Logo

চীন ও আফিম !

অনিন্দ্য বাংলা
শনিবার, মার্চ ৩০, ২০২৪
  • শেয়ার করুন

সপ্তম ও অষ্টম শতকে চীনে আফিমের প্রচলন করেছিলেন তুর্কি এবং আরব বণিকেরা। কিন্তু চীনারা ওষুধ হিসাবে আফিমের ব্যবহার করতেন। নেশার জিনিস হিসাবে আফিমের ব্যবহার তাদের কাছে সম্পূর্ণ অজানা ছিল।

কিন্তু ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে চীনে আফিমের ব্যবহার মারাত্মক রকম বেড়ে গিয়েছিল। ফলে চীনে আফিমের চাহিদারও বৃদ্ধি ঘটেছিল। হঠাৎ কেন চীনের মানুষ আফিমের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতে আরম্ভ করলেন এবং আফিমের চাহিদা চীনে বাড়িয়ে দিলেন। এর একটা সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে।

  • (১) ইংল্যান্ড রুদ্ধদ্বার চীনকে উন্মুক্ত করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। তাকে মদত দিয়েছিল অন্যান্য পাশ্চাত্য শক্তিবর্গ। ইংল্যান্ড চীনের সাথে একটি বাণিজ্যিক ভারসাম্য গড়ে তুলতে চেয়েছিল। ব্রিটিশ সহ অন্যান্য পাশ্চাত্য বণিকরা সকলেই চীনের থেকে দ্রব্য ক্রয় করে রৌপ্যের মাধ্যমে তার দাম মেটাত।
  • (২) কিন্তু পাশ্চাত্য বণিকদের কাছে বিষয়টি লাভজনক ছিল না। তাঁরা তাদের দেশে উৎপাদিত পণ্যের বিনিময়ে দ্রব্য ক্রয় করতে আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু চীনারা কখনোই পশ্চিমি পণ্য ক্রয় করতে আগ্রহী ছিল না, যেহেতু তাদের নিজের দেশে নানা ধরনের পণ্যসামগ্রী উৎপাদিত হত।
  • (৩) সুতরাং চীনের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখার জন্য ও চীন থেকে পণ্য ক্রয় করে রপ্তানির জন্য, পশ্চিমি বণিকদের রৌপ্য দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

কিন্তু ব্রিটিশ ও আমেরিকান বণিকেরা নিজেদের লাভের মাত্রা বাড়ানোর জন্য এক অভিনব উপায় বের করলেন। তাঁরা চীনের অভ্যন্তরে আফিম চোরাই চালান করতে লাগলেন। এই চোরাই চালান আরম্ভ হয়েছিল ১৭৮০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ। ইংরেজ বণিকেরা অত্যন্ত সস্তায় আফিম ক্রয় করতেন ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মাধ্যমে ভারতবর্ষের বাংলাদেশ থেকে। আমেরিকান বণিকেরা কিনতেন তুরস্ক থেকে।

  • (১) আফিমের চোরাই পাচারের ফলে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই চীনের মানুষ আফিমের নেশায় আসক্ত হয়ে পড়লেন। চীনে আফিমের বেআইনি ব্যবসা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পেতে লাগল। আফিম গ্রহণ করার পরিবর্তে চীনারা ইংরেজ বণিকদের চা, রেশম, চীনামাটির বাসন ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী দিতে লাগলেন।
  • (২) কিন্তু আফিমের চাহিদা চীনে এত দ্রুত হারে বৃদ্ধি পেতে লাগল যে, এত সব জিনিস দিয়েও বাণিজ্যিক ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হল না। তখন চীনারা রৌপ্য দিয়ে আফিম ক্রয় করতে লাগলেন। কিছুদিন আগেও চীনা বণিকেরা রূপার বিনিময়ে নিজের দেশের পণ্যসামগ্রী বিদেশি বণিকদের কাছে বিক্রি করত।
  • (৩) কিন্তু প্রচুর পরিমাণে আফিম আমদানি করতে গিয়ে তাদের নিজের দেশের রৌপ্য বিদেশে চলে যেতে লাগল। বিদেশি বণিকদের দ্বারা চীনে আফিম পাচারের ফলে একদিকে নেশায় আসক্ত চীনাদের নৈতিক অধঃপতন ঘটল, অন্যদিকে চীনের অর্থনীতি যৎপরোনাস্তি ক্ষতিগ্রস্ত হল।

