Logo

রাজীব আহসানের ছোট গল্প : কাব্যগুলো এমন হয় না কেন?

অনিন্দ্য বাংলা
শুক্রবার, জানুয়ারি ১৫, ২০২১
  • শেয়ার করুন

রাজীব আহসানের ছোট গল্প

কাব্যগুলো এমন হয় না কেন?

প্রিয়ন্তির একটা খোলামেলা ভিডিও বানিয়ে ফেলেছে অনিক। যতবার সে ভিডিওটা দেখছে ততবারই নিজের প্রতিভায় মুগ্ধ হচ্ছে। প্রিয়ন্তির মাথাটা ওই পর্নস্টারের মাথার সাথে অদ্ভুদ ভাবে সেট হয়ে গেছ। একেবারে জীবন্ত যেন। অনিক নিজেও বিশ্বাস করতে পারছে না যে এটা ফেক ভিডিও। এতটাই নিখুত হয়েছে ভিডিওটা!
ল্যাপটপের সামনে থেকে লাফ দিয়ে উঠে অনিক। মনেমনে বলে, যাক কেল্লাফতে। আনন্দে লাফ দিয়ে উঠে অনিক। এবার মূল অপারেশনে যেতে হবে।
তবে তার আগে একটু আধটু রিফ্রেশমেন্ট দরকার অনিকের। এক্ষুনি একটা গাজার কল্কে সাজাতে হবে। পিঠ ছোঁয়া লম্বা উস্কোখুস্কো চুলগুলো সামলে নেয় সে। আলমারির লুকানো কুঠুরি থেকে সব উপকরণ বের করে অনিক। গাজা দেখেই ওর নেশা চড়তে থাকে। নেশার চোটে হাত কাঁপতে থাকে তার। কাঁপা হাতেও সে দ্রুত কলকি সাজায়। গাজার পুরিয়ায় দ্রুত টান দেয়। আরামে চোখ বন্ধ হয়ে আসতে চায়। খানিক চোখ বুজে থেকে আবার ল্যাপটপের মনিটরে বুদ হয়ে যায় সে।  কোন খুত আছে কিনা আবার পরখ করে। না, কোন খুত নেই। কী নিখুত ভাবেই না ভিডিওটা বানিয়েছে সে!
এখন এই ভিডিওটা প্রিয়ন্তিকে দেখাবে। প্রিয়ন্তিকে ব্লাকমেইল করবে। নেশার টাকা যোগাড় করতে এ ছাড়া আর পথ খোলা নেই অনিকের।
ম্যেসেঞ্জারে প্রিয়ন্তির আইডি ‘প্রিয়ন্তি জাহান’ সার্চ করে অনিক। সাথে সাথেই অনেকগুলো ‘প্রিয়ন্তি জাহান’ চলে এল। কিন্তু পরিচিত প্রিয়ন্তির ছবি খুঁজে নিতে ভুল হয় না অনিকের। অনিকের সাথে ব্রেকাপের পর প্রিয়ন্তি যেন আর সুন্দর হয়েছে। আগের প্রোফাইল পিকচারটা চেঞ্জ করেছে প্রিয়ন্তি। স্বামীর সাথে প্রিয়ন্তির হাস্যোজ্জ্বল ছবিটা যেন কটাক্ষ করে চেয়ে থাকে অনিকের দিকে। গাজার কলকিতে আবার বুদ হয় অনিক। মাথাটা কেমন যেন খালি খালি লাগে।
ভিডিওটা প্রিয়ন্তিকে পাঠানোর প্রস্তুতি নেয় অনিক। কিন্তু কেন যেন দ্বিদ্ধাগ্রস্থ হয় সে। কেন যেন অনিকের সিক্সথ সেন্স বলছে প্রিয়ন্তি এই ভিডিও পাত্তা দেবে না। প্রিয়ন্তিকে সে ভাল ভাবেই চেনে। ওদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল পাঁচ বছর। একজন মানুষকে চেনার জন্য এই পাঁচ বছর তো কম সময় না!
