Logo

বাড়বে গরমের তীব্রতা

রিংকন মন্ডল রিংকু
শনিবার, এপ্রিল ৬, ২০২৪
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক: দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল সিলেটে গতকাল শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই উপাত্ত প্রায় বর্ষার বৃষ্টির মতো। যথারীতি ওখানকার বৃহস্পতিবারের তাপমাত্রার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার পারদ কমে ৩১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে গিয়ে ঠেকেছে। একই দিনে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেদিন ঢাকায় রেকর্ড হয়েছে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল, আর এর প্রভাবে সিলেটের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে এসেছে ৩২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই মেঘের প্রভাবে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে এসেছে ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে রাজশাহীতে, ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

সিলেটে ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেও দেশের অন্য কোথাও বৃৃষ্টি হয়নি। সাধারণত এই সময়ে স্বল্প মাত্রার বৃষ্টির রেকর্ড হয় এবং সেই সঙ্গে কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডব থাকে। দেশের অন্য কোথাও না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ফোকাস্টিং কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম গতকাল বিকেলে মিডিয়াকে বলেন, ‘বর্তমানে বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে (দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিম) আসা বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প রয়েছে। কিন্তু এই জলীয় বাষ্পে বৃষ্টি হচ্ছে না।’

জলীয় বাষ্প আসছে কিন্তু বৃষ্টি হচ্ছে না কেন, এই প্রশ্নের জবাবে শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘বৃষ্টি হওয়ার জন্য জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুর সঙ্গে অন্য বায়ুর মিশ্রণ হতে হয়। মূলত পশ্চিম দিক থেকে আসা শুষ্ক বায়ু এবং পূর্ব দিক থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুর মিলন হলেই বৃষ্টিপাত ঘটে থাকে।’

কিন্তু পূর্ব দিক থেকে আসা বাতাসে তো জলীয় বাষ্প থাকার কথা নয়। এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই সময়ে মূলত পুবালি বাতাস আসার কথা নয়, কিন্তু দক্ষিণ থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস পূর্ব দিক থেকে ঘুরে আসে। আর তখন সেই বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকে। তবে এখন এই বাতাস সোজা ভারতের দিকে চলে যাচ্ছে। অনুকূল পরিবেশে তা পূর্ব দিক থেকে বাঁক নিয়ে পূবালী বাতাসে রূপ নেবে।

আবহাওয়া ও ভূগোলবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্প সোজা দক্ষিণ দিক থেকে এসে সোজা উত্তর দিকে অগ্রসর হয়। এই বাতাস মূলত মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত; যা দেশে জুনের প্রথম সপ্তাহে প্রবেশ করে। এই বাতাস সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ার পর পশ্চিম দিক থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর সংস্পর্শে এসে বৃষ্টি ঘটায়। উষ্ণ ও শীতল বায়ুর সংস্পর্শে ঘটে এই বৃষ্টি। এটাই ঋতুর স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু দেশের পূর্বদিকের পাহাড়গুলোয় বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বাতাস ওপরে গিয়ে ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এ কারণেই দেশের পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টি বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু এখন সিলেটে ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের মূলে বিক্ষিপ্ত এই বাতাস ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করলেও তা রীতিসিদ্ধ নয়।

এ বিষয়ে কথা হয় আবহাওয়া অধিপ্তরের অপর আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, সিলেটে বিক্ষিপ্তভাবে ৭৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে ২৪ ঘণ্টায়। তাই ওখানকার তাপমাত্রা কিছুটা কম। জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস যেখানে বাধাপ্রাপ্ত হবে, সেখানেই বৃষ্টিপাত ঘটাবে।

এপ্রিলে তাপমাত্রা বেশি থাকবে : এপ্রিল মাস দেশের সবচেয়ে উষ্ণতম মাস। এ মাসে স্বাভাবিকভাবেই তাপমাত্রা বেশি থাকবে। গত মাসে দেশের গড় তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল বলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের চলতি মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে প্রকাশ করেছে। একই সঙ্গে গত মাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (৩১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) চেয়ে শূন্য দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি রেকর্ড হয়েছে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের (১৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) চেয়ে শূন্য দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এপ্রিলে তাপমাত্রা বাড়বে কি না জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৃদু ও মাঝারি মাত্রার তাপপ্রবাহ বইছে। তবে মাসের শেষার্ধে একটি তীব্র তাপপ্রবাহও বয়ে যেতে পারে দেশের ওপর দিয়ে।’

এদিকে পরিসংখ্যান বলছে, দেশের ইতিহাসে এপ্রিলে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ১৯৬৫ সালের ১৫ এপ্রিল। সে বছর যশোরে ৪৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল। এ ছাড়া ১৯৮৯ সালের ২১ এপ্রিল ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছিল বগুড়ায়। ১৯৬৪ সালের ১১ এপ্রিল চট্টগ্রামে ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল।

বৃষ্টি কবে হবে : শিগগিরই বৃষ্টির কোনো লক্ষণ নেই বলে জানান আবহাওয়াবিদ শাহীনুল ইসলাম। তিনি বলেন, যদি কোথাও বৃষ্টি হয়, তবে সেখানে কালবৈশাখী ঝড়ও হবে। বছরের এই সময়টা স্বাভাবিকভাবেই গরমের মৌসুম। গরম পড়বেই। তবে মাসের দ্বিতীয়ার্ধের পর বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বৃষ্টি হলেও হতে পারে। যেখানে হবে, সেখানে খুব আরামদায়ক আবহাওয়া হবে এবং আবারও গরম পড়বে; অর্থাৎ বৃষ্টি স্থায়ী হবে না বলে শীতল আবহাওয়াও স্থায়ী হবে না।