কিছুদিনের মধ্যেই মাঞ্চু সরকার বেআইনি আফিম ব্যবসার মারাত্মক কুফলের কথা উপলব্ধি করল। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে তৎকালীন চীন সম্রাট চিয়া চিং চীনে আফিমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করলেন।

কিন্তু ততদিনে প্রচুর সংখ্যক চীনা আফিমে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং অসংখ্য ব্যবসায়ী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত রাজকর্মচারী এই অনৈতিক ব্যবসার সাথে নিজেদের যুক্ত করে বিরাট পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছিলেন। ফলে এই নিষিদ্ধকরণ চীনে আফিমের প্রবেশ বন্ধ করতে পারল না। চোরাই চালান এবং উৎকোচ আফিম ব্যবসার নিষিদ্ধকরণকে অর্থহীন প্রতিপন্ন করেছিল।

  • (১) চীনে বেআইনি আফিম ব্যবসা অপ্রতিহত গতিতে চলতে লাগল। একটি পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, নিষিদ্ধকরণের পর চীনে আফিমের আমদানি আরও অনেক পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল। ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে চীনে আমদানিকৃত আফিমের পরিমাণ ছিল ২০০০ পেটি, ১৮২০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ এই পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১০,০০০ পেটি।
  • (২) ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রায় ২০,০০০ পেটি এবং ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে চীন ৪০,০০০ পেটি আফিম আমদানি করেছিল। এক-একটি পেটিতে ১৪০ থেকে ১৬০ পাউন্ডের মতো আফিম থাকত। এই বিপুল পরিমাণ আফিম আমদানি করতে গিয়ে চীনের রৌপ্য ভাণ্ডার শেষ হতে থাকল। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় ২০ মিলিয়ন আউন্স রূপা বিদেশে চলে গিয়েছিল।

১৮২৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চীন ৩৮ মিলিয়ন স্পেনীয় ডলার রৌপ্যের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানি করতে বাধ্য হয়েছিল। ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ চীনের সমগ্র আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে শতকরা ৫৭ ভাগ ছিল আফিম।

এইভাবে চীনের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে পড়েছিল। এই পঙ্গু অর্থনীতির চাপ এসে পড়েছিল মূলত কৃষকশ্রেণীর উপর। প্রচুর পরিমাণে রৌপ্য দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ফলে, কৃষিপণ্যের মূল্য হ্রাস পেতে আরম্ভ করেছিল।

  • (১) ভূস্বামী এবং কর আদায়কারীরা নিজেদের আয় এবং জীবনযাত্রার মান যাতে নীচে না নামে, সেইজন্য কৃষকদের থেকে কর আদায়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দিল। ফলে চীনের সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতিতে এক নয়া সংকট দেখা দিল।
  • (২) এই সংকটের ফলশ্রুতি হিসাবে চিনে কৃষক বিদ্রোহের এক নতুন আবর্তের আবির্ভাব ঘটল। মাঞ্চু সরকার বিরোধী অভ্যুত্থান ঘন ঘন হতে লাগল ১৮১০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে একদল বিদ্রোহী পিকিং-এর রাজদরবার আক্রমণ করেছিল।
  • (১) ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ ক্যান্টন অঞ্চলে বিদেশি বণিক এবং চীনা কর্তৃপক্ষের মধ্যে সম্পর্কের চূড়ান্ত অবনতি ঘটেছিল। মাঝেমধ্যেই দুপক্ষ ছোটখাটো সংঘর্ষে লিপ্ত হত। সাধারণত বকেয়া ঋণ এবং চীনাদের বিচারব্যবস্থা নিয়েই ঝামেলা হত।
  • (২) ১৮৩৪ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার লর্ড নেপিয়ার নামে জনৈক প্রতিনিধিকে চীনে পাঠায়। নেপিয়ার ব্রিটিশ সংস্থাগুলিকে অন্যান্য বিদেশি সংস্থার থেকে বেশি সুযোগ-সুবিধা দানের জন্য ক্যান্টন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানান। কিন্তু নেপিয়ারের আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়।

