Logo

মদনে সাজ্জাদুল হাসানের মাস্ক বিতরণ

অনিন্দ্য বাংলা
বুধবার, সেপ্টেম্বর ১, ২০২১
  • শেয়ার করুন

অনিন্দ্যবাংলা: বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদ এর চেয়ারম্যান ও প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব (অবসরপ্রাপ্ত) সাজ্জাদুল হাসান সোমবার নেত্রকোনার মদনে অক্সিজেন সিলিন্ডার ও মাস্ক বিতরণ করেন।
উপজেলার মিনি কক্সবাজার হিসেবে খ্যাত উচিতপুর হাওর বিলাস ঘাটে আনুষ্ঠানিকভাবে মদন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আরএমও সাঈম হাসান রিয়াদ এর কাছে করোনার রোগীদের চিকিৎসার সুবিধার্থে ৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও পৌরসভাসহ ৮ ইউনিয়নে ১০ হাজার মাস্ক বিতরণ করেন।

এ সময় সাজ্জাদুল হাসান এর সহধর্মিণী কলামিষ্ট লায়লা আরজুমান, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবি লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেদুয়ান আলী খান আরনিক, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও আটপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম, জেলা যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক নূর খান মিঠু, মদন উপজেলা নির্বাহী অফিসার বুলবুল আহমেদ, পৌর মেয়র সাইফুল ইসলাম সাইফ, ওসি ফেরদৌস আলম, সাবেক পৌর মেয়র আব্দুল হান্নান তালুকদার শামীম, সাংগঠনিক সম্মাদক সমীর কুমার দাস, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা ইফতেখারুল আলম খান চৌধুরী প্রমূখ।

উল্লেখ্য যে, বৃহত্তর ময়মনসিংহের প্রত্যন্ত অঞ্চল নেত্রকোণা। খাল, বিল, নদী, নালা, হাওর বেষ্টিত এ জনপদ সার্বিক উন্নয়নে সবসময়ই পিছিয়ে ছিলো।
গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, দুধে-ভাতে সমৃদ্ধ এককালে রূপকথার ভাটিবাংলা এখন আর আগের মত নেই। জল, জলোচ্ছাস,বন্যা, খরার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের কাছে উন্নয়নের আলো সহজে পৌঁছে না, সব রয়ে যায় লাল ফিতার মলাটে বাঁধাই করা অফিস ফাইলে।

ভাটিবাংলার রাজধানী, ধান, পাট, সরিষার শস্য ভান্ডার ও সুস্বাদু মাছের লীলাভূমি মোহনগঞ্জের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে, ব্রিটিশরা ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে মোহনগঞ্জে রেলস্টেশন স্থাপন করে। সে সময় যোগাযোগ ব্যবস্থার যে অভুতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছিলো পরবর্তীতে এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে, একান্তভাবে কেউ উল্লেখযোগ্য কোন উদ্যোগ নেন নি। দীর্ঘ সময় ধরে অবহেলিত, বঞ্চিত থেকেছে এই বিশাল জনপদ।

সম্প্রতি পিছিয়ে পড়া এই জনপদের উন্নয়নে সমকালীন সময়ে যিনি ধ্রুবতারার মত স্বতস্ফুর্তভাবে অবহেলিত মানুষদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তিনি ভাটিবাংলার সুহৃদ, বাতিঘর, আস্থা ও নির্ভরতার প্রাণপুরুষ হাওরপুত্র সাজ্জাদুল হাসান।

কোন এমপি বা মন্ত্রী না হয়েও একজন সরকারী কর্মকর্তা যে দেশের উন্নয়নে একনিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারেন, দুস্থ-অসহায়-বিপন্ন মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্টীকে আরো সমৃদ্ধ ও গতিশীল করতে পারেন, সাজ্জাদুল হাসান তা হাতে-কলমে দেখিয়ে দিয়েছেন। তিনি প্রমাণ করছেন, মহৎ উদ্দেশ্য, সঠিক পরিকল্পনা, গঠনমূলক নেতৃত্ব আর আন্তরিকভাবে পরিশ্রম করলে, উন্নয়ন আসবেই।

ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করে ইউএনও হিসেবে প্রথম নিয়োগ পান আটপাড়া উপজেলায়। তারপর জেলাপ্রশাসক। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো ধাপ পেড়িয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের একান্ত সচিব হয়েছিলেন। সরকারের আস্থাভাজন হওয়ায় তিনি বহুবার প্রধানমন্ত্রীর সফরসংগী হয়েছেন। সফরে বিভিন্ন উন্নত দেশে গিয়ে খুব কাছে থেকে দেখেছেন তাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা, শিল্পনীতি, অর্থনীতির সমৃদ্ধি , কৃষি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন অবকাঠামো। ফলে একটি দেশ, জাতি ও জনপদকে কিভাবে সমৃদ্ধ করা যায় তা তিনি রপ্ত করেছেন স্বমহিমায়।

কৃষিতেই মুক্তি, কৃষিতেই উন্নতি- এই মিশন-ভিশনকে মাথায় রেখে অবহেলিত হাওর অঞ্চলকে কিভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এলাকা বানানো যায় সেই স্বপ্ন তিনি মনে মনে লালন করতেন বহুকাল ধরে। ডিজিটাল বাংলাদেশের উন্নয়ন রূপকার সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সুযোগটি এবার করে দিলেন সাজ্জাদুল হাসানকে। এলাকাবাসী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সাথে কথা বলে গ্রহণ করলেন তিনি হাওর উন্নয়ন প্রকল্প।

তিনি চান এই অবহেলিত জনপদের সার্বিক উন্নয়ন সাধন করে সমৃদ্ধির নেত্রকোনাতে মোহনগঞ্জকে একটি আদর্শ মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলা । তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে নেত্রকোনা জেলায় সার্বিক দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।

সাজ্জাদুল হাসান স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং প্রাক্তন গণ পরিষদ সদস্য মরহুম ডাঃ আখলাকুল হোসেন আহমেদের ২য় পুত্র। তার মাতার নাম বেগম হোসনে আরা হোসাইন।

তিনি নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে উর্ত্তীর্ণ হন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (অনার্স) এবং প্রডাকশন ইকনমিক্স এন্ড ফার্ম ম্যানেজমেন্ট-এ কৃতিত্বের সাথে মাষ্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।

১৯৮৮ সালে তিনি বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগদান করেন। পরবর্তীতে তিনি ইউনিভার্সিটি অব ওয়েষ্টার্ন সিডনি, অস্ট্রেলিয়া থেকে কৃতিত্বের সাথে মাষ্টার্স অব সায়েন্স (অনার্স) ডিগ্রী অর্জন করেন। তার গবেষণালদ্ধ (জবংবধৎপয ঋরহফরহমং) ফলাফল ইন্ডিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার জার্নালে প্রকাশিত হয়। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের সিন্ডিকেট সদস্য।

সাজ্জাদুল হাসান মন্ত্রণালয়সহ মাঠ প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কক্সবাজার এবং সিলেটের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন। এছাড়া তিনি জনপ্রশাসন, যোগাযোগ ও কৃষি মন্ত্রণালয়েও দায়িত্ব পালন করেন।

অতঃপর মাঠ প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে সিলেটে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব থেকে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব পদ থেকে অবসরে যান। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই পুত্র সন্তানের জনক।