Logo

সাহেদ গ্রেফতারের নেপথ্যে কাহিনী

অনিন্দ্য বাংলা
বুধবার, জুলাই ১৫, ২০২০
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক: করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট প্রদান, অর্থ আত্মসাতসহ প্রতারণার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। বুধবার সাতক্ষীরা সীমান্ত এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

র‍্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইং বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে গত ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। পরে রোগীদের সরিয়ে রিজেন্টের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়।

গ্রেফতার করা হয় ৮ জনকে। এরপর বৃহস্পতিবার রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদের প্রধান সহযোগী তারেক শিবলী গ্রেফতার করা হয়। হেফাজতে নেয়া হয় টিভি নাটকের অন্যতম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘টেলিহোম’র প্রধান ও সাহেদের ভায়রা মোহাম্মদ আলী বশিরকে।

দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

বৃহস্পতিবার প্রতারণা মামলার প্রধান আসামি সাহেদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে একটি চিঠি ইমিগ্রেশন পুলিশে দেয়া হয়। ইমিগ্রেশনকে দেয়া চিঠি পুলিশ উল্লেখ করে, ‘প্রতারণা মামলার আসামি সাহেদের বিরুদ্ধে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিনি যেন দেশের বাইরে যেতে না পারেন সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে’।

jagonews24

সাহেদ সম্পর্কে যা বলেছেন অভিযানের নেতৃত্বদানকারী ম্যাজিস্ট্রেট

রিজেন্ট হাসপাতালের নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনাকারী র‍্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, ‘করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসা এবং বাড়িতে থাকা রোগীদের করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ভুয়া রিপোর্ট প্রদান করতো রিজেন্ট হাসপাতাল। এছাড়াও সরকার থেকে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টেস্ট করার অনুমতি নিয়ে রিপোর্টপ্রতি সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার করে আদায় করতো তারা।

এভাবে জনগণের সাথে প্রতারণা করে মোট ৩ কোটি টাকার হাতিয়ে নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতাল। এই সমস্ত অপরাধ ও টাকার নিয়ন্ত্রণ চেয়ারম্যান সাহেব (রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহেদ) নিজে করতো।’

তিনি বলেন, ‘অনিয়ম, অপরাধ ও প্রতারণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো চেয়ারম্যান নিজেই ডিল করেছে, অন্যান্য কয়েকজন কর্মীও ছিল। চেয়ারম্যান পলাতক রয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হবে, জড়িত সবাইকে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি করা হবে।’

রিজেন্ট ও সাহেদের কুকর্ম বাংলাদেশকে কলঙ্কিত করেছে

ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে পৃথিবীর অন্য কোন দেশ এই ইতিহাস তৈরি করেছে বলে আমার জানা নেই। আমার ধারণা একমাত্র বাংলাদেশেই এই সমস্ত কিছু লোক টেস্টের নামে আমাদের দেশকে কলঙ্কিত করেছে।আমরা আশা করছি এই অপরাধের কারণে তাদের মারাত্মক শাস্তি হবে।

আমরা চাই না এই কোভিড-১৯ নিয়ে কেউ কোন প্রতারণার আশ্রয় নিক। আমরা এই অপরাধের সাথে এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শাহেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসুদসহ বেশকিছু কর্মকর্তা জড়িত রয়েছেন। একারণে আমরা ৮ জনকে আটক করেছি। তাদেরসহ জড়িত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে নিয়মিত ধারায় মামলা করা হবে। তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসবো।

সাতক্ষীরা সীমান্তে নারী ছদ্মবেশে যেভাবে গ্রেফতার হয় সাহেদ

নারী ছদ্মবেশে বোরকা পরিহিত অবস্থায় ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় অভিযান চালিয়ে বহুল আলোচিত রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সদস্যরা। আজ বুধবার ভোর ৫টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পদ্মশাখরা সীমান্তের লবঙ্গবতী খালের পাশ্ববর্তী সীমান্ত নদী ইছামতির তীর থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ড কর্নেল সরোয়ার বিন কাশেমের নেতৃত্বে তাকে আটক করা হয়। এ সময় তার দেহ তল্লাশি করে একটি অবৈধ পিস্তল, তিন রাউন্ড গুলি এবং একটি ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। সাহেদ করিমের গ্রামের বাড়ী সাতক্ষীরা নিউ মার্কেট পাশ্ববর্তী কামালনগর গ্রামে। তার পিতার নাম সিরাজুল করিম। তার মা সাফিয়া করিম ছিলেন সাতক্ষীরা জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে রাজধানী ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালের করোনা টেস্ট জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলাসহ মোট ৫৭টি মামলা রয়েছে।

