Logo

ময়মনসিংহে করোনায় আক্রান্ত ২ শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী ! সুচিকিৎসা নিয়ে শঙ্কা

অনিন্দ্য বাংলা
রবিবার, মে ১০, ২০২০
  • শেয়ার করুন

মো: নজরুল ইসলাম : ময়মনসিংহ বিভাগে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিভাগের চার জেলায় আজ রোববার পর্যন্ত মোট ৬ হাজার ৩০৯টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তারমধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪২০ জন এবং মারা গেছেন আট জন।

এই বিভাগে ৬১ জন চিকিৎসক ও ৪৯ নার্সসহ মোট ২০৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মোট আক্রান্তের প্রায় ৫০ ভাগ স্বাস্থ্যকর্মী। কেবল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালেই প্রায় ১০০ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো. আবুল কাশেম জানান, এ বিভাগে ১০ মে পর্যন্ত চিকিৎসক ও নার্সসহ মোট যে ২০৯ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ময়মনসিংহ জেলায় মোট ৪০ চিকিৎসক, ৩৬ নার্সসহ ১২৯ স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে আবার কেবল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ৩২ জন চিকিৎসক, ৩০ জন নার্সসহ মোট ৯৭ জন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। এ ছাড়া নেত্রকোণায় পাঁচ চিকিৎসক, তিন নার্সসহ ১৭ স্বাস্থ্যকর্মী, জামালপুরে সিভিল সার্জনসহ ১২ চিকিৎসক এবং ১০ নার্সসহ ৪৫ স্বাস্থ্যকর্মী এবং শেরপুরে চার চিকিৎসকসহ ১৮ স্বাস্থ্যকর্মী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে নিজ কর্মস্থলে করোনায় আক্রান্তরা সুষ্ঠু চিকিৎসার সুযোগ না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে আইসোলেশনে থাকা চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের অন্তত পাঁচজন শ্বাসকষ্টে ভুগছেন। অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে টানাটানি, এক্সরে, ইসিজিসহ অন্যান্য ল্যাব পরীক্ষায় হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের। আক্রান্ত এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের অধিকাংশই নিজ আবাসস্থলের আইসোলেশনে রয়েছেন।

গত শুক্রবার সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক চিকিৎসকের নিজ বাসায় শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। দ্রুত তার এক্সরে, ইসিজি ও রক্তের বিভিন্ন পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িৎ কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি। পরে বিকেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা হয় হাসপাতালের ওয়ান স্টপ সার্ভিসে। এমন দাবি একাধিক চিকিৎসকের।

বিষয়টি নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ডা. মতিউর রহমান ভূইয়া বলেন, ‘সরকারের একই হাসপাতালে নন-কোভিড ও কোভিড রোগীদের চিকিৎসা করা ছাড়া উপায় নেই। বর্তমান ব্যবস্থায় চিকিৎসার জন্য রোগীদের চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে এবং সংক্রমণের হারও বাড়ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘কার্যকর ট্রায়াজের মাধ্যমে রোগীদের একই হাসপাতালের তিনটি বিভাগে- নন-কোভিড, সন্দেহযুক্ত কোভিড এবং কোভিডে বিভক্ত রাখা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ডায়াগনস্টিক সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে এবং নমুনা সংগ্রহের দিন প্রতিবেদন জমা দিতে হবে। এন্টিজেন-অ্যান্টিবডি ভিত্তিক দ্রুত পরীক্ষা সম্পর্কে চিন্তা করা জরুরি।’

এ বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় পরিষদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় করোনা মনিটরিং সেলের সমন্বয়ক ডা. এইচ এ গোলন্দাজ বলেন, ‘চিকিৎসকদের বিষয়ে জেলা প্রশাসনের আন্তরিকতা যথেষ্ট। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তহীনতায় আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন প্রতিনিয়ত আতঙ্কে ভুগছেন। এমনকি যারা সেবা দিচ্ছেন তারাও উৎকণ্ঠায় আছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালের নতুন যে ভবনটি করোনা ডেডিকেটেড করার কথা সেটি নিয়েও জটিলতা তৈরি হয়েছে। খুব দ্রুতই করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল তৈরি না হলে সিলেটের চিকিৎসক মরহুম মইনের ভাগ্যই বরণ করতে হবে এখানকার অনেক স্বাস্থ্যকর্মীকে।’

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. মো. জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘এক্সরে মেশিনটা ভারী হওয়ায় উপরে তুলতে সমস্যা হয়। তবে খুব শিগগিরই এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’