Logo

ময়মনসিংহে করোনা চিকিৎসায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই

অনিন্দ্য বাংলা
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২১, ২০২০
  • শেয়ার করুন

মো. নজরুল ইসলাম, ইসলাম, ময়মনসিংহ : প্রায় দেড় কোটি মানুষ অধ্যুষিত ময়মনসিংহ বিভাগের প্রাণকেন্দ্র কোভিড-১৯ সংক্রমণ ব্যাধির সুষ্ঠু ও উন্নত চিকিৎসার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেই। ১৯ এপ্রিল একদিনে ময়মনসিংহ জেলায় ১৫জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তন্মধ্যে সিটি কর্পোরেশন এলাকার ভাটিকাশরে এক গারো, পন্ডিত পাড়ায় এক ডাক্তার, দিগারকান্দা ও শিকারীকান্দা একজন করে ৪জন এবং মুক্তাগাছায়-২, ঈশ্বরগঞ্জে-১, নান্দাইলে-২, ফুলপুর ও হালুয়াঘাটে একজন করে মোট আক্রান্ত হয়েছে। ময়মনিসংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নকলার এক রোগীর নমুনা পরীক্ষায় করেনা সনাক্ত হয়েছে।

আগামী দিনে এই বিভাগে রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ডাক্তার, নার্স ও রোগীদের ভয়াবহ পরিস্থিতির আশংকা করছেন চিকিৎসকসহ বিভিন্ন সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ । তাই সম্ভাব্য ভয়াবহ অবস্থার পুর্বেই অতিরিক্ত রোগীর সুষ্ঠু চিকিৎসার প্রস্তুতি নেয়া এখনই জুরুরি। বিভাগের সর্বোচ্চমানের চিকিৎসাকেন্দ্র ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণে বিভাগীয় সদরের একমাত্র ভরসা সূর্যকান্ত (এস.কে) হাসপাতালটি ব্রিটিশ আমলের নির্মিত একটি জরাজীর্ণ ভবন। এই হাসপাতালে জোড়াতালি দিয়ে ৬০টি আইসোলেশন বেড বসানো হয়েছে এবং আরো ২০টি বেড বসানোর প্রস্তুতি চলছে। জরাজীর্ণ এই ভবনটি অনেকটা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, যেখানে রোগী ও চিকিৎসাবন্ধন পরিবেশ নেই। এস.কে হাসপাতালে রোগীদের জরুরি প্রয়োজনে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোনো সুযোগ নেই। ফলে সেখানে রোগী, ডাক্তার ও নার্স কেউই নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেছেন জেলা বি.এম.এ সভাপতি ও সাবেক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ অধক্ষ প্রফেসর ডাঃ মতিউর রহমান ভূঁইয়া। তাই উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলায় দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে, তন্মধ্যে একটিকে অস্থায়ীভাবে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা এখন সময়ের উপযুক্ত দাবী উল্লেখ করেছেন ডাঃ মতিউর রহমান ভূঁইয়া।

সারাবিশ্বের ন্যায় সংক্রমণ ব্যাধি কোভিড-১৯ রোগীদের মোকাবেলা করতে বাংলাদেশও হিমসীম খাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় সদরে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা সম্বলিত একটি করে কমপক্ষে ৫০০ শয্যার সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতাল নির্মাণ করা এখন সময়ের উপযুক্ত দাবী। বাংলাদেশ করোনা ছাড়াও সারা বছরই নানা ধরণের সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। কিন্ত সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের বিভাগীয় পর্যায়ে উন্নতমানের কোনো হাসপাতাল ও সরঞ্জাম নেই। নেই উন্নত প্রশিক্ষিত ডাক্তার নার্স ও অন্যান্য জনবল। বিভিন্ন রোগের চিকিৎসকদের দিয়ে জোড়াতালি দিয়ে চলছে সংক্রমণ রোগীর চিকিৎসা।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় পরিচালক স্বাস্থ্য ডাঃ মোঃ আবুল কাশেম জানান, বিভাগীয় সদরে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসা এবং আইসোলেশন বেড সংখ্যা বৃদ্ধি, ময়মনসিংহের দুটি মেডিকেল কলেজের মধ্যে একটিকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবার প্রস্তুত করার জন্য ভিডিও কনফারেন্সিং এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয়ের কাছে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এখন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিলেই এর বাস্তবায়ন কাজ শুরু হবে।

ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ (সিবিএমসিবি ) বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই ৩০টি বেড কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য দিয়েছে। রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ওই হাসপাতালটিকে কোভিড-১৯ হাসপাতাল করা হলে ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নানা অনুবিধার কথা জানিয়েছে। তার পরেও আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছি বলে জানান জেলা প্রশাসক।

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় পরিষদের ময়মনসিংহ বিভাগীয় করোনা মনিটরিং সেলের সমন্বয়ক, বি.এম.এ ময়শনসিংহ জেলা শাখা ও বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক ওনার্স এসোসিয়েশন, ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডাঃ এইচ. এ. গোলন্দাজ তারা নিজের ফেজবুকের এক স্ট্যাটাসে জানান, ‘ময়মনসিংহে দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে। দ্রুততম সময়ে যেকোন একটিকে কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করুণ।একটিতে নরমাল রোগী অন্যটিতে কোভিড।’

ডাঃ এইচ. এ. গোলন্দাজ তারা তার ফেজবুকের অপর স্ট্যাটাসে জানান, ‘অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে ময়মনসিংহে করোনা মোকাবিলায় প্রস্তুতি অপর্যাপ্ত যা আমাদের ময়মনসিংহবাসীর জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বৃটিশ আমলের পুরানো ৬০শয্যার এসকে হাসপাতালটি যা করোনা চিকিৎসার একমাত্র কেন্দ্র তা অবকাঠামোগত ভাবে দূর্বল, যেখানে আমাদের পার্শ্ববর্তী জেলা জামালপুরে ১৫০ শয্যার কোভিড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তার কার্যক্রম চলছে। সেখানে ময়মনসিংহে নূন্যতম ২০০ শয্যার আইসোলেশন সেন্টার স্থাপন করুন। আমলতান্ত্রিক জটিলতা সহ নানা সিদ্ধান্তহীনতা কাটিয়ে দ্রুততম সময়ে এগুলোর সমাধান দিন। দ্রুততম সময়ে সিদ্ধান্ত না নিলে ময়মনসিংহ বাসিদের ভুগতে হবে একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়।

জেলায় প্রতিদিন অসংখ্য স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন এবং পাশাপাশি দলবেঁধে স্বাস্থ্যকর্মীরা কোয়ারেন্টাইনে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কোভিড পজিটিভ স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য নূন্যতম আইসোলেসন সুবিধা নেই যা অত্যন্ত অমানবিক ও পীড়াদায়ক। সঙ্গত কারণেই সবাই বাড়িতে আইসোলেসনে থাকতে পারছেন না। এ সমস্যার দ্রুত সমাধানে আন্তরিক না হলে পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে। সুতরাং স্বাস্থ্যকর্মীদের আইসোলেশনের ব্যাপারে আন্তরিক হয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। একমাত্র আশার আলো পিসিআর ল্যাবটি। আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীগণ শত প্রতিকূলতার মাঝেও রাত দিন পরিশ্রম করছে এটা চালু রাখতে। আরও একটি পিসিআর মেশিন আনার ব্যবস্থা করুন। একটি সাবস্টিটিউট মেশিন থাকা প্রয়োজন। এটা ময়মনসিংহ বাসির প্রাণের দাবি। অনেক সময় নষ্ট হয়েছে বিধায় আর দেরি না করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুণ।’

এদিকে শহরতলীর চুরখাইয়ের উইনারপাড়ে কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ (সিবিএমসিবি ) বেসরকারি হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডঃ এম. করিম খান জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণার পর তার হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি তারা নিচ্ছেন। ইতিমধ্যেই ৩০টি বেড প্রস্তুত করা হচ্ছে। পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালটি কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য বরাদ্দ দেয়া নানা সমস্যার কথাও জানান তিনি। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগীয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিবিএমসিবি হাসপাতালটি ইতিমধ্যে পরিদর্শনও করেছেন। এখন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

ময়মনসিংহ বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি বর্ষিয়ান আইনজীবী প্রবীণ রাজনীতিবিদ সর্বজন শ্রদ্বেয় অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান জানান, সারাবিশ্বের ন্যায় সংক্রমণ ব্যাধি করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ হিমসীম খাচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে দেশের প্রতিটি বিভাগীয় সদরে উন্নতমানের চিকিৎসাসেবা সম্বলিত একটি করে কমপক্ষে ৫০০ শয্যার সংক্রমণ ব্যাধি হাসপাতাল নির্মাণ করা এখন সময়ের উপযুক্ত দাবী। বাংলাদেশ করোনা ছাড়াও সারা বছরই নানা সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। কিন্ত দেশে সংক্রমণ ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীদের বিভাগীয় পর্যায়ে উন্নতমানের কোনো হাসপাতাল নেই। নেই উন্নত প্রশিক্ষিত ডাক্তার নার্স ও অন্যান্য জনবল।

ময়মনসিংহে দুটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে তন্মধ্যে সিবিএমসিবিকে কোভিড-১৯ রোগীদের আইসোলেশন হাসপাতাল ঘোষণা এবং সেখানে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ডাক্তার ও নার্সদের থাকার সুব্যস্থা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনসহ স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টদের প্রতি সর্বস্তরের নাগরিক পক্ষে অনুরোধ জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান খান ।