Logo

নেহাল হাফিজের তিনটি কবিতা

অনিন্দ্য বাংলা
মঙ্গলবার, এপ্রিল ২, ২০২৪
  • শেয়ার করুন

রাহী

অন্যরকম লাগছে খুশি
সন্নিকটে ঈদ,
মন-গগনে চাঁদ উঠেছে
তাওহীদ-আকাঈদ।
চার কলেমা কুরসি-দরূদ
দিলের ভিতর রাখি,
দিন-রজনী চোখের জলে
আল্লাহ তোমায় ডাকি।
ওগো দয়ার প্রতিপালক
ওগো মহান প্রিয়,
অনেক বড় পাপের বোঝা
ক্ষমা করে দিয়ো।
তাকওয়ার ঐ পাক পানিতে
কলব করো সাফ,
তোমার পায়ে মাথা রেখে
চাইছি গুনা মাফ।
দুই কাঁধে দুই নূর প্রহরী
লিখছে আমলনামা,
সকল কিছুর মালিক তুমি
জমিন থেকে ছামা।
দ্বীনের নবী নূরের ছবি
রেখো মাথায় হাত,
তুমি ছাড়া উপায় তো নাই
চাই যে শাফায়াত।
রহম করো রহিম তুমি
রহিম রাহমান,
কুন-ফায়াকুন নিদর্শনে
কুদরতি আসমান।
শেষ বিদায়ে জিহবা মাঝে
কলেমা রেখো জারি,
আল্লাহ তুমি সাথে রাসুল
যাবো নতুন বাড়ি।

যার গেছে যার আছে

এটা গল্প, কবিতা বা কল্পকাহিনী
যা ইচ্ছা ভাবতে পারেন, শুধু
হাতজোড় করি, একটু সময়
খরচ করে লেখাটা পড়বেন,
পড়বেন তো?
গল্পটা এভাবেই শুরু —
এক মায়ের একট মাত্র ছেলে ছিল
পিতা অনেক আগেই প্রয়াত হয়েছেন
ছেলেকে নিয়েই মায়ের ধ্যান-জ্ঞান যত স্বপ্ন।
কৈশোর পেড়িয়ে যৌবনে পা দিয়েই
সে এক মেয়ের প্রেমে পড়ল।
দিন গড়িয়ে বছর, এভাবে তিন বছর পর
ছেলে বুঝল যে কোন মূল্যে মেয়েটিকে তার চাই
ওকে ছাড়া সে বাঁচবে না, কিন্তু
মেয়ে এক কঠিন শর্ত দিলো।
ছেলে যদি তার মায়ের মাথাটা কেটে আনতে পারে
তবেই তাকে স্বামী হিসেবে গ্রহণ করবে।
এমন শর্ত শুনে ছেলেটি মহা বিপদে পড়লো
এটা কী করে সম্ভব! আবার এই মেয়েকে ছাড়া
তার জীবন অর্থহীন। এই দ্বিধা- দ্বন্দ্বের সংকটে
সকাল গড়িয়ে রাত হ’ল। এদিকে অভাগী মা
ছেলের চিন্তায় অস্থির। রাতে বাড়ি ফিরতেই মা জড়িয়ে ধরে বললেন, ” আমার বাবা! সারাদিন কোথায় ছিলে! কী হয়েছে তোমার! ” কিছু হয় নি বলে মাকে বলল,” ভাত দাও।” মা তারাতাড়ি ভাত বেড়ে দিয়ে নিজে মাখিয়ে মুখে তুলে দিতে দিতে নিজেও খেলেন।
ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে একসময় ঘুমিয়ে পড়লেন। ছেলে ঘুমায় নি,ঘুমের ভান করেছিল।
চুপচাপ আলমারি থেকে একটি ধারাল চাকু এনে
মায়ের মাথার কাছে বসে এক হ্যাঁচকা টানে
মাকে জবাই করে ফেলল। শুধু ” উফ্!” একটি শব্দ হ’ল। ছেলের মুখের দিকে মায়ের চোখ দু’টো
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল।
দেহ থেকে মাথাটা আলাদা করে একটি ব্যাগে ভরে
রাতেই মেয়ের বাড়ির দিকে ছুটল।
গভীর রাত, ঘুটঘুটে অন্ধকার। মেয়ের বাড়ির কাছাকাছি যেতেই ইটে হোঁচট খেয়ে ছেলেটি মাটিতে পড়ে গেল। হাত থেকে ব্যাগটা ছিটকে গিয়ে মায়ের মাথাটা বেরিয়ে এল।
মহান আল্লাহর ইশারায় জবাই করা মাথা থেকে একটি শব্দ হ’ল” ইস! খোকা তুই কোন ব্যথা পাসনি তো!”
এই হ’ল আমাদের মা। এই মাকে আমরা কতটা যত্নে রেখেছি! আচ্ছা বুকে হাত দিয়ে বলুন তো
আপনার দুর্ব্যবহারে মাকে কোনদিন কাঁদান নি! কোনদিন কি মাকে জড়িয়ে ধরে বলেছেন, ” মা গো!
তোমার ওষুধ শেষ হয়ে গেছে বলনি কেন!
সারাদিন পরিশ্রম করে নিশ্চয়ই তোমার পা ব্যথা করছে
একটু তৈল মালিশ করে দেই!”
মাকে কবরে রেখে আপনি কত নিশ্চিন্ত! হয়ত পোকা-মাকড়ে হাড়-মাংস খেয়ে ফেলেছে।
জীবিত অবস্থায় পোকা-মাকড়ের মতো আপনিও
মায়ের দুধ খেয়েছেন, ঘুম খেয়েছেন, ঘাম খেয়েছেন
মায়ের রক্ত চুষে বড় হয়েছেন।
আমার মা নেই। সারাদিনে ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরলে কেউ বলে না, ” কিরে খোকা! আজ এত দেরি হল কেন!
একসাথে খাব বলে কখন থেকে তোর জন্য বসে আছি! “
” রাব্বির হাম হুমা কা’মা রাব্বা ইয়ানী সাগিরা “
চরিত্রহীন
আমি প্রায়ই চরিত্রহীন হয়ে উঠি
নানান উপাচারে তৈরি চরিত্র ভারে
মাথাটা কুর্নিশ ভঙ্গিতে নুয়ে যাচ্ছিল তাই
প্যান্টের পকেটে গুঁজে ভিড়ের মধ্যে হাঁটছিলাম।
“চরিত্রবান” পাড়ায় ঢুকার পূর্বে পকেটে
হাত দিয়ে দেখি পকেট কাটা, পকেট মেরে
চরিত্র নিয়ে গেছে! বিষন্ন মন নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
একটি সাইনবোর্ড দেখলাম, ” চরিত্র শপিং মল”
ঢুকে দেখি ফাঁকা! দোকানীরা বলল বাঘ সিংহ থেকে শুরু করে নানান প্রজাতির বাহারি চরিত্র ছিল
সব বিক্রি হয়ে গেছে, বেশি বিক্রি হয়েছে নাকি
বাঘের চরিত্র, বাঘ মাংসাশী কিনা!
এক দোকানী একটি কোকিলের চরিত্র দেখিয়ে বলল,” এইটাই আছে, কেউ কিনতে চায়নি, আপনি
নিলে সস্তায় দিয়ে দেবো। ” ভাবলাম
আমার মত কোকিলও গৃহহীন তাই কেউ নেয় নি
ওটাই নিলাম। সেই থেকে পাখি হয়ে উড়ি
মনের সুখে গান গাই আর দিন শেষে
একটু আশ্রয় খুঁজি!