গাঁজায় আরেকটা টান দেয় অনিক। তাহলে কি করা যায়? অনিক দ্রুত ভাবতে থাকে।
অনেক ভেবে অনিক সিদ্ধান্ত নেয় ভিডিওটা প্রিয়ন্তিকে পাঠাবে না। সে সরাসরি যাবে প্রিয়ন্তির স্বামী সুজিতের কাছে। এটা দেখলে কোন স্বামীর মাথা ঠিক থাকার কথা নয়। প্রিয়ন্তির সংসারটা আর টিকবে বলে মনে হয় না অনিকের?
কিন্তু তাতে অনিকের কি? ওর সংসার টিকুক বা না টিকুক অনিকের তাতে যায় আসে না। তার দরকার টাকা। নেশার টাকা।
তবে? অনিক দ্রুত ঘামতে থাকে। ওর গলা শুকিয়ে আসে। টেবিলের উপর থেকে পানিভর্তি জগ হাতে নেয়। মুখের সামনে উপুড় করে ঢকঢক করে গিলতে থাকে। পানি খেয়ে সটান শুয়ে পড়ে বিছানায়।
বিছানায় শুয়ে ভাবে অনিক। এই ভিডিওটা ওর লাস্ট ট্রম্পকার্ড। এটা কোন অবস্থাতেই অপচয় করা যাবে না। তাই অনিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে।
পরদিন বিকেলে বাসা থেকে বের হয় অনিক। টিশার্ট আর জিন্সের সাথে হাল মডেলের বাইক নিয়ে বের হয় অনিক। সোজা চলে আসে প্রিয়ন্তি’দের বাসায়।
প্রিয়ন্তির মা দরজা খুলে দেন। অনিককে তিনি আগে থেকেন চিনতেন। অনিক-প্রিয়ন্তির সম্পর্কের কথাও জানতেন। অনিকের হঠাৎ অগমন ভালো লাগেনা প্রিয়ন্তির আম্মার।
কিন্তু অনিকের ভাবান্তর নেই। খোলা দরজার সামনে বুক চিতিয়ে দাড়ায় সে। কেমন যেন শ্লেষ্মাজড়ানো কন্ঠে বলে,  ‘কেমন আছেন আন্টি’?
আড়ষ্ঠতা ভেংগে প্রিয়ন্তির মা বলেন, ‘তুমি এখানে এসেছো কেন অনিক’?
প্রিয়ন্তির মায়ের কথার উত্তর না দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে অনিক। সোফায় পা দুলিয়ে বসে। বলে, ‘প্রিয়ন্তির কিছু ছবি ছিল আমার কাছে। ফেরৎ দিতে এসেছি।
এই যে আন্টি এই ছবিগুলো’।
অনিক প্রিয়ন্তির মা’র সামনে সেলফোন এগিয়ে দিল। সেলফোনে সেভকরা ভিডিওটি ছেড়ে দিল।
স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেলেন প্রিয়ন্তির মা। নিজের মেয়ের এমন নগ্ন ভিডিও দেখে মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। কিন্তু ভিডিওটি যে ফেক তা তিনি বুঝতে পারলেন না।
প্রিয়ন্তির মা কাঁদতে কাঁদতে অনিকের পায়ে পড়লেন। এ ভিডিও ফাঁস হলে মানসম্মান সব যাবে বাবা। তুমি এমন কাজ করোনা।
প্রিয়ন্তির মায়ের এ আবেগ অনিকের কাছে মহামুল্যবান। এ আবেগকেই পুঁজি করতে চায় সে। তাই আরো বাড়ীয়ে দিতে চায় ভদ্রমহিলার উদ্বেগ।
হালকা কেশে অনিক ভনিতা বলে, ‘তা কী করে হয় আন্টি? সবাই জানে আমি খারাপ ছেলে। আমি নেশা করি। এটা সেটা ছাইপাস খাই। খুব মন্দ ছেলে তাই না’?
