Logo

ভেস্তে গেলো ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের ত্রাণ বিতরণ

অনিন্দ্য বাংলা
সোমবার, এপ্রিল ৬, ২০২০
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক : করোনা মোকাবেলায় ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের ত্রাণ সভায় হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার ঘটনায় স্থগিত হয়ে গেলো ত্রাণ বিতরণ সভা। ফলে ভেস্তে গেলো করোনা সংকটে দরিদ্র-অসহায়দের জন্য ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম।

গত ৪ এপ্রিল শনিবার বিকেল ৩টায় জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে করোনা মোকাবেলায় চলমান সংকটে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে এক জরুরী সভা আহবান করা হয়। সভায় ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও মতানৈক্যের কারণে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার ঘটনায় ত্রাণ সভা স্থগিত হয়েছে। সভা স্থগিতের কারণ হিসেবে পরস্পর বিরোধী মন্তব্য পাওয়া গিয়েছে। তবে আবার কবে এই সভা অনুষ্ঠিত হবে এই বিষয়ে কোন সঠিক তথ্য জানা যায়নি।

সদস্যদের অভিযোগ, ৫ শতাধিক পরিবারে ত্রাণ বিতরণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয় এবং ইতিমধ্যে বিতরণকৃত নিম্নমানের মাস্ক  ক্রয়ের কঠোর সমালোচনা করেন সদস্যরা। সরকারী নিয়ম বহির্ভূত অর্থ চাওয়ায় নির্বাহী কর্মকর্তা অপারগতা প্রকাশ   করেন। অর্থ বরাদ্ধের নির্দিষ্ট নিয়ম ও নীতিমালা নিয়ে বাক-বিতন্ডতা শুরু হয়। ফলে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অফিস স্টাফদের নিয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেন। 

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত  ৪ এপ্রিল শনিবার রাত ৯টায় ক্ষুব্ধ জেলা পরিষদের সদস্যরা এক সংবাদ সম্মেলন আহবান করেন। সম্মেলনে  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার  বিরুদ্ধে অন্যায় আচরণের অভিযোগ তুলে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে জেলা পরিষদ সদস্য মো: একরাম হোসেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে একটি অভিযোগপত্র সাংবাদিকদের সামনে পড়ে শুনান। এ সময় জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মমতাজ উদ্দিন মন্তার সভাপতিত্বে পরিষদের ১৮ জন্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন। প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মমতাজ উদ্দিন মন্তা বলেন, শারমিনা নাসরিনের আচরণ মেনে নেবার মত নয়। তিনি দীর্ঘদিন বিদেশে কাজ করেছেন। জনসাধারণের সেবা প্রদানে তাঁর মানসিকতায় কিছুটা ঘাটতি রয়েছে।

নান্দাইল থেকে নির্বাচিত সদস্য আবু বক্কর সিদ্দিক বাহার বলেন, প্রধান নির্বাহী শারমিনা নাসরিন প্রায়ই সদস্যদের সাথে খারাপ আচরণ করে থাকেন। তাঁর জেদী আচরণে শৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়েছে জেলা পরিষদের।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একজন সদস্য জানান, জেলাপরিষদের মিটিং ছাড়াই বিভিন্ন সময়ে নিয়ম বর্হিভূতভাবে জিনিশপত্র কেনা-কাটা করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ভাইরাস প্রকতরোধে যেসব লিফলেট, সাবান ও মাস্ক কেনা হয়েছে তা একই প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়েছে অথচ ক্রয় কার্যে  সকল সদস্যদের মতামত গ্রহণ বা বিশেষ সভার প্রয়োজন ছিলো। তা করা হয়নি বিধায়, সদস্যদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটেছে ঐ সভায়। তিরি আরো বলেন, পরিষদ পরিচালনায় শুধুমাত্র  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাই নন চেয়ারম্যান সাহেবকেও আরো বেশী আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরী।

তবে এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিনা নাসরিন বলেন, সভায় সদস্যদের অশালীন ও অসৌজন্যমূলক আচরণে আমি বিব্রত। তারা আমাকে বকা-ঝকাও করেছে। তাই আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সভাস্থল ত্যাগ করেছি। সদস্যদের দাবী আইন বহির্ভূত হওয়ায় সে দাবী মেনে নেয়া সম্ভব নয়। আমাকে বিতর্কিত করার জন্য কিছু সদস্য পরিকল্পিতভাবে এই ঘটনার সূচনা করেছেন। তাদের কথা মত কাজ না করায়, তারা আমার সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছে। সরকারী নিয়মের বাইরে গিয়ে কোন কাজ করার সুযোগ আমার নেই।

শারমিনা নাসরিন আরো বলেন, করোনা মোকাবিলায় ও জন সচেতনতায় ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান ও সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে ২১ হাজার মাস্ক, ১২ হাজার ডেটল সাবান ও এক লাখ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এগুলো সবই সদস্যরা নিজ নিজ দায়িত্বে ক্রয় ও বিতরণ করেছেন। আমি শুধু এসব সামগ্রীর নোট রেখেছি। এর মধ্যে ১১ হাজার মাস্ক চেয়ারম্যান নিজে ক্রয় করেছেন এবং ১০ হাজার মাস্ক নিজ দায়িত্বে টেইর্লাস থেকে তৈরি করিয়েছেন প্যানেল চেয়ারম্যান-১ মমতাজ উদ্দিন মন্তা । ফলে পণ্য সামগ্রীর মানের বিষয়টি তারাই ভালো বলতে পারবেন। এইসব মাস্ক ও সাবান বিতরণের কোন প্রতিবেদনও কেউ অফিসে জমা দেননি।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইউসুফ খান পাঠান বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি খুব বিপাকে আছি। তবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা একজন সৎ ও ভালো মানুষ। তিনি নিয়ম মেনেই অফিসিয়াল সকল কাজ বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।