১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে মাঞ্চু শাসক বৈদেশিক বাণিজ্যকে নিয়ন্ত্রিত করার জন্য এবং আফিমের চোরা-কারবার বন্ধ করার উদ্দেশ্যে কতকগুলি কঠোর আইন করতে বাধ্য হন। সেগুলি হল –

  • (১) কোনো বিদেশি যুদ্ধজাহাজ চীনে প্রবেশ করতে পারবে না।
  • (২) বিদেশি ফ্যাক্টরিগুলিতে কোনো বন্দুক বা অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র রাখা চলবে না।
  • (৩) বিদেশিদের যাবতীয় নৌকা ও জাহাজকে চীনে রেজিস্ট্রি করাতে হবে।
  • (৪) প্রতিটি বিদেশি ফ্যাক্টরিতে চীনা-ভৃত্যের সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হবে।

তা সত্ত্বেও আফিমের বেআইনি ব্যবসা বন্ধ করা গেল না। এই পরিস্থিতিতে মাঞ্চু শাসকদের নিজেদের স্বার্থরক্ষার তাগিদে আফিমের চোরাই চালান বন্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।

  • (১) লিন-সে-সু নামে এক দৃঢ়চেতা দেশপ্রেমিক রাজকর্মচারীকে ক্যান্টনের বিশেষ কমিশনার নিযুক্ত করা হল। লিন ছিলেন একজন পণ্ডিত ব্যক্তি। সমসাময়িক ঘটনাবলী, পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যায় তাঁর প্রগাঢ় উৎসাহ ছিল।
  • (২) তিনি কখনোই পশ্চিমিদের প্রতি সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেন নি। কিন্তু পাশ্চাত্য বণিকদের অসৎ কার্যাবলীর জন্য তিনি সর্বদাই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন।

বেআইনি আফিম ব্যবসা বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ

  • (১) ১৮৩৯ সালের ১০ মার্চ বিশেষ কমিশনার হিসাবে ক্যান্টন পদার্পণ করেন ৫৪ বছর বয়সী লিন-সে-সু। তিনি বেআইনি আফিম ব্যবসা বন্ধ করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের পক্ষপাতী ছিলেন। কমিশনার লিন ছিলেন পুরোনো চীনের একজন দৃষ্টান্তমূলক ব্যক্তিত্ব।
  • (২) ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি চু-জেন এবং ১৮১১ খ্রিস্টাব্দে চিন-শি ডিগ্রি লাভ করেন। বিভিন্ন দায়িত্বশীল সরকারি পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা তাঁর ছিল। হানলিন অ্যাকাডেমির প্রবন্ধক, উন্নান প্রাদেশিক পরীক্ষার আধিকারিক, চেকিয়াং-এর সার্কিট প্রধান ও লবণ নিয়ামক, কিয়াংশুর বিচারবিভাগীয় ও অর্থনৈতিক কমিশনার, হু-কোয়াং-এর গভর্নর জেনারেল ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পদ তিনি কৃতিত্বের সঙ্গে অলঙ্কৃত করেছিলেন।
  • (৩) ৫৪ বছর বয়সে তিনি সাম্রাজ্যিক কমিশনার পদে উন্নীত হন। লিন তাঁর স্পষ্টবাদিতা, সততা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। এই সমস্ত গুণাবলীর জন্য তাঁকে বলা হত “লিন- নীল আকাশ” (Lin the blue sky)। অর্থাৎ তাঁর চরিত্র ছিল নীল মতোই নির্মল ও পরিচ্ছন্ন। Vios ছিল নীল আকাশের