প্রিয়ন্তির মা মাথা নিচু করে থাকেন।
অনিক আবার বলে, ‘আর ওদিকে দেখেন প্রিয়ন্তির কত গুণ! সুন্দরী, স্মার্ট, পড়ালেখায় ভালো। কত গুণ ওর তাইনা! প্রিয়ন্তির শ্বশুর শাশুড়ী ওর এই গুনটার কথা জানবে না? তা কি করে হয় আন্টি’?
‘প্রিয়ন্তির মা কেঁদে ফেললেন’।
অনিক সেটা উপেক্ষা করল। হাত বাড়িয়ে বলল, ‘এই নিন আন্টি ভিডিওর একটা কপি। আংকেলকে নিয়ে অবসরে দেখবেন। আর একটা কপি প্রিয়ন্তির শ্বশুর বাড়িতে দিয়ে আসি। আল্লহ হাফেজ’।
এই বলে অনিক ফেরার পথ ধরে।
প্রিয়ন্তির মা দৌড়ে গিয়ে অনিকের পথ আটকায়।
‘তুমি যা চাও তাই দেব আমি। যা করতে বলবে তাই করবো। তবু আমাদের এতবড় সর্বনাশ করোনা অনিক’।
সেদিন থেকেই শুরু হলো ব্ল্যাকমেইলিং। অনিক প্রিয়ন্তির মা কে ব্লাকমেইল করা শুরু করল। আজ পাঁচ হাজার তো কাল দশ হাজার টাকা। পরশু আবার, এভাবে দফায় দফায়  টাকা নিতে থাকে প্রিয়ন্তির মা’র কাছ থেকে। অনিকের চাপে একেবারে চিড়েচ্যাপ্টা অবস্থা ভদ্রমহিলার। কিন্তু কী করবেন তিনি!
প্রিয়ন্তির মা বিষয়টি মেয়ের সাথে শেয়ার করতে পারে না। পাছে মেয়ের সংসার ভাংগে?
সে তার স্বামীকেও বলতে পারছে না। স্বামী হার্টের রোগী। হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে। কদিন পরেই বাইপাস সার্জারি হবে। এমন রোগীকে কিভাবে তিনি এমন একটা  খবর দেন তিনি! এদিকে তার জমানো টাকাও ফুরিয়ে গেছে। অনিকের আবদার মেটাতে সোনার অলংকারে হাত দিতে হয়েছে তাকে।
সেদিন প্রিয়ন্তির বাবার বাইপাস সার্জারি ছিল। হাসপাতেই হানা দিল অনিক। ওকে দেখেই প্রিয়ন্তির মায়ের গলা শুকিয়ে গেল।
প্রিয়ন্তির মা দু হাত জোড় করে বলে ‘আজ ক্ষমা কর বাবা। এখন হাতে কোন টাকা নেই। অপারেশনেই অনেক টাকা লেগে গেছে। ধার কর্জ করে কোনমতে ম্যেনেজ করেছি বাবা’।
কিন্তু অনিকের মন গলে না। ওর নেশার টাকা দরকার। এখুনি টাকা চাই তার।
প্রিয়ন্তির মা গলা থেকে চেন খুলে নেন। তুলে দেন অনিকের হাতে।
দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে ফেলে প্রিয়ন্তি। মার কাছে জানতে চায় কী হয়েছে? অনিককে হাসপাতেই দেখে প্রিয়ন্তির সন্দেহ আরো প্রকট হয়।
প্রিয়ন্তির মা কিছু বলেন না। শুধু চোখের জল ফেলেন।
তবে মেয়ের চাপে মুখ খুলতে বাধ্য হয় প্রিয়ন্তির মা।
প্রিয়ন্তির হাতে সেই সিডিটা তুলে দেন।
প্রিয়ন্তি একবার শুধু ভিডিওটা দেখে নেয়। রাগে তার মাথা খারাপ অবস্থা। এই অমানুষটার সাথে কিভাবে প্রেম করেছে ভেবে পায় না সে।
প্রিয়ন্তি সিদ্ধান্ত নেয় সরাসরি কথা বলবে অনিকের সাথে। একটা রিকশা ডেকে চলে আসে অনিকের বাসায়।
এ বাসায় বহুবার এসেছে সে।
অনিকের মা-বাবা চমৎকার মানুষ। উচ্চ শিক্ষিত। দুজনেই প্রাইভেট সেক্টরে চাকরি করে। একমাত্র সন্তান অনিক! পড়ালেখাতেও ভালো ছিল সে। কিন্তু কী থেকে কী হয়ে গেল!
