Logo

দীপন হত্যা মামলায় ৮ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত

অনিন্দ্য বাংলা
বৃহস্পতিবার, ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২১
  • শেয়ার করুন

জাগৃতি প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় আট আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণা উপলক্ষে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কারাগারে থাকা ছয় আসামিকে আদালতের এজলাসে তোলা হয়। এ সময় আসামিদের প্রত্যকের গায়ে ছিল বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট ও মাথায় হেলমেট। রায় ঘোষণা উপলক্ষে আদালতের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। আদালত এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কড়া নজরদারির মধ্যে রাখে।

অন্যদিকে এই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নিহতের স্ত্রী চিকিৎসক রাজিয়া রহমান। গতকাল সকালে আদালতে মামলার রায় ঘোষণার সময় দীপনের স্ত্রী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ে তিনি সন্তুষ্ট। তবে রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান।

মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন-মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত সামির, আবদুস সবুর ওরফে আবদুস সামাদ, খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল রিফাত, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব সাজিদ, মোজাম্মেল হুসাইন ওরফে সায়মন, শেখ আবদুল্লাহ ওরফে জুবায়ের, চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক ও আকরাম হোসেন ওরফে হাসিব। তাদের মধ্যে জিয়া ও আকরাম পলাতক। এই মামলায় গত ২৪ জানুয়ারি উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি নিয়ে আদালত গতকাল রায় ঘোষণার দিন রেখেছিলেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ৩১ অক্টোবর শাহবাগ এলাকার আজিজ কো-অপারেটিভ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলায় সন্ত্রাসীরা জাগৃতি প্রকাশনীর অফিসে ফয়সল আরেফিন দীপনকে ঘাড়ের পেছনে আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর সন্ত্রাসীরা অফিসের দরজা বন্ধ করে পালিয়ে যায়। মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১৬ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।

আদালত ওই অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ২২ অক্টোবর অভিযোগ গঠন করেন। অভিযোগপত্রে বলা হয়, প্রযুক্তিগত তদন্তে জানা যায়, নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্যরা ফয়সল আরেফিন দীপনকে হত্যা করেছে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন গোলাম ছারোয়ার খান। আর আসামিপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এ বি এম খায়রুল ইসলাম।

অভিযোগপত্রের তথ্য বলছে, আসামি মইনুল হাসান শামীম জিজ্ঞাসাবাদের সময় স্বীকার করেন, তিনিসহ অন্য সহযোগীরা মিলে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন। এ ঘটনা ছাড়াও তারা বাংলাদেশের আরও কয়েক জায়ন্ড্লেগার, প্রকাশক ও লেখকদের হত্যাকান্ডে জড়িত। এসব হত্যাকান্ডের মূল হোতা চাকরিচ্যুত মেজর জিয়া এবং সেলিম ওরফে হাদী।

মইনুল হাসানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পলাতক আসামি আবদুস সবুরকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি গোলাম সারোয়ার জাকির বলেন, প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার দায়ে আট জঙ্গির ফাঁসি হয়েছে। এ রায় রাষ্ট্রপক্ষ সন্তুষ্ট। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী এ বি এম খায়রুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হবে।

দীপন হত্যার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রের অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ধ্বংস করা- আদালতের পর্যবেক্ষণ
রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক চরিত্র ধ্বংস করে দেয়াই ছিল দীপন হত্যা মামলার আসামিদের একমাত্র উদ্দেশ্য। এই হত্যা মামলায় রায় ঘোষণার সময় পর্যবেক্ষণে এই কথা বলেন আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেন, ব্লগার অভিজিৎ রায়ের বই প্রকাশ করার কারণে জাগৃতি প্রকাশনীর মালিক ও প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপনকে পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এ সদস্যদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ব্লগার, লেখক, প্রকাশকদের হত্যা করে মানুষের কণ্ঠ স্তব্ধ করে দেয়া। মানুষের মনে আতঙ্ক তৈরি করে জননিরাপত্তা বিঘিœত করা। আর এসবের উদ্দেশ্য হলো মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বন্ধ করে দেয়া।