Logo

বোরো ধান চাষে মিলছে না কৃষকের শ্রম ঘাম আর অর্থের হিসাব

অনিন্দ্য বাংলা
রবিবার, মে ১০, ২০২০
  • শেয়ার করুন

: অনুসন্ধানী প্রতিবেদন :

নূরুজ্জামান সরকার, তারাকান্দা :  বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আজ নাকাল সবকিছু। তেমনিভাবে উঠতি বোরো ধানের মৌসুমে কৃষকশ্রেণী মাঠের সোনালি ধান দেখে আনন্দিত না হয়ে কান্নায় বুক ভাসাচ্ছে।প্রতিকূলতার মধ্যে ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলায় বোরো মৌসুমে এবার বাম্পার ফলনের আশা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এবার বোরো ফসলের আবাদ হয়েছে।এখন পর্যন্ত বড় ধরণের কোন ঝড় বা শিলা বৃষ্টি না হওয়ায় পাকা ধান ঘরে তুলতে মরিয়া কৃষক।শ্রমিকের অভাব টের পাচ্ছে তারা হাড়ে হাড়ে।রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আইওয়াশের ধানকাটা তাদের বুকে শেল সম আঘাত করে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কৃষক জানান,তারা সাংবাদকর্মী ও হাওলাতি লোক এনে টাকা খরচ করে, মোটর সাইকেলের পেট্রোল ভরতে যে টাকা খরচ করে আর ফটো তুলেন, তা দিয়ে পুরো খেতের ধান কাটানো যেতো,কিন্তু সে টাকা আমাদের না দিয়ে তারা নাম কামানোর জন্য আরো ক্ষতি করে চলে যায়।এটা বন্ধ করা দরকার কারণ আমরা কারো আশায় থাকি না।যাক সেকথা এবার আসা যাক মাঠ পর্যায়ের কৃষকদার হালচাল নিয়ে কিছু সঠিক অনুসন্ধানের বর্ণনায়।

বর্তমানে দেশি-বিদেশী উচ্চ ফলনশীল জাতের পাকা ধানে ভরে আছে উপজেলার সর্বত্র ফসলি মাঠগুলো।শতকরা ৭০ভাগ ধান কাটার উপযুক্ত হয়েছে বা কাটার তৎপরতা চালাচ্ছে কৃষক। কৃষিজ হাতিয়ারে শান দিয়ে প্রস্তুতি নেয়া সম্পন্ন করেছেন অনেক কৃষক।কৃষকের বাড়ীতে মেয়েরা, গৃহিনীরাও সঙ্গদিতে মড়িয়া ধান ঘরে তুলতে।স্কুল কলেজ পুড়োয়া সন্তানেরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারাও সহযোগীতা করছে।নতুন ধানের আগ‌মনী বার্তায় মাতোয়ারা আজ কৃষক সমাজ।কিন্তু চোখে মুখে বিষাদের করুণ সুর।

উপজেলার কাকনী ইউনিয়নের কালাইজানি গ্রামের কৃষক আজগর আলী জানান,”আমি এই মৌসুমে ৪০ শতক জমিতে আগামজাতের বি-২৮ ধান লাগিয়েছি। আগামজাতের ২৮ ধান কাটা হয়েছে ফলনও আশানুরূপ হয়েছে।অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পোকামাকড় এবং রোগের প্রকোপ কম থাকায় ফলন ভালো হয়েছে ইনশাআল্লাহ। আগাম ২৮ জাতের ধান কাঠাপ্রতি ফলন এই মৌসুমে ৫-৬ মন।তবে কাঠাপ্রতি খরচ আর বাজার মূল্যে যা দেখা যায় তাতে লাভ হবেনা। খেতে হবে তাই নিজের জন্য হলেও চাষ করতে হয়।

