরিচালনা করে। তারা কাস্টমা’র কেয়ার কর্মক’র্তা সেজে কৌশলে গ্রাহকের কাছ থেকে গো’পন পাসওয়ার্ড কিংবা ভেরিফিকেশন কোডসহ বিভিন্ন তথ্য নিয়ে নেয়। সঙ্গে থাকা অন্য কেউ অ্যাপসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এ জন্য তারা নির্জন কোনো চর বা গাছপালা ঘেরা নিরাপদ জায়গা বেছে নেয়।

চতুর্থ ধাপে ‘টাকা উত্তোলন’ টিমের সদস্যরা গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ ট্রান্সফারের পরপর দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা এজেন্টদের মাধ্যমে নগদ টাকা উঠিয়ে নেয়। যেসব ব্যালান্স উত্তোলন করা সম্ভব হয় না, সেসব দিয়ে বিভিন্ন কেনাকা’টা করে নেয় তারা।

শেষ ধাপে ‘ওয়াচ’ম্যান’ টিমের সদস্যরা স্থানীয়ভাবে ছোটখাটো দোকান চালানোর কাজে সম্পৃক্ত, যারা এলাকায় নতুন কোনো আগন্তুক কিংবা স’ন্দেহভাজন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যকে দেখলে মাস্টারমাইন্ডকে খবর দেয়। তারা ঘণ্টাভিত্তিক বা চুক্তিভিত্তিক কাজ করে থাকে।

প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত এসব অর্থ দলের মাস্টারমাইন্ড নিজের জন্য ৫০ শতাংশ, সহযোগীদের জন্য ৩০ শতাংশ, হান্টার টিমকে ২০ শতাংশ এবং স্পুফিং টিমকে নম্বরপ্রতি এক-দেড় হাজার টাকা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া লটারি জেতার কথা বলেও সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি।

সারওয়ার বিন কাশেম বলেন, ‘নাম্বার স্পুফিং বা ক্লোন করায় গ্রাহকরা হুবহু সংশ্লিষ্ট নাম্বার থেকে ফোন পাবেন। ফোন করে অ্যাকাউন্ট বাতিল, স্থগিত বা সিস্টেম আপগ্রেডের কথা বলে তথ্য, পিন বা ভেরিফিকেশন কোড জেনে নিয়ে অ্যাকাউন্ট নিয়ন্ত্রণে নেয় চক্রটি। কিন্তু প্রতারকদের স্পুফিং নাম্বারের আগে সাধারণত ‘প্লাস চিহ্ন’ থাকে। গ্রাহকদের তথ্য হাতিয়ে নেওয়া এই চক্রের সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং কিংবা ব্যাংকের কোনো কর্মক’র্তা জ’ড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হবে।’