Logo

রঙ সারিয়ে দেবে সব অসুখ!

অনিন্দ্য বাংলা
রবিবার, এপ্রিল ১২, ২০২০
  • শেয়ার করুন

রঙ সারিয়ে দেবে সব অসুখ!

শেখ অনিন্দ্য মিন্টু :

মহাবিশ্বসহ পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে অসংখ্য রঙ। চোখ মেলে তাকালেই দেখা যাবে কত বিচিত্র রকম রঙ আমাদের আশে পাশে। এই রঙ এর উৎস কোথায়? রঙ এর উৎস হচ্ছে আলো, আলো হচ্ছে তরঙ্গ সমষ্টি। বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যর আলো যখন আমাদের চোখে এসে আঘাত করে তখন রঙের উৎপত্তি হয়। কোন বস্তুর নিজস্ব রঙ নেই যখন কোন বস্তুর উপর পতিত তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের আলোর প্রতিফলন ঘটে এবং আমাদের চোখে ফিরে আসে তখনই আমরা কোন জিনিস দেখতে পাই। পৃথিবীর প্রতিটি বস্তুই কোন না কোন রঙ শোষণ করে। যেমন গাছের সবুজ পাতা, সে অন্য রঙগুলো শোষণ করতে পারে কিন্তু সবুজ রঙ শোষণ করতে পারে না বিধায় পাতার রঙ হয় সবুজ। এভাবেই যে বস্তু সূর্যের যে রঙ শোষণ করতে পারে না তার রঙ হয় সেটাই আর সব রঙ যে বস্তু যে শোষণ করে তার রঙ হয় কালো বা সাদা। কালো-সাদা আলাদা কোন রঙ নয়; সব রঙএর মিশ্রণে সাদা বা কালো রঙ তৈরী হয়। আলো ছাড়া আমরা কোন রঙ কে দেখি না। স্থান, সময়, অবস্থার প্রেক্ষিতে অর্থাৎ আলোক তরঙ্গের হ্রাস বৃদ্ধির কারণে রঙ এর পরিবর্তন ঘটে। উদাহারণ স্বরূপ- সকাল বেলায় ঘাসকে ধুসর সবুজ বর্ণের মনে হয় কিন্তু বিকাল বেলায় এই ঘাসকেই গাঢ় সবুজ দেখা যায় । রাতে হলুদ রঙকে সাদা মনে হয় আর নীল রঙকে কালো মনে হয়। লাল, কমলা, হলুদ, সবুজ, আকাশী, নীল এবং বেগুনী রঙ যখন এক সাথে আমাদের চোখে প্রতিফলন ঘটে তখন আমরা সবকিছুকে সাদা দেখি। এভাবেই রঙ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকম দেখা যায়। রঙ তার পারিপাশ্বিক অবস্থা অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। বিশেষ কয়েকটি রঙ এর বিশেষ কিছু গুণ আছে। যেমন- লাল, হলুদ, কমলা রঙ আমাদেরকে উষ্ণ এবং সাহসী করে তোলে। নীল এবং সবুজ রঙ আমাদেরকে শীতল এবং শান্ত করে তোলে। মূল রঙ তিনটি। লাল, নীল, হলুদ। এ তিনটি রঙকে প্রাইমারী বা মৌলিক রং বলা হয়ে থাকে।

আমাদের এই পৃথিবীতে রঙ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, রঙ চিন্তাকে প্রভাবিত করে, ক্রিয়াকে পরিবর্তন করে এবং প্রতিক্রিয়া ঘটায়। এমন অনেক রঙ আছে আমাদের চোখকে বেদনাদায়ক করে অথবা শান্ত এবং শীতল করে তোলে, রঙ রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে, রঙ ক্ষুধা নিবৃত্ত করতে পারে, রঙ পীড়ন বৃদ্ধি করে, দৃষ্টিশক্তি কমিয়ে দেয়, দেখার ক্ষমতা ধ্বংস করে দেয়, কর্মীর ভুল বাড়িয়ে দেয়, উজ্জল রঙ নিরাপত্তার উপর ব্যপক প্রভাব ফেলে। কিছু কিছু রঙ আনন্দ এবং কিছু কিছু রঙ বিরক্তি সৃষ্টি করে। অনেক ধরনের ডিভাইজের উপর রঙ ব্যবহার স্থির নয় এবং রঙ এর বহুমূখী ব্যবহার বিদ্ধমান। রঙ সঠিকভাবে ব্যবহারের ফলে শক্তির ব্যয় বা ব্যবহারকে কমাতে পারে। কিন্তু রঙ এর ভুল ব্যবহারের ফলে পৃথিবী এবং পরিবেশ দুষিত হতে পারে। যোগাযোগের শক্তিশালী মাধ্যম হিসাবে রঙকে ব্যবহার করা হয়। ট্রাফিক সিগন্যালে লাল, সবুজ ও হলুদ রঙ এর ব্যবহার রয়েছে। এখানে রঙ একটি সাংকেতিক আদেশ হিসাবে কাজ করে থাকে। যেমন- লাল মানে থামো, সবুজ মানে যাও। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক যন্ত্রের অন ও অফ বোঝাতে লাল এবং কালো রঙ ব্যবহার করা হয়। ঋণাতক এবং ধনাত্বক বোঝাতেও রঙকে ব্যবহার করা হয় যেমন- লাল মানে পজেটিভ, কালো মানে নিগেটিভ। এছাড়াও কোন একটি উৎপাদিত পণ্য, ঔষধ, ওয়েব পেজ, চলচ্চিত্র, চিত্রশিল্প, মুদ্রণ সামগ্রী (বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোগো, পোষ্টার, কভার প্রচ্ছদ, কার্টুন) ইত্যাদিতে রঙ এর বিভিন্ন অর্থবোধক ব্যবহার দেখা যায়।

যুদ্ধক্ষেত্রেও রঙ এর অর্থবোধক ব্যবহার রয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে লাল মানেই বিপদ, সাদা মানেই শান্তি এবং লাল সাদার কম্বাইন্ড সাহায্য এবং আশ্রয় বোঝায়। এক্ষেত্রে রেডক্রসের লেগোটি সাহায্য এবং আশ্রয়ের বার্তা বহন করে। রাজনীতিতে রঙ এর বহু ব্যবহারের প্রচলন রয়েছে। বিভিন্ন দেশের পতাকায় রঙ এর অর্থগত ব্যবহার রয়েছে। বাংলাদেশে পতাকার সবুজ রঙটি বাংলাদেশের সবুজ পরিবেশেরই প্রতীক বহন করে আর লাল রঙ এর বৃত্তটি শক্তি এবং স্বাধীনতার প্রতীক বহন করে। অধিক পরিমাণে রঙ কিংবা উজ্জ্বল রঙ ব্যবহারে মানুষের দৃষ্টিশক্তির সমস্যা তৈরী করে। শুধু তাই নয় অপরিমিত রঙ ব্যবহারে স্মৃতি শক্তি কমিয়ে দিতে পারে।

রঙ এর প্রভাব আমাদের জীবনে এমন একটি অভিজ্ঞতা যা স্পষ্ট ভাবে বলা অসম্ভব, এটা এমন অবস্থা যে কারো নির্দিষ্ট অভিজ্ঞতা নেয়, সবাই একটা সমষ্টিক যুক্তির মধ্যে থাকে। আমাদের স্মৃতিশক্তিকে রঙ কিভাবে প্রভাবিত প্রভাবিত করে এ বিষয়ে একটি গবেষণার ফলাফল তুলে ধরছি। একদল মানুষ এই ক্ষেত্রে অনুসন্ধান করেছিল কুবে নগরীতে ভূমিকম্পের ফলে যারা আহত অবস্থায় বেঁচে ছিল। তারা নিজেরা এটা বর্ণনা করেছিল, ভূমিকম্পের সবচেয়ে বিপদজনক অবস্থায় তারা তাদের স্মৃতিশক্তি থেকে বর্ণ অনুভূতি হারিয়ে ফেলেছিল তারা শুধু এইটুকু স্মরণ করতে পারছিল যে সাদা কালো কিছু ঘটতে যাচ্ছে। একই ধরণের আর একটি পরীক্ষা ইটালীতে করা হয়েছিল। কিছু সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীকে সাদা কালো এবং রঙিন জিনিসপত্র দেয়া হয়েছিল ছবি আঁকার জন্য, দেখা গেছে সাদা-কালো জিনিসপত্র পাওয়ার সময় তারা উদ্বিগ্ন ছিল এবং রঙিন জিনিসপত্র পাওয়ার সময় তারা খুব খুশি ছিল। স্মৃতিশক্তির উপর রঙ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তার প্রমাণ হলো বিভিন্ন ধরনের নোট বিভিন্ন ধরণের রঙএ রঞ্জিত করার ফলে মনে রাখা সহজ হত। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো হলুদ রঙটি মানুষের মনের মধ্যে সবচেয়ে বেশী প্রভাব বিস্তার করে এবং হলুদ রঙ মানুষ বেশী মনে রাখে। কেউ কেউ মনে করেন, গোলাপী রঙ এর লেখা সাদা কিংবা হলুদের চেয়ে বেশী স্মরণযোগ্য।