চলতি বোরো মৌসুম সম্পর্কে তারাকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রকিব আল রানা জানান, চলতি বোরো মৌসুমে চাষযোগ্য ভূমির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৬৬০ হেক্টর তবে আমরা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি ২১ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করতে সক্ষম হয়েছি। আমরা এই সময়ে এসে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি প্রায় ৯০ হাজার ৩০০ মে.টন।আশাকরি আমরা আমাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষমাত্রা অর্জন করতে পারবো।চলতি বোরো মৌসুমে তারাকান্দা উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ৫৯০ জন প্রান্তিক কৃষককে সার-বীজ প্রনোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পার্চিং, সৌর-আলোক-ফাঁদ, কীটনাশক প্রয়োগে তদারকি ও পরামর্শ প্রদান অব্যাহত রাখা হয়েছিল। ইতিমধ্যে ধানকাটা সহজিকণের জন্য কৃষিতে আধুনিক উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের লক্ষ্যে ভর্তুকি মূল্যে ১টি হার্ভেষ্টার ও ৪টি রিপার যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। আরো ১টি হার্ভেস্টার ৪টি রিপার যন্ত্র ভুর্তকিমূল্যে প্রদানের জন্য পাইপলাইনে প্রক্রিয়াধীন আছে।এগুলো ব্যবহারে উৎপাদন খরচ যেমন কমবে তেমনি শ্রমিক সমস্যার লাগব হবে বলে তিনি জানান। তাছাড়া আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাগণ সার্বক্ষণিক তাদারকি চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও অন্য কোন আকস্মিক দূর্ঘটনা ছাড়া কৃষক যদি জমির ফসল ঘরে তুলতে পারে তাহলে তারাকান্দা উপজেলাময় বাম্পার ফলন হবে আশাকরি।তা নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র বিক্রি করা যাবে।

তারাকান্দা উপজেলায় ইতিমধ্যে ৩০% ধান কাটা হয়েছে।বোরো মৌসুমে এসে দেখা দিয়েছে তীব্র শ্রমিক সংকট।করোনার প্রাদুর্ভাব তা আরো তীব্রতর করেছে।অন্য বারের চেয়ে এবার মজুরী বেশি হাকছে শ্রমিকগণ। শ্রমিকদের অত্যাধিক মজুরি যা কৃষকের লাভের অংকে ভাগ বসাচ্ছে।এবার ১০ শতাংশ জমি কাটতে তারা ৬০০ হতে ৮০০ টাকা নিচ্ছে।হার্ভেস্টার রিপার দিয়ে কাটতে লাগছে ৫০০ হতে ৫৫০ টাকা।

উপজেলার কয়েকজন কৃষকের সাথে আলাপ করে যা জানলাম, তা শুনে কষ্ট পাওয়া ছাড়া উপায় নেই।তারাকান্দা সদর ইউনিয়নের মধুপুর গ্রামের কৃষক মোঃ বিল্লাল হোসাইন জানান, আমি বোরো আবাদে কাঠাপ্রতি (৯.৫ শতাংশ) খরচ করেছি ৫০০০ টাকা,যা হালচাষ,বীজতলা সহ চারা উৎপাদন, চারারোপন,পানি বিল, ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার , সার ও কীটনাশক ক্রয় ছিটানো,কাটানো,মাড়ানো, শুকানো, উড়ানো, পরিবহণখরচ মিলে হয়ে যায়। এখন প্রতিকাঠায় আমি ফলন পেয়েছি ৬ হতে ৭ মন।বাজারে বিক্রি করলাম ৬০০ টাকা দরে যার মূল্য আসে ৪২০০টাকা। তাহলে কাঠাপ্রতি আমার লস ৮০০ টাকা।তারপরও নিজের শ্রমঘাম সেটার মূল্য নেই।কেন কৃষক ধান আবাদ করতে যাবে? আমি কোন প্রণোদনা পায়নি, সরকারের কাছে ধান বিক্রি করতে গেলে আরো সময় দরকার তাহলে শ্রমিকের এখন মজুরী দেব কি করে?তাই কমদামেই সব ধান বিক্রি করতে হবে।

গালাগাঁও ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল কুদ্দুস আক্ষেপ করে বলেন,আর ধান চাষ করবো না, এতে কোন লাভ নেই শুধু ক্ষতি।আর কৃষিতে কতধরণের অফিসার নাকি নিয়োগ দিছে আমরা তো তাদের সাহায্য পাইনা।তারা পরিচিত মানুষের জমি মাঝেমাঝে এসে দেখে যায়,আর অফিসে হাজিরা দেয়, কেন যে সরকার তাদের রাখছে সেটাই বুঝিনা! জমি পতিত রাখতে মন চায় না তাই বাধ্য হয়েই ধান করি।

কামারগাঁও ইউনিয়নের আশ্বিয়া গ্রামের কৃষক আব্দুস সালাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন,আমাদের কৃষকরা ধানের ন্যায্য মূল্য পায় না,গোদামে ধান নিলে গেলে তারা সারাদিন বসিয়ে রেখে বলে এ ধান চলবে না, আবার এইসব ধান নেতারা দিলে যদিও আমাদের কাছ থেকে কিনে, তাহলে রাতেও চলে দিনেও চলে।সরকারের দামে বিক্রি করলে কিছু টাকা লাভ হতো এখন লাভ তো দুরের কথা ক্ষতি কি করে পুষিয়ে নেবো তা নিয়ে চিন্তায় আছি।এসব অনিয়ম দেখার কেউ নাই।

বানিহালা ইউনিয়নের রনকান্দা গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম সৌকত বলেন,ধান করা এখন বিরাট সমস্যা,যারা নিজে করতে পারে তাদের পুষালেও যারা কামলা দিয়ে চাষবাস করে,তাদের এক পয়সাও লাভ নেই। একর প্রতি ১৫ হতে ২০ হাজার টাকা লস হয়।আর বাজারে ধান বিক্রি করতে গেলে ওজনে কারচুপি করে বস্তাপ্রতি ৪/৫ কেজি ডলক দিতে হয়।অনেকের ওজনের বাটখারা বেশি নেয়,সীসা দিয়ে গর্ত ভর্তি করা। তাই অসাধু ব্যবসায়ীদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানা করা দরকার।সবাই কৃষককে শোষণ করে।সেজন্যে আমি আগামী বছর আর ধান করব না।

বালিখা ইউনিয়নের বড়ইবাড়ি গ্রামের কৃষক হাফিজুল জানান,বিলের জমিতে ধান চাষে ও কাটানো খরচ বেশি আর ঝুঁকিও বেশি কারণ অল্পতেই ধানগাছ ডুবে যায় পানির নিচে বা বাতাসে পড়ে যায়।ফলনও তেমন হয়না। জোঁকের জন্য সবকিছুতে খরচ বেশি খরচ,ধান বিক্রি করে কোন লাভ নাই এক ফসলি জমি তাই পেটের দায়ে ধান করি। লাভ নাই তা দেখেও ধান করি,বসে থাকলে খাবো কি? বাজারে যে দামে ধান কিনা যায় তাতে আরো লাভ বেশিনহবে,আগামীতে আমি তাই সব জমিতে ফিসারী করে ফেলব।

রামপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন,সরকার যদি প্রতি গ্রামে বা ইউনিয়নে গোদাম বানাতো আর ধান সেখানে রেখে নগদ কিছু টাকা দিতো কামলা খরচ ও ঋণ পরিশোধ করতে।তাহলে কৃষক দাম বাড়লে তা বিক্রি করে লাভবান হতে পারতো।এখন একদিক দিয়ে কাটে আর সাথে সাথে বিক্রী করে হালখাতা করতে করতে সব শেষ।পরে নিজেই চড়াদামে চাল কিনে খায়।মাঝখান হতে সারাদেশের মধ্যস্বত্তভোগীদের পোয়া বারো।

