Logo

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠে

অনিন্দ্য বাংলা
বৃহস্পতিবার, জুন ৪, ২০২০
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক ঃ ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠ ১৯৭২ সালের ৫ই এপ্রিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাষনের কিছু অংশ…

ভাইয়েরা আমার, বোনেরা আমার,
আপনারা স্বাধীনতা পেয়েছেন।আমরা আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক।বাংলাদেশ আজ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। কিন্ত দুনিয়ার কোন দেশ, দুনিয়ার কোন জাতি এত রক্ত দেয় নাই, যা আমরা বাঙ্গালীরা দিয়েছে।

আমি মিথ্যা ওয়াদা করতে পারি নাই। আমি মিথ্যা ওয়াদা জীবনে কোনদিন করি নাই। আমি আপনাদের ভোট নিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম বাংলার মানুষকে মুক্ত করতে হবে। আমি বলেছিলাম ৭ই মার্চ তারিখে-‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

চুরি করে যদি কেউ খায় তার নাড়ী কেটে ফেলে দিতে হবে। একদল লোক জিনিসের দাম বাড়ায় দিয়েছে। তেলের দাম, কাপড়ের দাম, সাবান। আজকে আমি একটা ঘোষণা করতে চাই। আমি আগে করি নাই। আমি আস্তে আস্তে চাবাই। এই বাংলাদেশে যত ডিষ্ট্রিবিউটর আছেন। যত হোল সেলার আছেন। যত এজেন্ট আছেন, তেলের, নুনের, সাবানের, কাপড়ের যা কিছু হউক, যদি সাত দিনের মধ্যে দাম না কমে, সমস্ত ডিলার আমি ক্যানসেল করে দেব। সমস্ত ডিস্ট্রিবিউটর এজেন্টকে আমি ক্যানসেল করে দিব। প্রত্যেক ইউনিয়নে ইউনিয়নে একটা করে আমি প্রপার ডিলক্টের করব। তোমাদের আমি ব্যবসা করতে দিয়েছিলাম, কিন্তু বাংলার মানুষকে আমি লুট করতে দেই নাই। তোমাদের আমি বলে দিচ্ছি যদি জিনিস পাওয়া যায় তবে কেন জিনিসের দাম বেশী হবে? ক্যানসেল হয়ে গেছে। কেরোসিন তেল আছে, অমনি বোতলে কমাইয়া দিয়া দাম বাড়াইয়া দেয়, এ এজেন্সি ক্যানসেল হয়ে যাবে। মুজিবর রহমান বলে দিচ্ছে, এ এজেন্সি ক্যান্সেল।

আমি আপনাদেরকে অনুরোধ করছি যে, আপনারা গ্রামে গ্রামে আমার ভাইয়েরা পুলিশের উপর নির্ভর করে আমি সমাজ রক্ষা করতে চাই না। আমি জনগণের সাহায্য চাই। জনগণকে নিয়েই আমি স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করেছিলাম। আজ জনগণকে নিয়েই আমি সংগ্রাম করতে চাই, দেশ গড়ার সংগ্রাম। এভাবে যেন শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকে। আপনারা রাজী আছেন কিনা? আপনারা রাজী আছেণ? গ্রামে গ্রামে চোর ডাকাত ধরবেন?

ভাইয়েরা আমার, সরকারী কর্মচারী ভাইদের আমি বলব, পুরানো মদ পুরানো সঙ্গ ছেড়ে দেন। বিপ্লবের মাধ্যমে যেখানে দেশের স্বাধীনতা আসে। সেখানে অনেকে দেশে অনেকের চাকুরী করার সুযোগ থাকে না। আমি আপনাদের অনেকের চাকুরী এখানে রেখে দিয়েছি। আমি চাই, আপনারা এই মায়ের, বাংলা মায়ের সন্তান হিসেবে বাংলা মায়ের সেবা করে যান। আমরা বলব আপনারা শাসক নন। আমি আপনাদের আবেদন করব। আমি আপনাদের রিকোয়েষ্ট করব, আমি আপনাদের অনুরোধ করব। এই দেশের প্রত্যেকটা মানুষ ভাই, আপনার মা, আপনার বোন, আপনার বাবা, সরল জ্ঞানে তাদের সেবা করতে হবে।

সমাজতন্ত্র আমি করব, সমাজতন্ত্র বাংলাদেশে হবে। শোষণহীন সমাজ বাংলাদেশের হবে। তার প্রথম পদক্ষেপ আমরা গ্রহণ করছি এবং আপনাদের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন। আমি জানি বাংলার মানুষ আমাকে ভালবাসে। আমিও বাংলার মানুষকে ভালবাসি। আমি বাংলার মাটিকে ভালবাসি, বাংলার মাটিও আমাকে ভালবাসে।

আমি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আসতে পারতাম না। আমার মনে হয় এদেশের কোটি কোটি মানুষের দোয়া আর এই মাটির টানে আমি পশ্চিম পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালী জেলে, যেখানে আমার জন্য কবর খোড়া হয়েছিল তার কাছ থেকে আমি আসতে পারতাম না। এই মাটিকে আমি ভালবাসি।
আমি চাই, আমার বাংলার মানুস হাসুক, আমার বাংলার মানুস পেট ভরে ভাত খাক। আমার বাংলার মানুষ শান্তি পাক, আমার বাংলার মানুষ নির্যাতিত না হউক, আমার বাংলার মানুষ সুখী হউক। আমার বাংলার মানুষ সুখে স্বাচ্ছন্দে বাস করুক। লক্ষ লক্ষ বেকার রয়েছে আমার দেশে। চাকুরীর বন্দোবস্ত আমি করতে পারছিনা। চাকুরীর বন্দোবস্ত করতে হলে কল-কারখানা করতে হবে। সরকারী চাকুরীতে চাকুরী হয় না। আমি তোমাদের বলে দিতে চাই, আমি এমন এক অর্থনীতি গড়ে তুলতে চাই- শোষণের জন্য অর্থনীতি আমি গড়ে তুলতে চাই না।

ইন্শাল্লাহ সোনার বাংলা আবার জাগবে, যদি শোষণহীন সমাজ গড়তে পারি। তবে আপনাদের সাহায্য সহযোগিতা প্রয়োজন। আপনাদের কাছে আমার আরেকটা অনুরোধ হলো যে, দূর্ণীতি ও ঘুষের বিরুদ্ধে আপনারা আন্দোলন করতে রাজী আছেন কিনা? দূর্ণীতি আর ঘুষ, রাজী আছেন? হ্যাঁ, খোদা হাফেজ-জয় বাংলা।