Logo

ময়মনসিংহের শিশু হাসপাতাল নিয়ে ডাঃ প্রদীপ করের খোলা চিঠি!

অনিন্দ্য বাংলা
শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২০
  • শেয়ার করুন

ময়মনসিংহেে একটি শিশু হাসপাতালের দাবী দীর্ঘদিনের। বরাদ্দও হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। জায়গা না পাওয়ার কারনে বরাদ্কৃত টাকা ফেরত যাবে! ময়মনসিংবাসীর জন্য এরচেয়ে খারাপ সংবাদ আর হতে পারে না! তাই এই বিষয়টি নিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি খোলা চিঠি নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করেছেন আমাদের সবার প্রিয় মানবিক ডাক্তার প্রদীপ কর।

তাঁর লিখা হুবহু তুলে ধরা হলো।

#তিনজন_শ্রদ্ধাভাজনের_প্রতি_খোলা_চিঠি-

এডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল,
এডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত,
এডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু।

বিনীত শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। ময়মনসিংহের গণমানুষের অত্যন্ত প্রিয়জন আপনারা। আন্তরিকভাবে মানবদরদী, গণমানুষের সাথে একাত্ম এবং সততার সাথে কথা বলা বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর হিসেবে আপনারা তিনজনই আমার এবং ময়মনসিংহের অনেকের প্রিয়ভাজন, শ্রদ্ধেয় মানুষ। করোনার বিধ্বংসী আক্রমণে আমরা সবাই পর্যূদস্ত। নানাভাবে করোনা আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, এখনও করছে। তারপরও আমাদের টিকে থাকতে হবে, ভবিষ্যত নিয়ে স্বপ্নও দেখতে হবে। তেমনি একটি স্বপ্নের বয়ান নিয়ে আপনাদের সন্মুখে উপস্থিত হয়েছি। কয়েকমাস আগে বিদ্যুৎবিল নিয়ে আপনাদের লিখেছিলাম, আপনারা তাৎক্ষণিক সাড়া দিয়ে ময়মনসিংহবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন, এজন্য কৃতজ্ঞতা জানাই। বর্তমান বিষয়টিও আপনাদের হস্তক্ষেপে সুফল বয়ে আনতে পারে বলে আপনাদের উদ্দেশ্যে এই চিঠি লিখছি। এতে আপনারা বিব্রত বোধ করবেন না বলেই আমার বিশ্বাস।

ময়মনসিংহের দায়িত্বশীল সাংবাদিক নিয়ামুল কবীর সজলের আজকের একটি ফেসবুক পোস্ট হুবুহু তুলে ধরে চিঠিটি শুরু করি। সজল লিখেছেন, ‘নাগরিকরা নীরব। mতাই শিশু হাসপাতাল এ নগরে কবে হবে বা আদৌ হবে কি না জানিনা। তবে আমি চেষ্টা করেছি।’

প্রিয় সজল পরিবেশ উন্নয়ন, নিরাপদ খাদ্য ইত্যাদি নানা বিষয় সহ ময়মনসিংহের চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নয়নেও একজন পরিশ্রমী সংবাদকর্মী। তিনি ময়মনসিংহের একটি সম্ভাব্য শিশু হাসপাতাল বিষয়েও দীর্ঘদিন যাবত তার মতো করে লিখছেন, কাজ করছেন। ময়মনসিংহে একটি আলাদা শিশু হাসপাতাল হোক এ নিশ্চয়ই আমাদের সকলের অন্তরের দাবী! বিষয়টি আমি প্রথম জানতে পারি যখন সজল গত ২৩/০৫/২০১৯ তারিখে ‘কালের কণ্ঠ’ পত্রিকায় একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে জানান যে ময়মনসিংহে একটি স্বতন্ত্র শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য ত্রিশ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল, কিন্তু জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না বলে টাকাটা ফেরত যাচ্ছে। তারপর জানিনা কী হয়েছে সেই বরাদ্দের। ৮/৯/১৯ তারিখে দেখি, সাংবাদিক নিয়ামুল কবীর সজল ও আরও কয়েকজন মিলে তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান মহোদয়ের সাথে শিশু হাসপাতালের বিষয়ে কথা বলছেন। ১৩/১০/১৯ তারিখে তিনি ফেসবুকে খুশির সংবাদ দেন যে শিশু হাসপাতালের জমির ব্যাপারে ময়মনসিংহ জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। এরপর আজ লিখলেন হতাশার কথা, ‘নাগরিকরা নীরব…..।’

ময়মনসিংহ চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতাল তার সামর্থ্যের আড়াই থেকে তিনগুণ বেশি রোগী সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এরকম একটি অবস্থায় জমির অভাবে যদি প্রস্তাবিত শিশু হাসপাতালটি থেকে আমরা বঞ্চিত হই তবে তা হবে খুবই দুঃখজনক।

বর্তমানে করোনার কারণে আমরা এতই সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছি যে সাংবাদিক সজলের এসকল ধারাবাহিক উদ্যোগ হয়ত আমাদের অনেকের নজরে আসছে না। সম্প্রতি নাগরিক আন্দোলনের এক বলিষ্ঠ অভিভাবককে আমরা হারিয়েছি। এমন একটি অবস্থায় আপনারা তিনজন প্রস্তাবিত শিশু হাসপাতাল বাস্তবায়ন সহ ময়মনসিংহের চিকিৎসা ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে সদর্থক নেতৃত্ব নিয়ে নগরীর মানুষের পাশে দাঁড়াবেন এ ভরসা থেকে এ খোলা চিঠি লিখছি।

আমি জানি আপনারা আলাদা আলাদা রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন, কিন্তু এও জানি আপনাদের মাঝে কোনো অভিমান নেই, আপনারা মানুষের কল্যাণের ক্ষেত্রে বন্ধুবৎসল। এটাও ঠিক, আপনারা যে কোনো একজন একাই এ কাজটি নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার মতো সামর্থ্যবান। কিন্তু আমরা জানি, আপনারা তিনজন একত্রে খোঁজখবর নিলে মানুষ যেমন আশ্বস্ত হবে তেমনি বিষয়টি ফলপ্রসূ হবে শতভাগ।

অনুরোধটি হচ্ছে, আপনারা তিনজন জনস্বার্থের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে আশু সম্মিলিত একটি উদ্যোগ গ্রহণ করে শিশু হাসপাতালের সম্ভাবনাটিকে রক্ষা করবেন।

আমি নিজে থেকে এ চিঠিখানা আপনাদের উদ্দেশ্যে লিখলাম, এটি লিখতে আমাকে কেউ প্ররোচিত করেনি, শিশু হাসপাতালের মতো একটি বরাদ্দ নাগরিক উদ্যোগের অভাবে নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা আমাকে এটি লিখতে উৎসাহিত করেছে। আমার নিজের ক্ষমতা নেই বলে আপনাদের কাছে লিখলাম, ভুল বা অন্যায় করে থাকলে সে দায় আমার। একজন বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক হিসেবে আপনাদের কাছে আমার আকাঙ্ক্ষাটুকু ব্যক্ত করলাম মাত্র।

আপনাদের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করি।
আপনাদের গুণমুগ্ধ

ডাঃ প্রদীপ চন্দ্র কর

সর্বশেষে আমাদের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও নাগরিকদের উদাত্ত আহবান জানাই। আসুন আমরা সবাই মিলে হাসপাতালটি স্থাপনের চেষ্টা করি।