এমনি আরো ক’জনের সাথে আলাপ করলে তারা বলেন, বোরো ফসল নিয়ে তেমন যে নিশ্চয়তা আছে এমনটি নয়, আল্লাহ রহমত করলে ভালো না করলে সবশেষ,তিনিই সব জানেন।তবে আমরা উদ্বিগ্ন।এই মৌসুমে ফসল চাষে অনেক খরচ হয়েছে, জানিনা ফসল ঘরে তুলতে পারবো কিনা।ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। ধান কেঁটে আনলেও তা গোদামে বিক্রি করতে পারবো কিনা? নাকি গতবারের মতো এবারও ৫০০/ ১০০০ টাকা দিয়ে নেতারা কার্ড কিনে নিয়া তারা ধান গোদামে দিবো!কে জানে? আমরাতো সারাটি জীবন গাধার খাটনি দিয়া গেলাম, টাকা কামাই করে সরকারের লোক আর দালাল এবং নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর দোষ নাই তিনি যে দাম দিছেন তা সবাই আমরা পাইলে তো অনেক টাকা লাভ হইতো।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসের নাম না বলার শর্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন কর্মকর্তা বলেন, বোরো মৌসুমে সকলে ধান পাকার জন্য অপেক্ষা না করে ৮০ভাগ ধান যখন পেকে যাবে তখনি তা কর্তন করা ভালো।নাহলে বিপদ হতে পারে।শ্রমিকের মজুরী বেশি স্বীকার করে তিনি সমবায় পদ্ধতিতে গ্রামভিত্তিক প্রযুক্তিগত সহয়তা দিলে কৃষক লাভের মুখ দেখবে বলে বিশ্বাস করেন।

ধান ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কলিন খানের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, ওজনে কারচুপিটা সবার ক্ষেত্রে ঠিক না, যারা ময়াল থেকে ধান নিয়ে আসে তারা অনেক সময় এটা করে থাকে।তবে অনেক মিলারদের ধান দিলে,আড়ৎদারদের কিছু ডলক দিতে হয়,তবে তা মনপ্রতি ১ কেজির বেশি নয়।মশ্চার ঠিক থাকলে তাও নেয়া হয়না।খালি বস্তার ওজনটা এড করা হয়।

সিজনে সিন্ডিকেট করে ধানের বাজার দর কমানোর অভিযোগ সম্পর্কে আর একজন ব্যবসায়ীকে জিজ্ঞেস করলে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সে ব্যবসায়ী বলেন, সরকার মিলার ক্ষুদ্রব্যবসায়ীদের বা আড়ৎদারদের ধানের সিজনগুলোতে ঋণ দিলে বাজারে একটা প্রতিযোগীতামূলক দামে ধান ক্রয় বিক্রয় করা যেতো,তাতে কৃষক দাম বেশি পেয়ে লাভবান হতো, এখন পাইকারদের টাকা দিয়ে ফড়িয়াদের ধান কিনতে হয়,তাদের দেওয়া দামে আদিষ্ট হয়ে ধান কিনতে হয়।তাই সিন্ডিকেট পুরোপুরি অস্বীকার করার কিছু নেই।আর সিজনে ধানের যোগান বেশি চাহিদামাফিক তাই দাম অনেক কম হয়ে থাকে।

একজন রাইসমিল মালিক, বাবু কমল আগরওয়ালা এর সাথে আলাপকালে ধানের মূল্যে বা চালের মূল্যের তারতম্য সম্পর্কে তিনি বলেন,করোনাভাইরাস এর জন্য পরিবহণ ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণ। তা ছাড়া সারাবছর মিলগুলোতে ক্রাশিং হয়না, বসে থেকে কর্মচারিদের বেতনভাতা দিতে হয়,যারা সরকারি বরাদ্দ বেশি পায়,তারা মিল চালিয়ে লাভবান,যারা হাসকি মিলের মালিক তাদের বরাদ্দ কম,তারা ফি-বছর লস খায় যা সরাসরি প্রভাব পড়ে বাজারে। মিলারদের সরকারি ঋণ বা প্রণোদনা না দিলে ধীরে ধীরে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।আর বিদ্যুৎ বিলে তাদের ছাড়দিতে হবে নতুবা ভুর্তকি দিতে হবে।