ক্যান্টনের বিশেষ কমিশনার পদের দায়িত্ব গ্রহণের পর লিন উয়ে-হুয়া অ্যাকাডেমিতে তাঁর প্রধান কার্যালয় স্থাপন করেন।

লিন কর্তৃক আফিম ব্যবসা বন্ধ করার প্রতিজ্ঞা

  • (১) কমিশনার লিন-সে-সু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে আফিম সমস্যার সমাধান না করে তিনি ক্যান্টন পরিত্যাগ করবেন না । বেআইনি আফিম ব্যবসা বন্ধ করার সমস্যা সম্পর্কে তিনি সচেতন ছিলেন। লিন জানতেন চীনে আফিম ব্যবসা বন্ধ করার অর্থ পাশ্চাত্যের বিশেষত ইংল্যান্ডের বণিকদের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যাওয়া।
  • (২) ব্রিটেনের মর্যাদা ও ক্ষমতা সম্পর্কেও তাঁর স্পষ্ট ধারণা ছিল। তথাপি যুদ্ধের ঝুঁকি নিয়েও লিন চীনে আফিম ব্যবসা বন্ধ করতে চেয়েছিলেন। প্রথমে তিনি অসৎ চীনা আফিম ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে প্রচার শুরু করেন, এবং এই প্রচার বেশ সাফল্য লাভ করেছিল।
  • (৩) ১৮৩১ সালের ১২ মে’র মধ্যে প্রায় ১৬০০ আইন লঙ্ঘনকারী অসৎ চীনা আফিম ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং প্রচুর পরিমাণ আফিম সরকার তাদের কাছ থেকে বাজেয়াপ্ত করে নেয়। অবৈধ আফিম বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত অসৎ রাজকর্মচারীদের কঠোর শাস্তি দিতেও কুণ্ঠিত হননি লিন।

আফিম ব্যবসা বন্ধ করার ক্ষেত্রে লিনের সমস্যা

  • (১) কিন্তু বিদেশি চোরাচালানকারীরা তাঁর সামনে কঠিনতর সমস্যা সৃষ্টি করেছিল। লিন-সে-সু ম্যাকাও-এর বিদেশি সংবাদপত্রগুলি এবং বিদেশিদের ভূগোল সংক্রান্ত বিভিন্ন লেখাপত্র অনুবাদ করিয়ে পশ্চিম সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে চেয়েছিলেন।
  • (২) এমনকি তিনি মিশনারি চিকিৎসক ড. পিটার পার্কারকে ভ্যাটেল রচিত আন্তর্জাতিক আইন (International Law)-এর তিনটি অনুচ্ছেদ তাঁর জন্য অনুবাদ করতে অনুরোধ করেছিলেন। এই অনুচ্ছেদগুলির আলোচ্য বিষয় ছিল চোরাইচালান নিষিদ্ধ করা ও যুদ্ধ ঘোষণা করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের অধিকার।