প্রিয়ন্তির চোঁখ ভিজে আসে। অনিকদের বাসার ডোরবেল চাপে সে। অনিকের মা দরজা খুলে অবাক হয়। ‘প্রিয়ন্তি এসময়ে কেন’?
প্রিয়ন্তি বলে, ‘অনিকের সাথে দেখা করতে চাই আন্টি’।
‘না প্রিয়ন্তি? তোমার বিয়ে হয়েছে। তুমি চলে যাও’।
এবার প্রিয়ন্তি আর কান্না থামাতে পারে না। হু হু করে কেঁদে চলে সে।
হাত ধরে সোফায় নিয়ে প্রিয়ন্তিকে বসায় অনিকের মা। প্রিয়ন্তি একটু স্বাভাবিক হতেই ওনিকের মা বলেন,
‘কি হয়েছে প্রিয়ন্তি? আমাকে খুলে বলো’?
‘আমাকে বাঁচান আন্টি’।
অনিকের মা প্রিয়ন্তিকে বুকে টেনে নেয়।
প্রিয়ন্তি আনিকের মাকে সব খুলে বলে। ভিডিওটা যে সত্য না সেটাও বলে। ভিডিওটা কয়েকবার দেখার পর অনিকের মা বুঝতে পারে ফেক ভিডিও এটা। অনিকের মা নিজে সফটোয়ার ইঞ্জিনিয়ার। আইটি সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন। ভিডিওটা দেখেই বুঝে ফেলেন এটা নকল ভিডিও।
অনিকের মা বলেন, ‘আমি তোমাকে হেল্প করবো। কথা দিলাম। তোমার সম্মান বাঁচানোর দায়িত্ব আমি নিজের হাতে তুলে নিলাম। তুমি চলে যাও’।
প্রিয়ন্তি চলে যাবার পর অনিকের মা অনিকের ঘরে প্রবেশ করে। দেখে অনিক বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। অনিকের মা আস্তে করে অনিকের ল্যাপটপ নিয়ে বের হয়ে আসে রুম থেকে।
একটা পোর্টেবল হার্ডডিস্কে সবকিছু কপি করে নিলেন তিনি। ল্যাপটপটা আগের স্থানে রেখে এলেন। অনিক কিছু টের পেল না।
হার্ডডিস্ক থেকে সবগুলো তথ্য নিজের ল্যাপটপে নিয়ে নিলেন অনিকের মা। অনেক ঘাটাঘাটি করে পেয়ে গেলেন সেই ভিডিওটা। সাথে ভিডিও তৈরির এপসগুলো।
মনটা ভীষন খারাপ হলো ভদ্রমহিলার। নিজে ইঞ্জিনিয়ার। আইটি সেক্টরে কাজ করেন। তাই ছেলের হাতেও অকপটেই বিভিন্ন আইটি সামগ্রী তুলে দিয়েছিলেন। অনিকের অগ্রহদেখে তিনি খুশিই ছিলেন। কিন্তু অনিক এমন একটা কাজ করে ফেলবে ভাবতেও পারেননি তিনি।
এভাবে দুদিন কেটে গেলে। ভদ্রমহিলা ঘুমাতে পারলেন না। নিজের ছেলেকে বাঁচাতে হবে। বাঁচাতে হবে প্রিয়ন্তিকে। তার মনের ভেতর দিয়ে ঝড় বয়ে গেল।
তবে মনকে শক্ত করলেন তিনি। অনেক ভেবে একটা উপায় বের করলেন তিনি। একটা কিছু তাকে করতেই হবে। অনিকের ভিডিও এপসগুলো নিয়ে ঘাটাঘাটি শুরু করে দিলেন তিনি। আরো কিছু এপস ও সফটওয়ার নামালেন। বানিয়ে ফেললেন চমৎকার একটা ফেক ভিডিও।
দশ দিন পর।
গভীর রাত। অনিকের মা এলো অনিকের ঘরে। অনিক জেগেই ছিল।
অনিকের মা ছেলের দিকে একটা পার্সেল এগিয়ে দিলেন। বললেন, ‘দেখতো বাবা পার্সেলে কি আছে’?