কালার সাইকোলজী বলতে বুঝায় মানুষের ব্যবহার অনুভুতির উপর রঙ এর বিশ্লেষনাত্বক প্রভাবকে। যেমন জন্ডিস দূর করতে আল্ট্রাভায়োলেট আলো ব্যবহার করা হয়। প্রতীক হিসেবে লাল রঙ ব্যবহার করা হয় বিপদকে নির্দেশ করতে। বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে লাল রঙ এর একটা বড় প্রভাব আছে । অন্যদিকে বিপদের রঙ হিসেবে হলুদ এবং কালো রঙ ব্যবহৃত হয়। রঙ এর প্রতীক হিসেবে সবুজ রঙ কোন একটি সংস্কৃতি বা জাতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার হয় কিন্তু কালার সাইকোলজীতে সবুজ রঙ ভারসাম্যের সাথে সংযুক্ত। কালার সাইকোলজী সম্পর্কে এখন পর্যন্তও ব্যাপক গবেষণা করা হয় নাই। ভবিষ্যতে বিকল্প মেডিসিন হিসেবে কালার সাইকোলজীর ব্যবহার হতে পারে। কালার সাইকোলজীস্টদের অনেক সময় বলা হয় কালার কনসাল্টটেন্ট। তারা বলে থাকেন যে লাল রঙ এর ক্ষেত্রগুলো উষ্ণতর দৃশ্য হিসেবে প্রতীয়মান হয়। যেখানে নীল এবং সবুজ রঙ এর মধ্যে ঠান্ডা জাতীয় উদ্দেশ্য প্রতীয়মান হয়। লাল রঙ কর্মঠ এবং উত্তেজক হিসেবে ব্যহার করা হয়। সবুজ এবং নীল রঙ পরোক্ষ এবং নিরবতা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের মনস্তাত্বিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে, লাল রঙ যতই বাড়ানো যায় ততই নার্ভাস সিস্টেমকে উত্তেজিত অবস্থায় পরিণত করে। একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে ভারউত্তোলনকারীরা নীল রঙ রুমে ভাল পারফরমেন্স করতে পারে। এবং অন্য একটি পরীক্ষায় দেখা গেছে শিশুরা হলুদ রঙ এর রুমে অনবরত কাঁদতে থাকে। (তথ্যসূত্র ঃ ড. আলেকজান্ডার ক্সসাস, পি.এইস.ডি, আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর বায়োসোশাল রিচার্স)

এমন অনেক রঙ আছে যেগুলো মস্তিস্কের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যে রঙ কখনও ব্রেইন বা মস্তিস্কের বিরুদ্ধাচরণ করে না। কিছু রঙ পরিবেশ ও মনযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তেমনি রঙ মস্তিস্কের সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরী করতে গুরুত্বপূর্ণভাবে ভূমিকা পালন করে। শিক্ষার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত রঙ কোনটি? অথবা কোন ধরনের রঙ বিরক্তিকর বা মনযোগকে দুরে সরিয়ে দেয়? কি ধরনের রঙ ছেলেমেয়েদের আকর্ষণ করে? এ বিষয়ে দেখা যায় যে উজ্ঝল এবং উৎফুল্ল রঙ ছেলেমেয়েদের আকর্ষণ করে। সর্বক্ষেত্রেই রঙ শিক্ষার উপর প্রভাব বিস্তার করে? স্কুলের দেয়ালে কি ধরণের রঙ করলে তাতে ছেলেমেয়েদের উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির উদ্রেক ঘটায়? এ প্রসঙ্গে একটি গবেষণার ফলাফল উল্লেখ করা যায়। সবুজ বা গোলাপী রঙ হলো এক্ষত্রে সবচেয়ে উপযোগী। রঙ হলো একটি প্রতিধ্বনিকারী অভিজ্ঞতা যা চিত্রকর্ম বা সঙ্গীত যা স্পষ্টরূপে বর্ণনা দেয়া অসম্ভব। এটা নিশ্চিত ভাবেই এক একজনের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই ভিন্ন ভিন্ন হয়। রঙ এবং স্মৃতি একটি জটিল ইস্যু, কারণ মানুষ গতিশীল, স্থীর নয়, দোদুল্যমান। যখন একটি রঙ কোন দ্রব্যের সাথে সারবস্তু হিসেবে সম্পর্ক স্থাপন করে তখন সেটাকে কার্যক্রম রঙ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। উদাহণস্বরূপ সবুজ রঙ ব্যাপক ভাবে জৈব, স্বাস্থ্যকর এবং প্রাকৃতিক দ্রব্য প্যাকেজিং হিসেবে ব্যবহৃত হয় কারণ এটা সবুজ ঘাস এবং প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, উদাহরণস্বরূপ নীল সার (নাইট্রোজেন উপস্থিতি নির্দেশ করে।) উদাহরণ স্বরূপ সবুজ হলুদের ভাল সমাহার কারণ তারা নিবিড়ভাবে একে অন্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

