Logo

ফুলপুরে ফিশারি’র পানিতে বন্দী শতাধিক পরিবারের করুনগাঁথা !

অনিন্দ্য বাংলা
মঙ্গলবার, অক্টোবর ৬, ২০২০
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক : অপরিকল্পিতভাবে মৎস্য চাষে দুর্ভোগ নেমে এসেছে ময়মনসিংহের ফুলপুরের রূপসী ইউনিয়নে। জলাবদ্ধতায় তিন গ্রামের শতাধিক পরিবারকে পানিবন্দি হয়ে থাকতে হচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, ‘প্রভাবশালী’ একটি মহল সরকারি জমি দখল করে অপরিকল্পিতভাবে ফিশারি গড়ে তোলায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত পানি নিষ্কাশন করে জলাবদ্ধতা নিরসন ও সরকারি জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

ময়মনসিংহের ফুলপুর রূপসী ইউনিয়নের পাইকপাড়া, নগুয়া ও কুঁড়িপাড়া— অপরিকল্পিত ফিশারির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতার শিকার এই তিন গ্রাম। এর সঙ্গে বৃষ্টি ও বন্যার পানি মিলিয়ে তিনটি গ্রামের এখন বেহাল দশা। কেবল ফিশারি নয়, সরকারি জমি দখল করে গোয়াল ঘর নির্মাণের অভিযোগও রয়েছে ‘প্রভাবশালী’দের বিরুদ্ধে। তাতে করে মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের রাস্তাও বন্ধ হয়ে গেছে।

কুড়িপাড়ার পঞ্চাশোর্ধ্ব এরশাদ আলী, আব্দুল খালেক ও মন্নাছ আলী বলেন, ফিশারি দেওয়ার কারণে বৃষ্টি হলেই পানি যেতে পারে না। দিনের পর দিন পানি জমে থাকে। অনেকে বাড়ি থেকে বের হতে পারে না। প্রতিদিনের কাজগুলো করা যায় না। পানি জমে থাকায় মাটির রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। চলাচলের কোনো উপায় নেই।

তারা বলছেন, একদিকে পানি জমে থাকে, অন্যদিকে চলাচলের রাস্তা নষ্ট— স্বাভাবিকভাবে কোনো কাজই করতে পারছেন না স্থানীয়রা। বিশেষ করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। আবার স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শস্য বাজারে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও বাড়তি মজুরি দিতে হয় কেবল রাস্তার বেহাল দশার কারণে। সময়ও লাগে বেশি। ফলে সব দিক থেকেই ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।

স্থানীয়রা জানালেন, ওই এলাকায় একটি হালট (দুই জমির মধ্যবর্তী খালি জায়গা) রয়েছে, যেটি আবার সরকারি জমির অংশ। এই হালট ব্যবহার করে পানি নিষ্কাশনের পথ তৈরি করা যায়। এতে করে এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হবে। তবে হালটটিও অবৈধভাবে দখল হয়ে থাকায় সেই পানি নিষ্কাশনের পথ তৈরি হচ্ছে না।

বাশাঁটি গ্রামের রুহুল আমিন বলেন, ফিশারির মালিকদের বারবার বলার পরও কোনো কাজ হয়নি। এলাকার মানুষের দুঃখ-কষ্ট তারা দেখেন না। এই ফিশারির জলাবদ্ধতা থেকে আমরা মুক্তি চাই। সরকারি হালট উদ্ধার করে পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী সমাধান চাই।

পাশের বাশাঁটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোমা  বলেন, করোনা সংক্রমণের কারণে স্কুল বন্ধ হলেও আমাকে যেতে হয়। কষ্ট করে হলেও যাচ্ছি। কিন্তু স্কুল খুললে ছেলেমেয়েরা আসতে পারবে কি না, সন্দেহ আছে। কারণ এরকম পানি পেরিয়ে যাতায়াত করাটা যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি এতে করে শিশুদের নানা ধরনের চর্মরোগও হতে পারে। ফলে অনেক অভিভাবকই হয়তো বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাবেন না।

একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুল হালিমসহ স্থানীয়রা জানালেন, ফিশারির প্রতিবন্ধকতায় জলাবদ্ধতা তৈরির বিষয়টি সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে গত ১০ আগস্ট এলাকাবাসী লিখিত আবেদন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। তিনি বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেন রূপসী ইউনিয়ন ভূমি কর্তৃপক্ষকে।

পরে ১৪ সেপ্টেম্বর ফুলপুরের রূপসী ইউনিয়নের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অরুন কুমার সাহা সরেজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন তৈরি করেন। তাতে বলা হয়, রূপসী ইউনিয়নের কুড়িপাড়ার মৃত ছমির উদ্দিনের তিন ছেলে রফিকুল ইসলাম, মতিউর রহমান ও আব্দুর রশিদের ফিশারি নির্মাণের কারণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ফলে ৫০ থেকে ৬০টি ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে। পানি নিষ্কাশনের কোনো ড্রেন-নালা না থাকায় এলাকার শতশত মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মাজরাভুক্ত ফিশারির উত্তর পার্শ্বে একটি সরকারি হালট রয়েছে। হালটটি এই অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের একমাত্র পথ হতে পারে। স্থানীয়দের প্রভাবে হালটটি অবৈধভাবে দখল হওয়ায় তা উদ্ধারে জমি পরিমাপের জন্য সার্ভেয়ার চাওয়া হয় ওই প্রতিবেদনে।

এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে ফিশারির মালিক রফিকুল ইসলাম, মতিউর রহমান ও আব্দুর রশিদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা কোনো কথা বলতে রাজি হননি। বরং জানা গেছে, তারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করেছেন, এলাকাবাসীই জোর করে খাল খনন করে জলাবদ্ধতা তৈরি করেছে।

জলাবদ্ধতায় জনদুর্ভোগ ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন বিষয়ে জানতে চাইলে ফুলপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সীতেশ চন্দ্র সরকার অনিন্দ্যবাংলার কাছে অপরিকল্পিতভাবে ফিশারি গড়ে ওঠার তথ্য স্বীকার করে নেন। তিনি বলেন, বিষয়টি দুঃখজক। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা হবে। আর সরকারি জমি ও হালট দখলমুক্ত করে জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থায়ী ব্যবস্থাও নেওয়া হবে।

ইউএনও আশ্বাস দেন, তিনি নিজেই ওই এলাকা পরিদর্শন করবেন। তিন গ্রামের শতাধিক পরিবারের দুর্ভোগ লাঘবের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন।