জেলা প্রতিনিধি: স্বাধীনতা পুরষ্কার ২০২৪ নিয়ে ময়মনসিংহে শুরু হয়েছে বিতর্ক ও বিক্ষোভ। জানা গেছে ১৫ মার্চ, ২০২৪ শুক্রবার স্মারক নং-০৪.০০.০০০০.৬১১.২৩.০০২.২৪.৫৩ এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে “স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৪” প্রদানের জন্য ১০ জন ব্যক্তির নামের তালিকা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত তালিকার ৮ নং ক্রমিকে সমাজসেবা/জনসেবায় অবদানের জন্য “অরন্য চিরান” এর নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অরন্য চিরান ময়মনসিংহ জেলার “গারো” ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ। অরন্য চিরানের জন্মস্থান ময়মনসিংহ জেলায়। স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকায় অরণ্যের নাম অন্তভূক্ত হওয়ার খবরে অবাক হয়ে পড়ে আদিবাসী জনগণ পাশাপাশি সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতি ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তাঁরা।
জানা যায়, অরন্য চিরান “সারা” নামক এনজিও-তে এমনজিও কর্মী হিসেবে কাজ করে। ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসাসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারম্যান সুবাস চন্দ্র বর্মন বলেন, “জানতে পারলাম সমাজসেবা/জনসেবায় অবদানের জন্য ৮ নং ক্রমিকে “অরন্য চিরান” এর নাম অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। “গারো” বা বাঙালী সমাজের জন্য অরন্য চিরানের বিশেষ কোন অবদান নাই বলে জানিয়েছেন আদিবাসী জনগোষ্ঠি। “অরন্য চিরান” ময়মনসিংহ এলাকায় বা বাংলাদেশে বিশেষ কোন জনহিতকর প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন নাই যা সমাজ পরিবর্তনে অনন্য ভূমিকা রেখেছে। বরং অরন্য চিরানের বিরুদ্ধে সমাজে নানা দূর্নীতি ও অনিয়মের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ক্ষুদ্র নৃ-তাত্তিক বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে চরম সাম্প্রদায়িক ব্যক্তি হিসেবে “অরন্য চিরান” বিশেষভাবে পরিচিত জন। অসাংগঠনিক কর্মকান্ডের জন্য তাকে অত্র সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। ”
জানা যায়, অরন্য চিরান ময়মনসিংহ সদরে অবৈধ পদ-পদবী ব্যবহার করে পরিচয় দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্পেশাল এ্যাফেয়ার বিভাগ থেকে বরাদ্দকৃত “গৃহহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহ প্রকল্প-২০২৩’ উচ্চপদস্থ ও উচ্চবেতনের তিনজন এন.জি.ও কর্মকর্তা, ২ জন পিএইচডিধারী ব্যক্তি ও ১জন বিসিএস ক্যাডার (শিক্ষা) সক্ষম ও ধর্ণাঢ্য ব্যক্তিবর্গকে অনৈতিকভাবে গৃহ বরাদ্দে সুপারিশ ও সহযোগিতা করেছেন এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্পেশাল এ্যাফেয়ার হতে ময়মনসিংহ সদরে “ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সহায়তা প্রকল্প-২০২৩” বিতরণে নীতিমালা বহির্ভূতভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের নিকট থেকে অর্থ আদায় সহ দীর্ঘদিন যাবৎ নানা অভিযোগ অরন্য চিরানের বিরুদ্ধে মামালা  রয়েছে। “অরন্য চিরান” সমতল অঞ্চলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর বৃহত্তম জাতীয় সামাজিক সংগঠন ‘ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন’ এর কেন্দ্রীয় কমিটির কোন নির্বাচিত বা পদধারী নন। সে সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত থেকে ময়মনসিংহে অত্র সংগঠনের সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্তৃক নবনির্মিত অফিসভবন উদ্বোধন ও হস্তান্তহীন অবস্থায় অপদখল করে মামলার স্বীকার হন। ফলে উক্ত নবনির্মিত ভবন অদ্যাবধি উদ্বোধন বা হস্তান্তর সম্ভব হয় নাই। ‘অরন্য চিরান’ ‘ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন’ সংগঠনে সাংগঠনিক বিরোধ সৃষ্টি করে বেআইনী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়লে “অরন্য চিরান” এর বিরুদ্ধে ময়মনসিংহ হালুয়াঘাট সিনিয়র সহকারী জজ আদালত বিগত ১৮/১১/২০২১ খ্রিঃ তারিখে ১৮২/২১ নং ঘোষণামূলক মোকদ্দমায় নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন। মাননীয় আদালতের উক্ত নিষেধাজ্ঞার আদেশ অমান্য করলে ‘অরন্য চিরান’ এর বিরুদ্ধে উক্ত আদালতে ৫/২২ নং আদালত অবমাননার মোকদ্দমা হয়, যা বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। জানা যায়, তার পরিবারের কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে নাই। তাছাড়া অরন্য চিরানের এমন একটিও সামাজিক বা সমাজসেবামূলক বিশেষ অবদান নেই যার জন্য দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পেতে পারেন।
আদিবাসী সুবাস চন্দ্র বর্মন বলেন, “প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ বেসামরিক পুরস্কার “স্বাধীনতা পুরষ্কার-২০২৪” দ্বারা এহেন বিতর্কিত আইন অমান্যকারী সাম্প্রদায়িক মননের ব্যক্তি “অরন্য চিরান” ভূষিত হলে তা “স্বাধীনতা পুরষ্কার” এর মানকেই খাটো করবে না, বরং মহান স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শকে কলঙ্কিত করা সহ দেশের জনগনের সাথে প্রতারণা করা হবে বলে আমরা মনে করি। সেজন্য এই বিষয়ে সরকারের দ্রুত তদন্তপূর্বক “স্বাধীনতা পুরষ্কার-২০২৪” তালিকা পুণঃ মূল্যায়ন করা প্রয়োজন । অন্যথায় মুক্তিযদ্ধের চেতনার আদর্শে বিশ্বাসী সচেতন নাগরিক হিসেবে লজ্জিত হওয়া ছাড়া আমাদের অন্য কোন গত্যান্তর থাকবে না।”
স্বাধীনতা পদক বা স্বাধীনতা পুরস্কার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ এই পদক প্রদান করা হয়ে আসছে। এই পুরস্কার জাতীয় জীবনে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের নাগরিক এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়াও ব্যক্তির পাশাপাশি জাতীয় জীবনের নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে অনন্য উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য প্র্রতিষ্ঠানসমূহকেও এই পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে।