Logo

ইতিহাসের গল্প:ধনবাড়ি প্যালেস

অনিন্দ্য বাংলা
বুধবার, মার্চ ২৭, ২০২৪
  • শেয়ার করুন

ফয়সাল বোহেমিয়ান: নবাব বাড়িতে ১০০ টাকা করে টিকেট কেটে প্রবেশ করলাম।বাংলার ইতিহাসের সাথে জড়িত এই নবাব বাড়ি।বিশাল এরিয়া নিয়ে গড়ে উঠেছিলো ঐতিহাসিক এই নবাব বাড়ি।যার প্রত্যেকটা ধূলিকনা সাক্ষী বিভিন্ন ঘটনার।গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকলাম আমরা ঢুকতেই হাতের বামপাশে দিখা মিললো অফিস ভবনের।সকল প্রকার বিচারকাজ সহ সকল দাপ্তরিক কাজ এই বিশাল জায়গা জুড়েপরিচালনা করত।

ইতিহাস থেকে যতটুকু জানতে পারি   নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর প্রথম পুরুষ শাহ আতিকুল্লাহ ইরাকের  বাগদাদ হতে দিল্লীতে আসেন।

তৎকালীন দিল্লীর বাদশাহ তার কাছে মুরীদ হন এবং তৎকালীন পূর্ব বাংলায় বসবাসের জন্য জায়গীর প্রদান করেন। প্রথমে তিনি পাবনা জেলার নাকালিয়াতে বসবাস করতে থাকেন। পরবর্তী বংশধরগণ নাকালিয়া হতে ঢাকা জেলার হাসমিলানে চলে আসেন। শাহ আতিকুল্লাহ‘র অধস্তন বংশধর শাহ সৈয়দ খোদাবখশ। তার এক ছেলে সৈয়দ মোহাম্মদ শাহ, এক মেয়ে সাইয়িদা তালিবুন নেছা চৌধুরানী। পাঠানদের পতনের যুগে তুর্কীদের জমিদারী ছিল ধনবাড়ীতে। এ বংশের উত্তর পুরুষ ছিলেন রাজা আলী খাঁ সাহেব।

টাঙ্গাইল জেলা। পর্ব-০১

বংশাই ও বৈরান নদীর মাঝখানে অপূর্ব নৈসর্গিক প্রকৃতির মাঝে এ বাড়ির অবস্থান। চন্দ্র বংশীয় রাজা যশোধর সাবেক পুখুরিয়া (বর্তমানে ধনবাড়ি এই পরগণার অন্তর্গত ছিলো) শাসক ছিলেন মোগল আমলে। তার সেনাপতি ছিলেন গৌড়ের সুলতানের ওমরাহ ধনুয়ার খাঁ। তিনি কৌশলে রাজ্যটি দখল করে পুত্র ইস্পিঞ্জার খাঁকে দিয়েছিলেন।

টাঙ্গাইল ধনবাড়ী প্যালেস। ধনবাড়ী ,টাঙ্গাইল।

এই হলো নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস-এবার নওয়বার আলীর ইতিহাস জানা যাক।

ধনবাড়ী জমিদার বাড়ি খান বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর অমর কৃর্তি। এই নামটির সাথে আমাদের সকলেরই পরিচয় কম-বেশি থাকার কথা। কারণ এই ব্যক্তি ছিলেন নাথান কমিটির একজন সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, রাষ্ট্রভাষা বাংলা করার প্রস্তাবক এবং ব্রিটিশ সরকারের প্রথম মুসলিম মন্ত্রী। ভারতীয় উপমহাদেশে নওয়াব আলী নানাবিধ অবদান রেখে গেছেন। ব্রিটিশ সরকারের কাছে তিনি খান বাহাদুর, নওয়াব, সি.আই.ই এবং নওয়াব বাহাদুর উপাধি পেয়েছিলেন।

সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ লর্ড রোনাল্ডসকে আমন্ত্রণ করার জন্য জমিদার বাড়িটি তৈরি করেছিলেন। ব্রিটিশ লর্ড সে সময় স্টিমার দিয়ে বৈরান নদীর কয়ড়া ঘাটে আসেন। জানা যায়, সে সময় ব্রিটিশ লর্ডকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ৩০টি হাতির বহর নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।

এ জমিদার বাড়ির রয়েছে একটি সুদীর্ঘ ইতিহাস। ধারণা করা হয়, মোগল স¤্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ধনপতি সিংহকে পরাজিত করে মোগল সেনাপতি ইস্পিঞ্জর খাঁ ও মনোয়ার খাঁ ধনবাড়ীতে জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁদের কয়েক পুরুষ পরের নবাব ছিলেন সৈয়দ জনাব আলী। সৈয়দ জনাব আলী ছিলেন সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর বাবা। তিনি তরুণ বয়সে মারা যান। নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী বিয়ে করেন বগুড়ার নবাব আবদুস সোবহানের মেয়ে আলতাফুন্নাহারকে। আলতাফুন্নাহার ছিলেন নিঃসন্তান।

তাঁর মৃত্যুর পর নবাব বিয়ে করেন ঈশা খাঁর শেষ বংশধর সৈয়দা আখতার খাতুনকে। নওয়াব আলী চৌধুরীর তৃতীয় স্ত্রীর নাম ছিল সকিনা খাতুন। নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯২৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। নবাব ওয়াকফ নামায় তাঁর তৃতীয় স্ত্রীর একমাত্র ছেলে সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী এবং মেয়ে উম্মে ফাতেমা হুমায়রা খাতুনের নাম উল্লেখ করে যান। সৈয়দ হাসান আলী চৌধুরী পরবর্তীকালে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের শিল্পমন্ত্রী নির্বাচিত হন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৮ সালেও তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ১৯৮১ সালে মৃত্যুবরণ করেন। এ জমিদারবাড়ির বর্তমান উত্তরাধিকারী তাঁর একমাত্র সন্তান সৈয়দা আশিকা আকবর।

অফিস ভবনের সামনে থেকে আমরা হাটা শুরুকরলাম এবার আমাদের গন্তব্য দক্ষিন দিকের প্রাচীর পেরিয়ে মূল বাসভবনের দিকে।এটিই মূলত নবাব মঞ্জিল বা নবাব প্যালেস।চার গম্বুজ বিশিষ্ট এই মনোরম দৃশ্যের প্যালেস দেখে যে কেউ এর প্রেমে পরতে বাধ্য।। ।নবাব প্যালেসের কার্নিশে রয়েছে নানা ধরনের লতাপাতার নকশা। চারটি বৃহৎ কক্ষ ও কিছু ক্ষুদ্রাকার কক্ষ নিয়ে এই ভবনটি গঠিত।এ ভবনে বহিরাগত কারো প্রবেশের অনুমতি নেই।

তারপর অনেক সময় কেটে গেছে, পৃথিবী বদলেছে, বদলেছে শাসন ব্যবস্থা। বাংলাদেশেও এখন আর নেই জমিদারি শাসন ব্যবস্থা। ধনবাড়ীও তার ব্যতিক্রম নয়। জমিদার নেই, কিন্তু চুন-সুরকির নওয়াব প্যালেস ঐশ্বর্যে ও ঐতিহ্যে ঠিকই আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে। অপূর্ব স্থাপত্যকর্মের কারণে ক্রমে জমিদার বাড়িটি পরিণত হতে থাকে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় স্থানে। তাই নবাবের উত্তরাধিকারীরা জমিদার বাড়িতে গড়ে তোলেন পিকনিক স্পট। যা নবাব সৈয়দ হাসান আলী রয়্যাল রিসোর্ট হিসেবে বেশ খ্যাতি লাভ করেছে। রিসোর্টটি দেখাশোনার দায়িত্বে আছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাইট হাউস গ্রুপ।

প্রাচীরঘেরা চত্বর অংশে আবাসিক ভবন দুটি ছাড়া আরো আছে ফুলের বাগান, চিড়িয়াখানা, বৈঠকখানা, নায়েবঘর, কাচারিঘর, পাইকপেয়াদা বসতি এবং দাস-দাসি চত্বর। দর্শনার্থীদের জন্য প্রাসাদের ভেতরের বেশ কয়েকটি কামরা ঘুরে দেখার সুযোগ আছে।

প্যালেস থেকে আমরা পূর্ব দিকে হাটা শুরু করলাম,সান বাধানো একটা ঘাট তার সামনেই বিশাল একটা দিঘী এই দিঘীর আয়তন নাকি ৩০ বিঘা।একসময়ের জৌলুশে পরিপূর্ন দিঘী আজ কতটা অবহেলায় পরে আছে আহারে।