ঔষধের নির্দেশাবলীর ক্ষেত্রে রঙ গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখে। মিশরে অতি প্রাচীনকালে ঔষধের মূল উপকরণ মাটি অথবা রুটির সাথে গোলাকার বল সাথে মিশিয়ে গোলাকার বল তৈরি করা হতো। পরবর্তী ৫০০০ হাজার বছর পরে বিশ শতক পর্যন্ত বড়ি ছিল গোলাকার এবং সাদা। এতে কোন বর্ণের অস্তিত্ব ছিল না। ঔষধ শিল্পে ৬০ দশকে রঙ এর ব্যবহার শুরু হয় এবং ১৯৭৫ সালে তা তরান্বিত হয় সফট জেলের মাধ্যমে। এটা এক ধরনের ক্যাপসুল। রঙিন ঔষধের নির্দেশাবলী ছিল প্রথমবারের মত উজ্জল বর্ণ, চেরীর‌্যাট, লাইম গ্রীন, ট্যাগী ইয়েলো প্রথম বাজারে আসল। আজকের জেল ক্যাপসুল ৮০ হাজার রঙ এর সমাহারে প্রস্তুত হয়। বিভিন্ন ট্যাবলেট অব্যাহত নতুন প্রযুক্তি এবং অত্যন্ত রঙিন আবরণ যুক্ত হয়ে বাজারে আসছে। বিভিন্ন বড়িগুলো অধিকতর ভোক্তাদের কাছে আকর্ষণীয় হয় রঙএর জন্য এবং এর সাথে সাথে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো উপকৃত হয় রঙ এর কারণে।

অনুসন্ধানীমূলক বিভিন্নরকম পরীক্ষা হতে দেখা যায় যে, মহিলা পুরুষ ভিন্ন ভিন্ন রঙদ্বারা প্রভাবিত হয়। পুরুষেরা মহিলাদের চেয়ে রঙ এর প্রতি বেশী সহনশীল। প্রথমে বলা যায় যে, রঙ ভোক্তাকে নির্দেশিত অথবা অনির্দেশিত ট্যাবটেকে পৃথক করতে সাহায্য করে। অন্য একটা বিষয় বিবেচনা করা যায়, যখন রঙ ভালভাবে প্রতিনিধিত্ব করে। ঔষধীয় নিয়মাবলী উদাহরণস্বরূপ ক্ল্যাম বøু রাতে ভাল ঘুমের জন্য, তাড়াতাড়ি আরোগ্যা লাভের জন্য ডিনামিট রেড ভাল। অন্যদিকে বিবেচনা করলে বলা যায়, ফেয়ার রেড ক্যাপসুল এসিড থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য। ক্যাপসুল বিলি গ্রীন বমি-বমি ভাব থেকে মুক্তি দেয়। অধিকন্তু রঙ এর সৌর্ন্দয্য জাতীয় প্রভাব তাপমাত্রাকে অন্তুর্ভূক্ত করে। উদাহরণস্বরূপ একটি নীল বড়ি ঠান্ডা এবং একটি কমলা বড়ি গরম থাকে। দুটো নির্দেশিত পূরুষত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভায়াগ্রা এবং লিভিট্রা। ভায়াগ্রা হলো ডায়মন্ড সাইজের বড়ি যেটা ১৯৯৭ সালে বাজারজাতকরণ করা হয় এবং এটা ১.৭৪ বিলিয়ন বিক্রি হয়েছিল। ২০০২ সালে তার প্রতিপক্ষ ফারমাসিউটিক্যাল কোম্পানি লিভিটা বাজারজাত করেন যার রঙ ছিল কমলা রঙ। এটা ছিল মগজ ধোলাই মাত্র, উদ্দেশ ছিল নীল রঙ এর ভায়াগ্রা বড়ি বিক্রয় কিভাবে কমানো যায়। এবং পরবতীতে বাজার গবেষণা করে দেখা যায় যে, ভায়াগ্রা ছিল নীল রঙ এর যা অসুস্থর সমতুল্য। অন্যদিকে লিভিট্রার রঙ ছিল কমলা, যা শক্তি ও বলবানের প্রতীক। যার দরুন খুব দ্রুত এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়ে ছিল। পরিশেষে বলা যায় যে, ৮০% দৃশমান তথ্য রঙএর সাথে সম্পর্কযুক্ত এবং এটা ফার্মাসিউটিক্যাল দ্রব্যের ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে সত্য।

নীল আলো বা নীল রঙ মানুষের রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। বহির্মুখী ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষের জন্য প্রয়োজন হয় উজ্জল রঙ। রঙ মানুষের জন্ডিসের অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে। ১৭ শতকের দিকে চার্চের ধর্মযাজকগণ দেখেছিল যে, তারা যদি কোন জন্ডিসে আক্রান্ত বাচ্চাকে বেগুনী রঙএর জানালার গ্লাসযুক্ত ঘরে রাখত তাহলে ঐ সব বাচ্চাদের জন্ডিস বা বিলিরুবিনের মাত্রা কমে আসত। ভিটামিন ডি এবং সূর্যালোকের প্রভাব একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ ১৯০০ সালের প্রথম দিকে রঙ এর থ্যারাপি সবচেয়ে জনপ্রিয় ছিল। অধিক শক্তি সম্পন্ন রঙ এর শিখা কিছু একটা করতে পারে। এই সম্পর্ক অনেক বৈজ্ঞানিক বিবৃতি প্রকাশ পেয়েছে। একদল বিজ্ঞানী প্রকাশ করেছে যে রঙ রাসায়নিক বিক্রিয়া হিসেবে কিভাবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এবং রঙ এর সত্যিকারের মনোজাগতিক মূল্যবোধ আছে। একটা সময় এটা অনুভব করা হবে এবং রঙ একটি নির্দেশক বিষয় হিসেবে পাওয়া যাবে। এটাদ্বারা কি বোঝা যাবে তা হচ্ছে বিশ বছরের মধ্যে একটি ডায়াগনোষ্টিক সিষ্টেম চালু হবে। আপনাকে হয়তো একটি চেয়ারে বসতে দেয়া হবে, কিন্তু কিছু করতে দেয়া হবে না, আপনি শুধু আপনার চোখ খোলা রেখে আপনার সম্মুখে কিছু জিনিস দেখতে হবে এবং এর মধ্যে আপনার হার্টের অবস্থা, আপনার শারীরিকবৃত্তির কার্যক্রম, মানসিক অবস্থা, সাধারণ স্বাস্থ্য, সাহসিকতা, পছন্দ, অপছন্দ, আবেগ, উদ্দীপনা এবং সার্বিকভাবে, আপনার স্নায়ুতন্ত্র ও শরীরের সম্মুখ ভাগ বলে দিতে পারবে।

কিছু ছেলেমেয়েদের উপর গবেষণা করে দেখা গেছে-নীল এবং সবুজ রঙ তাদেরকে আনন্দপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি করে অন্য দিকে লাল, কালো এবং হলুদ রঙ এর সমন্বয় তাদেরকে বেদনাগ্রস্ত করে তুলে। আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব সাইন্স রঙ থেরাপির উপর একটি প্রোগ্রাম করেছিলো যার নাম ছিলো কালার ডাইট। লাল, হলুদ, কমলা রঙ স্থায়ীভাবে শরীরের ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে। এবং নীল এবং সবুজ রঙ ওজন বৃদ্ধি করে। নীল রঙ এর পেটে খাবার কম খাওয়া হয়। কমলা রঙ ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। সাদা রান্নাঘর, সাদা বাথরুম ভাল। ক্রেতাদের আকর্ষণ করার জন্য বিল্ডিং এর বাহিরে হলুদ কালার ব্যবহার করা যেতে পারে। সবুজ রঙ মানুষের জন্য উপকারী হলেও খাদ্যজাত বা প্যাকেজিং এর জন্য সবুজ রঙ উপযোগী নয়। কয়েক বছর আগে একটি ডকুমেন্টারী থেকে পাওয়া গেছে যে, কমলা এবং গোলাপী কালার সন্ত্রাসী তৎপরতা কমিয়ে দেয়। কিছু জেলখানার ভেতরে এ রঙ প্রয়োগ করে এর উপকারী প্রভাব পাওয়া গেছে।

কয়েক বছর পূর্বে যুক্তরাষ্টের আদালত এম ব্রিডস নামক এক ব্যক্তির অভিমত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন কারণ তিনি নীল রঙ এর উপর বেশি প্রাধান্য দেন। নীল হিমায়িত খাদ্যদ্রব্যকে সহজেই সতেজ রাখে। তাই আদালত নীল রঙকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই রকম আর একটি নিষেদ্ধাজ্ঞাজারী করেছেন যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত। ক্যামবেলের খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের উপর। তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের লেবেলে স¤পূর্ণ হলুদ বা কমলা রঙ ব্যবহার করত। যার ফলে রঙ এর ব্যবহার অচিরেই নিঃশেষ হয়ে যেত, যার ফলে আদালত নিষেদ্ধাজ্ঞাজারী করেন। অনেক ব্যবসায়ীগণ রঙ এর প্রাধান্য বিস্তার করার জন্য, রঙএর ব্যবহারকে ধরে রাখার জন্য, রঙ এর উপর আইন তৈরি করেন। তারা বলেন যে, কোন প্রতিষ্ঠানের লেবেল এর উপর শুধু একটি রঙ ব্যবহার করতে হবে এবং এটা প্রথমে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি পেলেও পরে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে আইন হিসেবে। যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত এই বলে স্বীকৃতি দেয় যে, একটি রঙ এর পর একটি আকর্ষণীয় রঙ ব্যবহারের ফলে আকর্ষণধর্মী রঙ এর ব্যবহার বা আকর্ষণ একদিন নিঃশেষ হয়ে যাবে এবং পরবর্তীতে নতুন কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে তারা আর কোন আকর্ষণীয় রঙ ব্যবহার করতে পারবে না কারণ দেখা যাবে এই আকর্ষণীয় রঙ এর ব্যবহার পূর্বেই নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে।

