Logo

বিশ্বের বড় পাঁচ যুদ্ধ!

অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, জুন ১, ২০২০
  • শেয়ার করুন

যুদ্ধ নামটা শুনলেই অনেকেই আৎকে উঠে৷ কারণ যুদ্ধ মানুষকে দাঁড় করিয়ে দেয় এক ভয়ঙ্কর পরিণতির সামনে। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই বিভিন্ন দেশ তার ক্ষমতা প্রদর্শন এবং ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একজন আরেক জনের উপরে ঝাপিয়ে পড়েছে৷ আর এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে নিরীহ মানুষ৷ অকালে প্রাণ হারিয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ

সভ্য সমাজের সবচেয়ে বড় আর ধ্বংসাত্নক যুদ্ধ বলতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ৷ ১৯৩৯ সাল হতে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলে।এই ভয়াবহ যুদ্ধে আনুমানিক ছ’কোটি ২০ লক্ষ মানুষ মারা যায়৷ যার মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ছিল রাশিয়ার নাগরিক। নিহতের এই বিশাল সংখ্যার মূল কারণ ছিল গণহত্যা আর অস্ত্রের ব্যাপক ব্যবহার।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারিগর বলতে হিটলারকে সরাসরি  দায়ী করা হয়৷ নাৎসি বাহিনীর পোল্যান্ড আক্রমণে মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়৷ মিত্রপক্ষে ছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স পোল্যান্ড ,রাশিয়া আর চীন। জার্মানির সঙ্গে ছিল ইতালি আর জাপান।এই্ যুদ্ধ প্রথমে রাশিয়া অংশগ্রহন না করলেও, পরবর্তীতে জামার্নি রাশিয়াকে আক্রমন করে যুদ্ধের ময়দানে ডেকে আনে।

এই যুদ্ধে মিত্রশক্তির জয় হয়। শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে তৈরি রাষ্ট্রসংঘ৷ বৃহৎ শক্তিহিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের আত্মপ্রকাশ করে৷ পাশাপাশি রাশিয়া-আমেরিকা স্নায়ু যুদ্ধের সূচনা হয়। এই যুদ্বের মাধ্যমে সর্বপ্রথম পারমানবিক বোমার ব্যবহার হয় আর এর শিকার হয় জাপান। ১৯৪৫ সালে জার্মানি এবং জাপান উভয় দেশের নিঃশর্ত আত্মসমর্পনের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে। তবে, ভয়াবহতার জন্য এই যুদ্ধ মানুষ মনে রেখেছে৷

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ছিল সভ্য যুগের সর্বপ্রথম অসভ্য যুদ্ধ। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্থায়িত্ব ছিল প্রায় চার বছর৷ ২৮ জুলাই, ১৯১৪ থেকে ১১ নভেম্বর ১৯১৮ সাল পর্যন্ত চলে এই যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধের কারণে প্রায় ৫০ মিলিয়ন লোক প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়৷ এর মাঝে এককোটি ৬০ লক্ষ লোক শুধু মারাই যায় আর বাকিরা জখম হয়৷

তবে যুদ্ধ মুলত শুরু হয় অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় আর সার্ভেরিয়ার মধ্যে৷ পরে দুই দেশের পক্ষ হয়ে নানা দেশ তাদের মনের ঝাল মেটানোর জন্যই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯১৪ সালের ২৮  জুন অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যাকান্ডের মাধ্যমে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূত্রপাত হয়।

এই যুদ্ধের কারণ হিসেবে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয় সাম্রাজ্য বসনিয়া-হার্জেগোভিনা দখল করা এবং আর্চডিউক ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দের হত্যাকান্ডকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।

তবে কেন বিভিন্ন দেশ এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল? ফ্রান্সের ঐতিহাসিক শত্রুতার কারণে ব্রিটেন প্রথমদিকে জার্মানীর প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন ছিল। কিন্ত জার্মানী ব্রিটেনের সঙ্গে নৌ- প্রযুক্তিতে পাল্লা দিতে শুরু করায় সম্পর্কটি প্রতিযোগিতামূলক হয়ে ওঠে। ফ্র্যাঙ্কো-প্রুশিয়ান যুদ্ধের পর থেকে জার্মান ও ফরাসীদের সম্পর্ক খারাপ হতে থাকে। ফরাসীরা তাই রাশিয়ার সঙ্গে মৈত্রীস্থাপন করে। অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরী, রাশিয়াকে হুমকি হিসেবে দেখত, তাই তারা জার্মানীর সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করে। সার্বিয়ার উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে স্লাভ জাতীয়তাবাদ জোরদার হয়ে ওঠে।

সুযোগ পেয়ে এই সময় অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরী সার্বিয়াকে কোণঠাসা করে ফেলে। সার্বিয়ার মিত্র রাশিয়া, সে জোরে সার্বিয়া হুমকি অগ্রাহ্য করবার সাহস দেখায় ও সৈন্য সমাবেশ শুরু করে। বিভিন্ন মৈত্রী চুক্তি, দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বিভিন্ন পর্যায়ে সত্যের বিভিন্ন বিকৃতি রাষ্ট্রনায়কদের যুদ্ধের সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলে দেয়। ২৮ জুলাই ১৯১৪ অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরী সার্বিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পরদিন রাশিয়া সৈন্য সমাবেশের মাধ্যমে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ফলে জার্মানীও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়। এদিকে সার্বিয়ার সমর্থনে ফ্রান্স সৈন্য সমাবেশ শুরু করে আর তারপরের ঘটনা প্রায় সকলেই জানা৷

অামেরিকান বিপ্লব

খুব কম সংখ্যক লোকই এই্ যুদ্ধটি সম্পর্কে জানেন। এই যুদ্ধটি চলে ১৭৭৫ সালের ১৯ এপ্রিল থেকে ১৭৮৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত৷ এই যুদ্ধটি শুরু হয়েছিল গ্রেট ব্রিটেন আর নর্থ আমেরিকার মধ্যে৷ তবে পরবর্তীতে ফ্রান্স, স্পেন আর জার্মান আমেরিকাকে সাপোর্ট দিয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে৷ তবে ফ্রান্স আমেরিকাকে প্রচুর পরিমাণ অস্ত্র সরবরাহ করে। সেই সময়ে আমেরিকা ছিল ব্রিটিশদের দখলে। মুলত ব্রিটিশ গর্ভমেন্ট কতৃর্ক কর বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে এই যুদ্ধের শুরু হয়। কর বৃদ্ধির ফলে তখন আমেরিকাতে প্রতিবাদের ঝড় উঠে৷  এই ঝড়ের ফলেই পরবর্তীতে ব্রিটিশরা আমেরিকা ছাড়তে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধটিতেও প্রচুর মানুষ মারা যায় ।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ

ভিয়েতনাম যুদ্ধের কথা অনেকেই জানা।এটি হচ্ছে প্রথম যুদ্ধ যাতে আমেরিকা হেরে যায়। ভিয়েতনাম যুদ্ধ ১৯৫৯ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সংঘটিত সবচেয়ে দীর্ঘ সামরিক সংঘাত। সাম্যবাদী শাসন, কমিউনিস্ট শাসন সবদিকে যেন ছড়িয়ে না পড়তে পারে সে লক্ষ্যেই আমেরিকা এই যুদ্ধে অংশগ্রহনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

যুদ্ধ মূলত শুরু হয় দক্ষিণ আর উত্তর ভিয়েতনামের মধ্যে। আর এতে  দক্ষিণ ভিয়েতনামের পক্ষে নিতে ১৯৬৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেখানে সৈন্য পাঠায়৷ কিন্তু এর ফলে যে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, তাতে শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জয়ী হতে পারেনি।

১৯৭৫ সালে দুই ভিয়েতনাম একত্রিত হয়। ১৯৭৬ সালে এটি সরকারিভাবে ভিয়েতনাম সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্রে পরিণত হয়৷ এই যুদ্ধে প্রায় ৩২ লক্ষ ভিয়েতনামী মারা যান। এর সঙ্গে আরও প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ লাও এবং ক্যাম্বোডীয় নাগরিক মারা যায়। মার্কিনীদের প্রায় ৫৮ হাজার সেনা নিহত হন এই যুদ্ধে।

উপসাগরীয় যুদ্ধ

এখন দগদগে স্মৃতি ইরাক-আমেরিকা উপসাগরীয় যুদ্ধ৷ ১৯৯০ সালের ২ অগস্ট থেকে ১৯৯১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই যুদ্ধ চলে৷ যদিও সরকারিভাবে ১৯৯৫ সালের ৩০ নভেম্ব এই যুদ্ধের সমাপ্তি হয়৷ অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম নামে পরিচিত এই যুদ্ধের সংঘটিত হয় ইরাক এবং ৩৪টি দেশের জাতিসংঘ অনুমোদিত যৌথ বাহিনীর মধ্যে।

১৯৯০ সালের অগস্ট মাসে ইরাকের কুয়েত আগ্রাসন এবং কুয়েতি ভূ-খন্ড দখলের প্রেক্ষিতে ইরাকী বাহিনীর হাত থেকে কুয়েতকে মুক্ত করাই ছিল এই যুদ্ধের উদ্দেশ্য৷ এই যুদ্ধে প্রায় দেড় লক্ষ লোক মারা যায় এবং এক লক্ষ সাধারণ মানুষ জখম হন৷ ইরাককে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখিন হতে হয়৷