Logo

মোহাম্মদ আব্দুল লতিফের ৩টি কবিতা

অনিন্দ্য বাংলা
বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ১১, ২০২৪
  • শেয়ার করুন

মোহাম্মদ আব্দুল লতিফের

৩টি বিতা

১.
আমি আছি পথ চেয়ে
যখন মন চায় এসো
তুমি এসো তোমার অভিমান থামিয়ে
না না। এই মহামারীর দিনগুলোতে নয়
অপেক্ষা করো নতুন পৃথিবীর
তুমি বরং ভাবতে থাকো
অভিমানের খুঁটিনাটি নিয়ে
যদি কিছু পাও জানিও
যদি কিছু না পাও তাও জানিও
আমিও ভাবতে থাকি আমার মত
যদি কিছু পাই জানাবো
যদি কিছু না পাই তাও জানাবো
দোহায় তোমার ভুল ভাবনায়
ইথারে ভাসমান শব্দগুলো দুষিত করোনা
আমি পথ চেয়ে থাকবো
নতুন সূর্য্যে নতুন তোমার জন্য
তুমি আসবে অভিমানহীন ভারমুক্ত হৃদয়ে
তুমি আসবে মহামারিমুক্ত নতুন অবনীতে
প্রতীক্ষা সেই দিনের
প্রতীক্ষা সেই তোমার।
২.
তুমি আমার দেশেই থাকবে
না, না ভুল বললাম। আমিই তোমার দেশে থাকবো।
হয়তো একই শহরেই কখনো কখনো
কিংবা খুব কাছেই বাসা থাকবে তোমার আর আমার।
হতে পারে আমাদের দুই বাসার ছাদের দুরত্ব
আমাদের চার চোখের দৃষ্টির মধ্যেই থাকবে।
হয়তো দিনের শুরুতে একই সাথে বের হবো বাসা থেকে
ফিরেও আসবো খুব কাছাকাছি সময়ে
কিন্তু আমাদের মাঝে পূর্বের মতো
অপেক্ষার তাড়া থাকবেনা।
যদি দেখা হয়ে যায় কখনো
আমি দেখবোনা তোমায়, কথা দিচ্ছি দেখবোনা ,
হাতে থাকা বাজারের ব্যাগ কিংবা অন্যকিছুর ছুতোয়
আমার মাথা নীচু হয়ে রবে
হয়তো চোখের দৃষ্টিও থাকবে গাড়ীর দরজায় ।
আমি ব্যস্ততার ভান করবো নিশ্চিত
তোমার ভালো থাকার কথাটিও বলবো না কখনো
কিংবা বলবোনা আমি ভালো নেই।
হয়তো একই রাস্তার দুপাশে দুজন রিকশায় যাবো
আমাদের পাশের আসনটিও হয়তো ফাঁকা থাকবে
কিন্তু আমি একবারের জন্যও তাকাবোনা তোমার দিকে।
হয়তো দুজনের রিকশাই অকারণে
ছুটে চলবে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, সংসদ ভবন
কিংবা আইডিবি, শিশু পার্ক ধরে,
হয়তো বৃষ্টিও হবে এক পশলা
হয়তো দুহাত পেতে বৃষ্টিও খাবো একা একা
হয়তো সব স্মৃতিই থাকবে চোখের সামনে
কিন্তু এসবের কিছুই জানবেনা তুমি।
তুমি বলছিলে একটা খোলা ছাঁদ চাই তোমার
মস্ত একটা ছাঁদ।
ছাঁদের তিন পাশে রেলিংয়ের ঠিক গা ঘেঁষে থাকবে
তোমার প্রিয় সব ফুলের আবাস,
প্রতিদিন ফুলের সাথে মিতালী হবে আমাদের
লাল, সাদা, গোলাপী হাজার সব ফুলের সাথে।
হয়তো তাই হবে, ফুলের সাথে মিতালী হবে
তবে আলাদা আলাদাভাবে
কিন্তু ফুলের কানে একটিও অভিযোগ দিবোনা তোমার নামে।
হয়তো মস্ত একটা আকাশ মাথায় নিয়ে
জোছনা দেখবো আমরা, ধবধবে সাদা জোছনা
কিংবা দোলনায় বসে চাঁদের আলোর গন্ধ নেবো
খুব কাছেই হয়তো থাকবো আমরা
কে জানে হয়তো তোমার পারফিউমের গন্ধও
নাকে ধাক্কা দিবে ফুলের গন্ধের সাথে
কিন্তু আমি ডাকবোনা তোমায়।
তোমার এই কিছুই না ধরণের মানুষটি
কিছু না হয়েই হয়তো থাকবে অনন্তকাল ।
৩.
তোমাকে দেখলাম অনেকদিন পর
দ্বিতীয়বারের মতো এ দেখা
প্রথম যখন দেখেছিলাম
তুমি দূরের পথে হেটে যাচ্ছিলে
আকাশের নীল গাঁয়ে জড়িয়ে
দিগন্তের সীমারেখা ধরে
অনেক দূর থেকে তোমায় সে দেখায়
আমার অন্তত তাই মনে হচ্ছিলো,
তোমাকে মনের অজান্তেই ডেকেছিলাম
আমার দিগন্তকন্যা বলে।
তারপর কাছে আসতে আসতে
হারিয়ে যাওয়া নীলিমার মতো
তুমিও হারিয়েছিলে ক্ষণিক পর।
অনেকদিন পর আবার সেই তুমি
রবীন্দ্রনাথের হঠাৎ দেখার মতো
রেলগাড়ির কামরায় নয়
কল্পনার দালিম ফুল কিংবা
বাস্তবের কালো রেশমের মতো কাপড়ও
শোভা পায়নি তোমায় জড়িয়ে
লঞ্চের ছাঁদে রেলিঙে হেলানো
দোলন-চাপার মতো চিকন মুখখানি
শুধু মিলিয়ে দিচ্ছিলো রবি বাবুর সৃষ্টিতে।
আনমনে কি দেখছিলে তুমি?
জল-জোছনার এমন লুটোপুটি প্রেম,
নাকি জাল-নৌকা আর ঘরছাড়া মাঝির বিরহ?
নাকি ভাবছিলে?
কি ভাবছিলে তুমি?
কপোল জুড়ে চাঁদের আলোর এমন প্রক্ষেপণে
কতটা ডুবিয়েছিলে নিজেকে?
দূর থেকে আমারও ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছিলো
তোমার ভাবনার সাবজেক্ট হতে
বেহিসেবি সব ভাবনার সাবজেক্ট।
নাকি শুনছিলে?
কি শুনছিলে তুমি?
ছাঁদের মাঝখানে বসে
হাফ ডজন মধ্যবয়সী যুবকের
গিটারের সুরে গাওয়া
‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে’ গান নাকি অন্য কিছু?
আমি তোমাকে দেখলাম
তোমার না দেখা হয়ে
আমি তোমাকে শুনলাম
তোমার না বলা হয়ে
আমি তোমাকে ভাবলাম
নিজের ভাবনা দিয়ে।
তারপর থেমে যাওয়া গানের মতো
আমিও থেমে গেলাম
দূরত্ব বাড়লো আমাদের
তুমি প্রথম দেখার মতোই
অদৃশ্য হলে তোমার না দেখা হয়ে।