দেবহাটা পদ্মশাখরা সীমান্ত থেকে গ্রেফতারের পর তাকে সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে আনা হয়। এ সময় সংক্ষিপ্ত আকারে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল সাংবাদিকদের জানান, গত ৭ তারিখে উত্তরা থানায় করোনা টেস্টের সনদ জালিয়াতি মামলার পর থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রতারক সাহেদ করিম আত্মগোপনে চলে যায়। এর পর থেকে সাহেদের গ্রেফতারে অভিযানে নামে র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৬ এবং পুলিশের সহযোগিতায় আজ ভোর ৫টা ১০মিনিটে অবৈধ ভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় বোরকা পরিহিত অবস্থায় সাতক্ষীরা দেবহাটা উপজেলার পদ্মশাখরা সীমান্তের লবঙ্গবতী খালের পার্শ্ববর্তী ইছামতি নদীর তীরের একটি নৌকা থেকে তাকে আটক করা হয়। এসময় ভাল সাঁতার জানায় পালিয়ে যায় নৌকার মাঝি। র‌্যাবের পক্ষ থেকে জানানো হয়, সাতক্ষীরার শীর্ষ এক চোরাকারবারি ও সীমান্তের বাচ্চু দালালের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিল সাহেদ করিম। বাচ্চু দালালকে গ্রেফতারের ব্যাপারেও খোঁজ খবর নিচ্ছে র‌্যাবের বিশেষ গোয়েন্দা শাখা। তিনি আরও জানান, সাহেদ আত্মগোপনের পর থেকে চুলের রং করে এবং গোঁফ কেটে ঘন ঘন নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে আসছিল। এমনকি মাথা ন্যাড়া করে চুল ফেলে দেওয়ার পরিকল্পনাও ছিল সাহেদের। ইতিমধ্যে সাহেদের সহযোগী রিজেন্ট গ্রুপের এমডি পারভেজসহ ৯/১০জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সকাল ৭টা ৫৮ মিনিটে সাহেদকে সাতক্ষীরা স্টেডিয়াম থেকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়। বর্তমানে সাহেদ করিমকে র‌্যাব সদর দপ্তরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

গত ৬ জুলাই করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার অভিযোগে র‌্যাব উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায়। এরপর রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখা সিলগালা করে দেয়া হয়। ৭ জুলাই করোনা পরীক্ষা না করেই সার্টিফিকেট প্রদানসহ বিভিন্ন অভিযোগে রিজেন্ট হাসপাতালের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করে র‌্যাব।

মামলায় রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এজাহারে। এরপর থেকেই পালিয়ে ছিলেন সাহেদ। তাকে গ্রেফতারে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় র‌্যাব। অবশেষে সাতক্ষীরা থেকে তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় র‌্যাব।