রঙ পছন্দের বিষয়ে বয়সের একটি চমৎকার ভুমিকা রয়েছে। বৃদ্ধ এবং শিশুরা গাঢ় কালার পছন্দ করে থাকেন এবং তরুণ-তরুণীরা হালকা রঙ পছন্দ করেন। অনেক মহিলা আছেন গর্ভধারণের সময় তাদের প্রিয় রঙ এর পরিবর্তন ঘটে। রঙ এর অপরিমিত ব্যবহার, কনট্রাষ্টের অসঙ্গতি, সামঞ্জস্যহীনতা বা ভুল ব্যবহারের কারণে মাথাব্যথা, বমিভাব, অনিদ্রা, দৃষ্টিহীনতা ও খিটখিটে মেজাজের মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। আমাদের দেশে রঙ এর ব্যবহার সংক্রান্ত কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আছে কিনা জানা নেই। তবে অনেক দেশে রঙ ব্যবহার সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট নীতিমালা রয়েছে। বিশেষ করে প্রকাশনা, মুদ্রণশিল্প, প্যাকেজিং শিল্পে রঙ ব্যবহারের উপর বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা/গুরুত্ব আরোপ করা হয়। সেখানে যত্রতত্র যেকোন রঙ ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে। শধু তাই নয় প্যাকেজ শিল্পে রঙ এর পরিমাণগত বিষয়টি উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশে নিয়ম ছাড়াই যেকোন রঙ ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে বৃটিশ আমল থেকে সরকারী কাজে খয়েরী, চকলেট বা গাঢ় লাল রঙ ব্যবহার দেখা যায়। রেল গাড়ী, ডাকবাক্স সরকারী অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে এ রঙ এর বহুল ব্যবহার রয়েছে। খয়েরী বা চকলেট রঙটি মানুষ ও পরিবেশের জন্য কতটুকু সহায়ক তা বলাটা মুশকিল। তবে লন্ডনের একটি এলাকায় ব্রীজে ভুল রঙ (উত্তেজক/হট কালার) ব্যবহার করার কারণে সে এলাকায় আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিলো। পরবর্তীতে ব্রীজ এর রঙ পরিবর্তন করায় ঐ স্থানে ৬০% আতœহত্যার প্রবণতা কমে গিয়েছিল। দেয়ালে ওয়ার্ম বা উগ্র কালার ব্যবহারের ফলে একটি এলাকায় চুরি, ছিনতাই, ঝগড়া, খুন বেড়ে গিয়েছিল।

কারাগারগুলোতে সবুজ বা নীল রঙ ব্যবহার করার ফলে হাজতীদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও রুক্ষতা কমে যাওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। সন্ত্রাস, সন্ত্রাসী তৎপরতা ও মাদকাসক্ত আমাদের দেশে একটি জাতীয় সমস্যা। আমি মনে করি আমাদের দেশে অপরিমিত ও অনিয়ন্ত্রিত রঙ ব্যবহার এর একটি অন্যতম কারণ। বিভিন্ন শহর, শিল্প প্রতিষ্ঠান ও রাস্তাঘাটের আশে-পাশে দোকানপাটের দেয়ালে পরিমিত শান্ত রঙ (কোল কালার) যেমন, সবুজ, নীল, গোলাপী, সাদা রঙ ব্যবহার বাধ্যতামূলক এবং প্রতিষ্ঠানের জন্যে সার্বজনীন রঙ ব্যবহার আইন প্রণয়ন করলে মানুষের মধ্যে সহনশীলতা ও সহমর্মিতা বৃদ্ধি পাবে। এ ক্ষেত্রে রঙ এর অপচয়রোধ যেমন কমবে তার সাথে দৃষ্টি, আচরণ, স্বাস্থ্য এবং অপরাধ প্রবণতার মত অনেক জটিল সমস্যার সমাধান সহজ হতে পারে। কালারথেরাপী হতে পারে ভবিষ্যত চিকিৎসার নান্দনিক পদ্ধতি।

একবার ভাবুনতো, আপনি অসুস্থ্য হয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার আপনাকে কোন রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করেই রঙ নিয়ে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন। আপনার কি রঙ পছন্দ? ছোটবেলায় কি রঙ পছন্দ করতেন? ঘরের দেয়ালে কি রঙ করা আছে,? আপনার বিছানার চাদরটি কোন রঙ এর? কোন রঙ এর জামা পরতে ভালবাসেন? কোন রঙ এর খাবার পছন্দ করেন? কোন রঙ আপনার কাছে খারাপ লাগে? সকাল বেলায় কোন রঙ এর খাবার খেয়েছেন। রঙ নিয়ে যতসব বিরক্তিকর প্রশ্ন! আপনি েেক্ষপে গেলেন। বললেন এসব কি শুরু করলেন ডাক্তার সাহেব? ডাক্তার সাহেব হাসতে হাসতে বললেন, “ডোন্ট মাইন্ড, আপনার তো বড় কোন সমস্যা নেই। আপনার ঘরের দেয়ালে লাল রঙ থাকার কারণে হার্টবিট ও রক্তচাপ বেড়ে যাচ্ছে। দেয়ালের রঙ বদলে ফেলুন এবং এই নিন” বলে তিনি আপনার দিকে তিনটি বই এগিয়ে দিলেন। ঔষধের বদলে বই এবার নিশ্চিত ডাক্তারকে একজন শীঘ্র সম্ভাব্য পাবনার যাত্রী ভাবতে পারেন। বইগুলো উল্টে দেখলেন এর মধ্যে কিছুই লেখা নেই। একেক পৃষ্ঠায় একেক ধরনের রঙ। সবুজ, গোলাপী, নীল। আরেকটি বই উল্টিয়ে দেখলেন প্রতিটি পৃষ্ঠায় বিভিন্ন রঙ এর কম্পোজিশন। আরেকটি বইয়ে বিভিন্ন রঙ এর পেইন্টিং, তখন কি করবেন? এই বইগুলো কয়েকদিন পরপর নির্দিষ্ট সময়ে দেখলে আপনার প্রেসার বা ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে পারে। এটা শুধু কালারথেরাপী ও কালার সাইকোলজিস্টের দ্বারা সম্ভব।