আফিম ব্যবসা বন্ধের উদ্দেশ্যে ইংল্যাণ্ডের রানী কে চিঠি

  • (১) তিনি দুই বার রানি ভিক্টোরিয়ার সঙ্গে চিঠি মারফত যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছিলেন। তবে এই দু’টি চিঠির একটিও সম্ভবত কোনোদিনই ইংল্যান্ডের রানির হাতে গিয়ে পৌঁছায় নি।
  • (২) দ্বিতীয় চিঠিটিতে আবেগদীপ্ত ভাষায় লিন রানিকে লিখেছিলেন, “মনে করুন অন্য দেশের লোকেরা ইংল্যান্ডে বিক্রির জন্য আফিম নিয়ে যাচ্ছে এবং আপনার দেশের লোকদের সেগুলি কিনে নেশাগ্রস্ত হতে আসক্ত করে তুলছে; আপনার সম্মানিত শাসক নিশ্চয়ই এ ঘটনাকে গভীরভাবে ঘৃণা করবেন এবং এর বিরুদ্ধে তিক্ত প্রতিবাদ জানাবেন। আপনি নিজে যা চান না, তা নিশ্চয়ই অন্যের ওপর চাপিয়ে দেবেন না” (Suppose there were people from another country who carried opium for sale to England and seduced your people into buying and smoking; certainly your honourable ruler would deeply hate it and be bitterly aroused. Naturally you would not wish to give unto others what you yourself do not want.)।

আফিম ব্যবসা বন্ধের উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ ফ্যাক্টরি অবরোধের নির্দেশ

  • (১) ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মার্চ লিন বেআইনি আফিম ব্যবসা বন্ধ করার ও মুৎসুদ্দি ও ভৃত্যদের আফিম বাণিজ্যের সঙ্গে যাবতীয় সম্পর্ক ত্যাগ করার জন্য ব্রিটিশ কুঠি বা ফ্যাক্টরিগুলি অবরোধ করার নির্দেশ দেন। প্রায় ৩৫০ জন বিদেশি এই অবরোধের জন্য ফ্যাক্টরি চত্বরে আটক হয়ে রইলেন। খাদ্য ও কাজের লোকের অভাবে বিদেশিরা বিস্তর অসুবিধার সম্মুখীন হলেন।
  • (২) ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে ইংরেজ বণিকদের কাছে গচ্ছিত যাবতীয় আফিম লিন তাঁর হেফাজতে সমর্পণ করার নির্দেশ দেন। পরিস্থিতির চাপে বিদেশি বণিকরা প্রায় ২১,০০০ পেটি আফিম লিনের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হলেন। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ জুন লিন জনসমক্ষে এই বিপুল পরিমাণ আফিম ধ্বংস করেন। এই ঘটনায় ইংরেজ বণিকরা অপমানিত বোধ করেন এবং প্রতিশোধের জন্য প্রস্তুত হন।

আফিম ব্যবসা বন্ধে সাফল্য

  • (১) অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই আর একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ জুলাই ক্যান্টন-ম্যাকাও অঞ্চলে এক চীনা গ্রামবাসী কৃষক কাউলুনের একদল ব্রিটিশ নাবিকদের দ্বারা নিহত হন। তৎক্ষণাৎ লিন অপরাধীদের চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেন।
  • (২) কিন্তু ব্রিটিশ বণিকদের তদানীন্তন প্রতিনিধি এলিয়ট এই নির্দেশের বিরোধিতা করেন। তিনি জানিয়ে দেন যে, ব্রিটিশ প্রজাদের বিচার করার কোনো আইনগত এক্তিয়ার চীনা কর্তৃপক্ষের নেই। এলিয়ট নিজেই অপরাধীদের বিচার করেন। এই বিচার প্রহসনে পরিণত হয় এবং হত্যাকারীরা অত্যন্ত লঘুদণ্ডে দণ্ডিত হয়।
  • (৩) এলিয়টের অসহযোগিতা লিন-কে ক্ষুব্ধ করেছিল। লিন পর্তুগিজ কর্তৃপক্ষকে ব্রিটিশদের ম্যাকাও থেকে বহিষ্কৃত করার জন্য চাপ দেন। ১৮৩৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ আগস্ট সমস্ত ব্রিটিশ প্রজা ক্যান্টন থেকে ৯০ মাইল দূরে হংকং-এ চলে যান।

উপসংহার :- কমিশনার লিন বিজয়ীর মতো ম্যাকাওতে প্রবেশ করেন। ইম্যানুয়েল সু বলেছেন, এই সময় পর্যন্ত ইঙ্গ-চীন বিরোধের প্রতিটি স্তরেই লিন জয়লাভ করেছিলেন।