Logo

সাবান পেয়েছে আজ স্নানঘরে যুবতীরে একা!

অনিন্দ্য বাংলা
শুক্রবার, এপ্রিল ৫, ২০২৪
  • শেয়ার করুন

তাওহীদ তুহিন: সাবানের সঙ্গে সিনে-সুন্দরীদের সোহাগের সম্পর্ক স্থাপনের শুরুটা হয়েছিল লাক্স টয়লেট সাবান গায়ে মেখে। সময়কাল ১৯২৯, লাক্স সাবানের প্রথম তারকা-সুন্দরী লীলা চিতনিস। তখন লাক্স সাবানের দাম দু’আনা। যদিও লাক্সের পথ চলা তারও তিন দশক আগে। উইকিপিডিয়ার তথ্যানুসারে ১৮৯৯-এ, ইউনিলিভার নিয়ে আসে ‘সানলাইট প্ল্যাক’ নামে এক লন্ড্রি সোপ, ১৯২৫-এ তা রূপান্তরিত হয় ‘লাক্স টয়লেট সোপ’ নামে। তারপর সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে তা হয়ে উঠে ‘চিত্রতারকাদের সৌন্দর্য সাবান’। দীর্ঘদিনের সেই লাক্স-চিত্রতারকার ভিড়ে, কে না ভিড়তে চেয়েছেন! টলি-বলির সেরা সুন্দরী নির্বাচন হয়েছে, লাক্সের বিজ্ঞাপনী-মুখের নিরিখে।
১৯৫৫ সালে বাংলা চলচ্চিত্রের এই মহানায়িকা লাক্স সাবানের মডেল হন। সেকেলে প্রিন্টিং প্রেসে ছাপানো বিজ্ঞাপনের শুরুতেই লেখা ছিল সুচিত্রা সেন পছন্দ করেন লাক্স টয়লেট সাবান, তারপরেই লেখা এর শুভ্রতা ও বিশুদ্ধতার জন্য। তারপরে সুচিত্রা সেনের সৌন্দর্যের রহস্য বর্ণনা করেছে এই আন্তর্জাতিক কম্পানিটি।
ইউনিলিভারের পন্য লাক্সের বিজ্ঞাপনে যুগ যুগ ধরে তারকারা মডেল হয়ে এসেছেন। কিন্তু তাই বলে পঞ্চাশের শতকেও তারকারা লাক্সের মডেল হয়েছিলেন? পঞ্চাশের দশকে তারকারা এই সৌন্দর্য সাবানের মডেল তো হয়েছিলেনই তবে এমন একজন মডেল যার নাম শুনলে কিছুটা অবাক হতেই হবে।