স্থান, কাল, পাত্র অর্থাৎ দেশ, জাতি এবং সংস্কৃতিগতভাবে রঙকে প্রতীকিকরণ করা হয়েছে। একই রঙ বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অর্থে ব্যবহার হতে পারে। তবে এমন কিছুসংখ্যক রঙ রয়েছে যে এগুলো প্রায় সবখানেই একইরকম অর্থ প্রকাশ করে। একে আমরা বলতে পারি রঙ এর সার্বজনীনতা। যেমন গোলাপী রঙ নারীর প্রতীক এবং হালকা নীল রঙ পুরুষের প্রতীক বুঝায়। এটা সারা পৃথিবীব্যপী স্বীকৃত। আর একটি লক্ষণীয় বিষয় হলো ব্যক্তিগত পছন্দ। সব রঙ সবার কাছে যেমন ভালো লাগে না, তেমনি ব্যক্তিগত পর্যায়েও স্থান, কাল, পাত্র ভেদে রঙ পছন্দে তারতম্য ঘটে । যেমন কেউ হয়ত নীল শার্ট পরতে ভালবাসেন কিন্তু নীল জুতা পছন্দ করেন না। আবার সকালে কেউ লাল জামা পরলে রাতে তিনি সাদা বা নীল জামা পরেন। কেউ সোফার কভার নীল রঙ পছন্দ করলেও রুমের দেয়ালের নীল রঙ করতে পছন্দ করেন না। যেহেতু ভালোলাগার বিষয়টি আপেক্ষিক।

রঙ বিষয়ে একেকজনের অনুভুতি একেক রকম। কারো পছন্দের রঙ অন্যের কাছে খুব বাজে মনে হয়। শুধু তাই নয়, কোন রঙ সময় বা আলোর তারতম্যের কারণে ভালো বা মন্দ মনে হতে পারে। যেমন সকাল বেলায় ঘাসের রঙকে ফ্যাকাশে সবুজ দেখায় কিন্তু বিকাল বেলায় একই ঘাসকে চমৎকার সবুজ দেখায়। বিভিন্ন পরীক্ষা হতে দেখা যায় যে, পুরুষেরা মহিলাদের চেয়ে রঙ এর প্রতি বেশী সহনশীল।

সবুজ রঙ মানুষের চোখের জন্যে সবচেয়ে দীর্ঘ স্থায়ী এবং নিরাপদ রঙ। সবুজ রঙ এর আরোগ্য করার ক্ষমতা খুব বেশি। এ রঙ ব্যাথা দুর করতে পারে। যেসব মানুষ সবুজ রঙ এর পরিবেশ এর মধ্যে কাজ করে তাদের পেটের ব্যাথা অপেক্ষাকৃত কম হয়। যেসব শিশুদের দাঁত গজাতে শুরু করে তাদের জন্য সবুজ রঙ খুবই উপকারী। লন্ডনের ব্ল্যাক ফ্রিয়ার ব্রিজের পার্শ্ববর্তী এলাকাবাসীদের মধ্যে যখন আত্মহত্যার প্রবণতা খুব বেড়ে গিয়েছিল তখন বø্যাক ফ্রিয়ার ব্রিজকে সবুজ রঙএ রঞ্জিত করা হয়। এতে আত্মহত্যার প্রবণতা ৬৬% কমে গিয়েছিল। সবুজ রঙ শারীরিক এবং দৃষ্টির দিক দিয়ে চমৎকার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করে। অনেক দেশে নববিবাহিত বধুরা তার সন্তান উৎপাদন ক্ষমতার প্রতীক হিসাবে সবুজ রঙএর পোষাক পরিধান করে। পশ্চিম ইউরোপে আইরিশ আর্য জাতীরা সবুজ রঙকে সৃষ্টিকর্তার সমৃদ্ধতার প্রতীক হিসাবে মনে করত। বিশেষ করে মুসলমানরা সবুজ রঙকে আনন্দ এবং পবিত্র রঙ হিসাবে ব্যবহার করে থাকে। সবুজ রঙ মানেই শান্তির রঙ। হযরত মোহাম্মদ (সঃ) সবুজ রঙএর পোষাক বেশি পরিধান করতেন। এমনকি ইসলাম ধর্মের পতাকায় সবুজ রঙ ব্যবহার করা হয়েছে। একসময় মিলেনিয়ামে খৃষ্টানগণ সবুজ রঙকে বাতিল এবং অপছন্দ করতে শুরু করে কারণ সবুজ রঙ মুসলমান স¤প্রদায় বেশি ব্যবহার করে থাকেন। যার প্রেক্ষিতে বিশ শতকের দিকে আমেরিকান সংস্কৃতিতে সবুজ রঙ যৌনতার প্রতীক হিসাবে ব্যবহার করার প্রচলন শুরু হয়। চীন দেশে সবুজ রঙকে ব্যভিচারের প্রতীক হিসাবে দেখানো হয়। কোন স্ত্রী যদি তার স্বামীর সাথে প্রতারণা কিংবা ব্যভিচার করে তাহলে ঐ মহিলাকে শাস্তি স্বরূপ সবুজ রঙ এর টুপি পরিধান করানো হয়। সবুজ রঙ শিক্ষা এবং মনযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