‘কিসের পার্সেল মা’?
‘জানিনা বাবা। একজন লোক দিয়ে গেল। তোর নামে এসেছে’।
ইতোমধ্যে অনিক পার্সেলটা খুলে ফেলেছে। পার্সেলে একটা সিডি পেল সে।
অনিক বলে , ‘একটা সিডি আছে মা’।
‘কিসের সিডি? চালিয়ে দেখ বাবা’। এটুকু বলে অনিকের মা বারান্দায় চলে গেলেন।
অনিক সিডিটা প্লে করেছে।
হঠাৎ অনিক চিৎকার দিয়ে উঠল। না এ আমি বিশ্বাস করি না। এটা ফেক। এটা সত্য না। এটা ফেক।
অনিকের মা বারান্দা থেকে দ্রুত চলে এলেন। ‘কি হয়েছে বাবা? সিডিতে কী এমন আছে? তুই কাঁদছিস কেন’?
‘না। তোমাকে বলা যাবা না মা’? এই বলে অনিক মনিটরটা ঢেকে দিল।
‘আহা বলবি তো কি হয়েছে? সিডিতে কি ছিল? বল বাবা’?
‘না মা। তুমি চলে যাও প্লিজ। এটা তুমি না মা। তুমি হতেই পারোনা। এটা তোমার ভিডিও না’।
‘কী বলছিস যা তা। কোথায় আমি’?
এই বলে ছেলেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন তিনি।
মনিটরে ভেসে উঠে অনিকের মায়ের নগ্ন ভিডিও।
অনিক এবার চেচিয়ে উঠে। ‘এটা ফেক ভিডিও মা। কে দিয়েছে মা বল? আমি তাকে খুন করব। আমি খুন করবো মা’।
অনিকের মা খুব খুশি হয়। নিজের প্ল্যানমাফিক সব এগুচ্ছে।
হেয়ালি করে বলে, ‘আমি কী করে জানবো বাবা এটা কে করেছে? তুই আমাকে বাঁচা বাবা’।
‘ভেবোনা মা। কেও মনে হয় তোমাকে ব্ল্যাকমেইল করছে’?
‘ব্ল্যাকমেইল করবে কেন বাবা? আমরাতো কারো ক্ষতি করি নি’?
এ সময় অনিক চেচিয়ে উঠে। ‘বুঝেছি। এটা প্রিয়ন্তি করেছে। এটা প্রিয়ন্তির কাজ’।
‘কী বলিস তুই। প্রিয়ন্তি? প্রিয়ন্তি কেন করবে’?
‘ আমি জানি। প্রিয়ন্তি ছাড়া আর কেউ না’।
অনিকের মা এবার মুখে আঁচলচাপা দিয়ে কেঁদে উঠেন। বলেন, ‘কিন্তু বাবা আমার না খুব ভয় করছে। এটা যদি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়’? অনিকের মা ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেন।
বসা থেকে দাঁড়ায় অনিক, ‘তুমি ভয় পেয়োনা মা। আমি আমার জীবন দিয়ে তোমার সম্মান রক্ষা করব। আমি প্রিয়ন্তির বাসায় যাচ্ছি মা’।
‘আচ্ছা যা। কিন্তু এত রাতে যাবি প্রিয়ন্তির বাসায়? কিন্তু প্রিয়ন্তি যদি অস্বীকার করে’?