১৯৫৫-তে মহানায়িকা সুচিত্রা সেন যে সাবানের ‘শুভ্রতা ও বিশুদ্ধতার জন্য’ প্রচারের মুখ হন, যে-সাবান মেখে কানন দেবী বলেন, ‘কমনীয় ত্বক, সহজেই পাওয়া যায়’। মীনাকুমারী যখন ‘পাকিজা’-খ্যাত অভিনেত্রী, তিনি তাঁর সৌন্দর্য ও ত্বক-লাবণ্যের যত্ন নেওয়ার গোপন উপায়স্বরূপ ‘সর্বদা বিশুদ্ধ শুভ্র লাক্স’ সাবান ব্যবহারের কথা বলেছেন। পরবর্তীতে অপূর্ব দেহ-লাবণ্যের অধিকারী মালা সিনহার অভিমত, ‘স্নানের সময় লাক্স সত্যিই আনন্দদায়ক’। এই আনন্দদায়ক অবগাহনে তৃপ্ত হয়েছেন মধুবালা, সায়রা বানু, আশা পারেখ। লাক্সের হয়ে ১৯৮৩ সালে মিস ইন্ডিয়া হেমা মালিনী লাক্সের বিজ্ঞাপনী-মডেল হন; তাঁর বিবৃতি ছিল, ‘আমি যা চাই, পেয়ে গেছি, থ্যাংকস লাক্স’। লাক্সের সঙ্গে স্নান করে সতেজ ও তরতাজা সুন্দরীর দলে আছেন রেখা, শ্রীদেবী, জিনাত আমন, জয়াপ্রদা। সপ্রতিভ বিদূষী-সুন্দরী অপর্ণা সেনের বক্তব্য, ‘নিজের ওপর আমার, নেই কোনো অধিকার’। এরপর এই অনধিকারের বিশ্লেষণে শেষমেশ বলা হচ্ছে, লাক্স ‘সবসময় আমার রঙরূপের পরিচর্যা করে’। অভিনেত্রী শোভা সেন বলছেন, লাক্স সরের মত মোলায়েম, সুগন্ধী এই ফেনা আপনার ত্বকের যত্ন নেয়। ‘নতুন ফসল’ ছায়াছবির নায়িকা সুপ্রিয়া চৌধুরীর বিজ্ঞাপন-বক্তব্য, ‘চেহারায় আমার রূপের ছোঁয়া লেগেছে লাক্সের কোমল পরশ পেয়েছে বলেইতো’। সমকালীন অভিনেত্রী সাবিত্রীর অভিমতে, ‘আমার ত্বককে এটি মোলায়েম আর মসৃণ রাখে’। লাক্স-সুন্দরী সিরিজের অন্যতমা ওয়াহিদা রহমান জানিয়েছেন, ‘সৌন্দর্য্যের গোপন কথা হলো ত্বকের কুসুমসম কোমলতা’, যা দিতে পারে একমাত্র লাক্স সাবান।

সময়ের সরণি বেয়ে সব চিত্রতারকা সুন্দরীই লাক্স মেখে স্নান করেছেন। লাক্স-সুন্দরী হয়েছেন মাধুরী দীক্ষিত, জুহি চাওলা, করিশমা কাপুর, রানি মুখার্জি, করিনা কাপুর, ঐশ্বর্যা, আমিশা, ক্যাটরিনা। এই সুদীর্ঘ সুন্দরী-সারিতে কতিপয় সুন্দরের মুখও নজর কেড়েছে। নিশ্চয় অনেকের স্মরণে আছে লাক্সের দুধসাদা-ফেনাভরা গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো বাথটাবে টলিউড বাদশা শাহরুখ খান, আর তাঁকে ঘিরে হেমা মালিনী ও শ্রীদেবী যেমন আছেন, তেমনই আছেন জুহি চাওলা, করিনা কাপুর। তারপর লাক্স রোজ অ্যাওয়ার্ডের বিজ্ঞাপনেও প্রধান পুরুষ-মুখ শাহরুখ খান, আর সঙ্গে করিনা, করিশমা এবং শর্মিলা ঠাকুর। লাক্সের বিজ্ঞাপনে এক সময়ে শাহরুখের সঙ্গিনী হয়েছেন সুন্দরী ক্যাটরিনা। পরবর্তীতে এই জুটির ধারায় লাক্স সাবানের বিজ্ঞাপনে দেখা যায়, রিল ও রিয়েলের জুড়িতে সইফ আলি খান-করিনা এবং ইদানীং বিরাট-অনুষ্কা। উভয়ক্ষেত্রেই লাক্সের ছোঁয়ায় সুন্দরী জীবনসঙ্গিনীদের মুখমণ্ডলে চাঁদের আলো ফুটে ওঠা বিভা তাদের সঙ্গীদের বাধ্য করছে ঘরের বাতি নিভিয়ে দিতে। সময়ের সাথে-সাথে লাক্সের রঙে-রূপে এসেছে বৈচিত্র্য। সাদা থেকে গোলাপি, নীল, সবুজ, এমনকী হলুদ পর্যন্ত।