কেউ কেউ বলেন বেদনার রঙ হবে লাল। নীল আকাশ দেখলে ভালো লাগে এবং আনন্দ লাগে এটা ঠিক কিন্তু নীল আকাশের দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকলে বিষন্নতা বা শূণ্যতা তৈরী হয় এটাও প্রায় নিশ্চিত। বেদনার রঙ নীল এ কথাটি অনেক পূর্ব থেকেই স্বীকৃত হয়ে আসছে। নীল বেদনার রঙ এটা কোন ব্যক্তিগত অভিমত বা কবিদের কবিতার কোন উপমা নয়। রঙ বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন যাবত গবেষণা করে দেখেছেন যে, নীল রঙ হিমায়িত খাদ্য দ্রব্যকে বেশী সতেজ রাখে। নীল রঙ অপরাধী কারাবন্দীদের, যারা বেপরোয়া আচরণ করে তাদেরকে শান্ত করে তুলে। নীল রঙ মানুষের ক্ষুধাবৃদ্ধি কমিয়ে দেয়। নীল এবং সবুজ রঙ কোন উত্তেজিত মানুষকে শান্ত করে তুলে। অধিক্ষণ নীল রঙ এর দিকে তাকিয়ে থাকলে বিষন্নতা তৈরি হতে পারে এবং বিষন্নতাই মানুষের মনে বেদনার সৃষ্টি করে। নীল রঙ শারীরিক ওজন কমিয়ে দেয়। বিষের রঙ নীল। সাপের দংশনে মানুষের চেহারা নীল হয়ে যায়। অক্সিজেনের অভাবে কেউ মারা গেলে তার শরীর নীল হয়ে যায়। শরীরের কোন অংশে ব্যথা তৈরী হলে সে অংশ নীল দেখায়। নীল রঙ মানুষের শরীরের রক্তচাপ কমিয়ে দেয়। এজন্যে নীলকে বেদনার রঙ বলা হয়।

তবে প্রযুক্তি বা যোগাযোগ বুঝাতেও নীল রঙ ব্যবহার করা হয়। মাইক্রোসফট, ইন্টেল, গিগাবাইট, এইচপি, সিটিসেল, একটেলসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্পোরেট কালার বা লোগোতে নীল ও কমলার ব্যবহার রয়েছে। মাইক্রোসফট তাদের উইনডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ডেফল্ট ওয়াল পেপারে সলিড নীল রঙ ব্যবহার করেছে

শক্তি, সাহস, উদ্দীপনা, আনন্দ, যুদ্ধ, খুন, রক্ত, আক্রমণ ইত্যাদির প্রতীক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কোন লিখা বা বস্তুকে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে লাল রং ব্যবহার করা হয়। বিশেষ বৈশিষ্ট্য বা গুরুত্ব বুঝাতে লাল ব্যবহার করা হয়। যেমন লাল রঙ এর পাসপোর্ট, ফোন, গাড়ী এগুলো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। একজন খুন হওয়া বা আঘাতপ্রাপ্ত মানুষের পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাল রক্তের দৃশ্য আমাদের ভেতরে ভয়, ভীতি ও ঘৃণা তৈরী করে এটা ঠিক কিন্তু হাসপাতালে মুমূর্ষ একজন রোগীকে যখন রক্ত দেওয়া হয়, রক্তের ব্যাগ থেকে একটি একটি রক্ত বিন্দু ঝড়ে পড়ার যে দৃশ্যটি সেটিতে আমরা ভীত বা বিচলিত হই না। এখানে রক্তের একটি লাল ফোটা বা বিন্দু জীবনের অর্থ বহন করে। একটি লাল রঙ এর ফোটা বা ড্রপ মানেই জীবন, আনন্দ, শক্তি।আসুন রঙ সম্পর্কে সচেতন হই।

“নিরাপদ রঙ ব্যবহারে
পরিবেশ দূষণ রোধ করে”