তারাকান্দা খাদ্য গোদামের কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান কে মিলারদের(নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অভিযোগ সম্পর্কে অর্থাৎ সরকারী বরাদ্দকৃত প্রতিটন চাউলের বিপরীতে ৩/৪ হাজার টাকা খরচ বাবদ দিতে হয়,এছাড়াও গোদামের লেবার,সর্দার সহ কর্মকর্তা,কর্মচারীগণের বিভিন্ন চাহিদা মিটাতে হয়,তা সঠিক কিনা?জানতে চাইলে তিনি বলেন,আগে এখানে কে কি করেছে তা আমার জানা নাই, তবে আমি আসার পর এমন কোনকিছু হয়নি বা ভবিষ্যৎ এ হবেনা বলে আশ্বাস দেন।

তারাকান্দা খাদ্য গোদামের ওসিএলএসডি শহিদুল ইসলাম কে কৃষকের ধান ফেরত দেওয়া এবং তাদের একই ধান নেতা বা অন্য কোন দালালের মাধ্যমে দিনে ও রাতে গ্রহণে সহয়তা করার অভিযোগ আছে, তা সঠিক কিনা? সে সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান,আমি নবাগত এমন কাজ কেউ আগে করেছে কিনা জানি না। তবে এবার কোন কৃষকের ধান সরকারের নিয়ম নীতিমালা অনুযায়ী সঠিকতর হলে কাউকে ফেরত দেওয়া হবেনা।কোন দালাল বা মধ্যস্বত্তভোগীদের জায়গা এখানে হবে না ইনশাল্লাহ। কৃষক ভাইদের আমি নিজেই সার্বিক সহযোগীতা করতে বদ্ধপরিকর।

তবে সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে বলা যায় যে,ধানচাষাবাদ করে কৃষকের এই রক্তপানি করা শ্রমঘামের মূল্য তারা পায় না সেটা শতভাগ সঠিক, সরকারের সাহায্য ছাড়া এ পেশায় টিকে থাকা আর সম্ভব নয়।অনেক কৃষক আজ জমিজমা বিক্রি করে জীবিকানির্বাহ করছে। তাদের ঋণগুলো নবায়ন করা হয় ব্যাংকে থাকা দালালের মাধ্যমে তারা টাকা দিয়ে ম্যানেজার,মাঠকর্মী কে ম্যানেজ করে অনেক টাকা হাতিয়ে নেন। আর কৃষক পায় ৫/৭ হাজার টাকা,তা দিয়ে তার কিছুই হয়না,উপরোন্তু তারা দিনকে দিন আটকে যাচ্ছে ব্যাংক ঋণের ফাঁদে।

 

বৈশ্বিক করোনা মহামারির এই সময়ে এসে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কৃষক বোরো ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবে ততই মঙ্গল বলে জানিয়েছেন কৃষি সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল। বর্তমান করোনা মহামারির যে পরিস্থিতি চলছে,এই পরিস্থিতি যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তাহলে অচিরেই বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলে আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা মনে করছেন।তাই জলদি কোনরকম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াই বোরোধান ঘরে তুলবে কৃষক এমনটাই আশা করছেন তারাকান্দা উপজেলাবাসি।

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, এদেশের ৮০% জনগণ এখনো কৃষির উপর নির্ভরশীল। বার্ষিক প্রবৃদ্ধিতে একটি বৃহৎ অংশ আসে এদেশের কৃষকের শ্রমঘাম হতে। তাই এখনি সরকার সহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দ্রুত এগিয়ে আসতে হবে। মনে রাখতে হবে এই কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে। তাদের কে প্রণোদনা বেশি দিতে হবে,কারণ করোনা মহামারি দীর্ঘস্থায়ী হলে সারা বিশ্বে খাদ্যের জন্য হাহাকার শুরু হবে।তাই নিজেদের বাঁচার জন্যই সব সাধকের বড় সাধক আমাদের দেশের এ চাষাদের দিকে নজর দিতে হবে।

ফটো : শেখ অনিন্দ্যমিন্টু