উল্লেখ্য, সাহেদ করিমের মা ছাফিয়া করিম ছিলেন সাতক্ষীরা আসমানি কিন্ডার গাডেন স্কুলের শিক্ষক ও জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন সাফিয়া করিম। বাবা ছিলেন একজন ব্যাবসায়ী। বাড়ির জমি জায়গা ও মৎস্য ঘের দেখাশুনা করতেন তিনি। ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে তিনি সাতক্ষীরা কামানগর গ্রামের ভিটা বাড়ির জায়গা জমি দোকান পাট বিক্রি শুরু করেন। পরবর্তীতে ২০১০ সালের দিকে শহরের ভিটেবাড়ী বিক্রি করে সাতক্ষীরা ছেড়ে সম্পূর্ণ ঢাকাতে অবস্থান নেন সাহেদের বাবা ও মা। মা ছাফিয়া করিমের মৃত্যুর পর সাহেদ ও তার বাবা সিরাজুল করিম ঢাকাতেই অবস্থান করতেন। সাতক্ষীরাতে খুব বেশি পদচারণা ছিল না সাহেদের। সাতক্ষীরার কেউ তাকে তেমনভাবে চিনতেনও না। সাহেদ করিম নিজের আইডি কার্ডের নাম পরিবর্তন করে ঢাকাতে সাহেদ আহম্মেদ পরিচয় দিতেন। তিনি বিভিন্ন সময় নিজেকে সাবেক সেনা কর্মকর্তা পরিচয় দিতেন। প্রতারণার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লক্ষ লক্ষ টাকা বাগিয়ে নিয়েছেন এমন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তার নিকট রাজধানী ঢাকার ২৫টির মতো প্রতিষ্ঠান টাকা পাবে বলে জানা গেছে। সাহেদ জেলও খেটেছেন এক বার। খুব অল্প সময়ের মধ্যে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান সাহেদ করিম। তিনি রিজেন্ট হাসপাতালের করোনা রোগীর টেস্টের নামে প্রতারণা করে সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। করোনা পজেটিভ হয়েও টাকার বিনিময়ে কাউকে দিয়েছেন করোনা নেগেটিভ সাটিফিকেট আবার করোনা আক্রান্ত না হয়েও কাউকে দিয়েছেন ভুয়া করোনা আক্রান্ত সনদ। সাহেদের গ্রেফতারে সাতক্ষীরার সাধারণ মানুষ মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। অনেকে ভয়ঙ্কর এই প্রতারক সাহেদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করেছেন।

গ্রেপ্তারের পর হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হলো সাহেদকে

হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয় সাহেদকে- সংগৃহীত ছবি

হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয় সাহেদকে- সংগৃহীত ছবি

করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদকে হেলিকপ্টারে করে ঢাকায় আনা হয়েছে।

বুধবার সকাল সোয়া ৯টার দিকে সাহেদকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের পুরাতন বিমানবন্দরে আনা হয়। তাকে র‌্যাব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এর আগে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। কোমরপুর সীমান্ত দিয়ে নৌকায় করে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। এ সময় তিনি জিন্সের প্যান্ট ও নীল রঙের শার্টের ওপর কালো রঙের বোরকা পরে ছিলেন। এমন অবস্থায় বুধবার ভোর ৫টা ২০ মিনিটে বিশেষ অভিযানে তাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

গ্রেপ্তারের পর সাহেদকে ঢাকায় নেওয়ার আগে বুধবার সকালে র‌্যাবের এডিজি (অপারেশন) কর্নেল তোফায়েল অহমেদ সাতক্ষীরা স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের জানান, সাহেদ গ্রেপ্তার এড়াতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। যেমন তিনি গোফ কেটে ফেলেছিলেন, সাদা চুল কালো করেছিলেন। এছাড়া পালানোর সময় তিনি বোরকা পরে ছিলেন।

র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতে পালানোর আগেই তাকে ধরতে আমরা সক্ষম হয়েছি। ভারতে পালিয়ে তার মাথা ন্যাড়া করার পরিকল্পনা ছিল।’

আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সাহেদ

বুধবার ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ছবি: কামরুজ্জামান

বুধবার ভোরে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদীর তীর সীমান্ত এলাকা থেকে সাহেদকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ছবি: কামরুজ্জামান

করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট, অর্থ আত্মসাৎসহ নানা প্রতারণার অভিযোগে অভিযুক্ত রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদকে বুধবার ভোরে সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার বলেন, র‌্যাবের বিশেষ অভিযানে বুধবার ভোরে সাড়ে ৫টার দিকে সাতক্ষীরার সীমান্ত থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে হেলিকপ্টারে ঢাকায় আনা হচ্ছে।

তবে এবার প্রথম নয় এর আগেও প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন সাহেদ। জেলেও ছিলেন তিনি। জেল থেকে বেরিয়ে ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে চালাতে থাকেন অপকর্ম।

সূত্র বলছে, সাহেদের অপকর্মের হাতেখড়ি চারদলীয় জোট সরকারের আমলে। ওই সময়ে জামায়াত নেতা ও যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলী এবং তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠতা ছিল। মামুনের হাত ধরে হাওয়া ভবন পর্যন্ত পৌঁছে যান এই প্রতারক। এরপর প্রতারণার নানা ব্যবসা খুলে বসেন তিনি। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মামুনের সঙ্গেই জেলে যেতে হয় তাকে। জেল থেকে বেরিয়ে ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয়ে চালাতে থাকেন অপকর্ম। এভাবে হয়ে যান শত শত কোটি টাকার মালিক।

দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, তিনি বীরদর্পে সচিবালয়ে ঘুরে বেড়াতেন। সচিব থেকে শুরু করে বড় কর্তাদের অফিসে দাপটের সঙ্গে কথা বলতেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক সূত্র বলছে, ওই ব্যক্তি কয়েক বছর আগে পুলিশ সদর দপ্তরে নানা পরিচয়ে নিয়মিত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কক্ষে ঘোরাঘুরি করতেন।

জেল থেকে বেরিয়ে সাহেদ ২০১১ সালে ধানমন্ডিতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে ‘বিডিএস ক্লিক ওয়ান’ নামে এমএলএম ব্যবসা শুরু করেন। পরে গ্রাহকের অন্তত ৫০০ কোটি টাকা নিয়ে চম্পট দেন। মেজর ইফতেখার করিম চৌধুরী নামে ওই প্রতারণা করেন তিনি। প্রতারণার শিকার লোকজন তাকে খুঁজতে শুরু করলে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ধানমন্ডি থানায় কয়েকটি মামলা হয়। গোপনে দেশে ফিরে মামলাগুলোয় জামিন নিয়ে আবার শুরু করেন একই ব্যবসা।

এরপর একে একে রিজেন্ট হসপিটাল লিমিটেড (মিরপুর), রিজেন্ট হসপিটাল লিমিটেড (উত্তরা), ঢাকা সেন্ট্রাল কলেজ, রিজেন্ট ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ও হোটেল মিলিনার মালিক হন সাহেদ। সবশেষে দেশে চলমান করোনা দুর্যোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা আর টেস্ট নিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেন।

সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার কোমরপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম। তিনি একজন হোটেল ব্যবসায়ী। ফজরের নামাজের জন্য গিয়েছিলেন মসজিদে। নামাজ শেষ হওয়ার পরপরই তাদের কানে চিৎকার ভেসে আসতে থাকে। শুরু হয় হইচই। ঘটনা কী দেখার জন্য দৌড়ে যান সবাই। গিয়ে যা দেখলেন সেটি তারা কল্পনাও করেননি আগে। সারাদেশের আলোচিত প্রতারক সাহেদ করিমকে ধরে ফেলেছে র‌্যাব।

দেবহাটা উপজেলার শাখরা কোমরপুর বেইলি ব্রিজের পাশে নর্দমার মধ্যে থেকে বোরকা পরা অবস্থায় সাহেদকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তার কাছ থেকে একটি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।

ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে কোমরপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, আমরা যখন নামাজ শেষ করেছি সেই মুহূর্তেই তিনটি র‌্যাবের গাড়ি খুব গতিতে চলে গেল। ২-৩ মিনিট পরই আওয়াজ আসতে লাগলো আল্লাহু আকবার, ধরে ফেলেছি, ধরে ফেলেছি। আমিসহ মসজিদের মুসল্লি ও এলাকার বাসিন্দারা দৌড়ে ঘটনাস্থলে আসি কী ঘটেছে দেখার জন্য। গিয়ে দেখি বর্তমানের আলোচিত প্রতারক সাহেদ করিমকে ধরে ফেলেছে র‌্যাব। হাতে হাতকড়া পরাচ্ছে তখন। কাছে একটি পিস্তলও পেয়েছে।

তিনি ওই ব্রিজের পাশে একটি ছোট ড্রেন দেখিয়ে বলেন, ওইখানে একটি নর্দমার মতো রয়েছে। সেই ড্রেনের ভেতরে বোরকা পরে শুয়ে ছিলেন প্রতারক সাহেদ। শোয়া অবস্থায় তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় তার পরনে শার্ট, প্যান্ট ও বোরকা ছিল। কোমরে ছিল একটি পিস্তল। পরে র‌্যাব উপস্থিত জনতার সঙ্গে কথা বলে ও ছবি তুলে তাকে এখান থেকে নিয়ে যায়।

সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী বুধবার সকাল ৯টার দিকে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ঢাকায় এসে পৌঁছেছে।