‘করবে না।
‘আগে পের্সেলটা ভালো করে দেখতো। কে পাঠলো এই সিডি? কোন নাম ঠিকান আছে কি না’?
অনিক পার্সেলটা আবার চেক করে। সেখানে কোন ঠিকানা পায় না। তবে একটা চিরকুট পায়। টিরকুটটা টাইপ করা।
দ্রুত চিরকুটটি বের করে পড়তে থাকে অনিক।
তাতে লেখা আছে
প্রিয় অনিক
সিডিটা পেয়ে অনুভূতি কেমন হচ্ছে?
মায়ের সম্মান হারানোর ভয়ে কষ্ট হচ্ছে খুব?
তাহলে কি মায়ের সম্মান রক্ষা করতে চাও?
তুমি এতদিন আমার মা কে ব্ল্যকমেইল করেছ। এখন আমি তোমাকে ব্ল্যাক মেইল করব।
বেশি চালাকি করলে এই ভিডিও চলে যাবে ইন্টারনেটে।
তবে তোমার মত অমানুষ আমি হতে পারব না।
তোমাকে একটা সুযোগ দিলাম। তুমি যদি নেশা ছাড়ো আর সব ভিডিও নষ্ট করে ফেল তবে আমিও সব ভিডিও নষ্ট করে ফেলব।
তবে তুমি যেদিন ইন্টারনেটে ভিডিও ছাড়বে তার পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমিও ছেড়ে দিব।
কী বিশ্বাস হচ্ছে না!
মা কে ভালোবাসো অনিক? কতটুকু ভালোবাসো?
আমি জানি অনেক ভালোবাসো!
তবে আর দ্বিধা কেন? চল খারাপ অনুভূতি গুলো মুছে ফেলি।
আজি। এক্ষুনি!
ইতি
প্রিয়ন্তি।
রাত তিনটা বাজে।
একটু আগে প্রিয়ন্তির আটটি সিডিতে আগুন দিয়ে নষ্ট করেছে অনিক। সবগুলো প্রিয়ন্তির নগ্ন ভিডিও। এরপর কম্পিউটার, হার্ডডিস্ক, সেলফোন থেকে প্রিয়ন্তির ফেক সব ভিডিও মুছে দিয়েছে সে।
অনিক তার মায়ের সাথে ছাদে বসে আছে। অনিকের মাথা তার মায়ের কোলে। আজ অনেক নির্ভার লাগছে অনিকের।
মায়ের কোলে মাথা রেখে শিশুরমত কাঁদছে অনিক।
অকেকদিন সে এভাবে কাঁদেনি।
******
পুনশ্চঃ
কিন্তু বাস্তবে এমনটা ঘটেনা। বাস্তবে প্রিয়ন্তির মাকে ব্ল্যাকমেইল করে অনিক। টাকা না দিতে পারায় বারবার ধর্ষণ করে প্রিয়ন্তির মা’কে। কিন্তু বিষয়টি জানতে পারে প্রিয়ন্তি।
অনিকের মা-বাবাকে জানায় প্রিয়ন্তি। কিন্তু অনিকের মা বাবা নিজের ছেলের পক্ষে সাফাই গায়। উল্টো প্রিয়ন্তি ও তার মা কে চরিত্রহীন বলে তারা।
নিজের মা বাবাকে জানানোয় ক্ষেপে যায় অনিক। ইউটিউবে ছেড়ে দেয় প্রিয়ন্তির ফেক ভিডিওটা। সাথে সাথে হাজার হাজার লাইক শেয়ার।
সহ্য করতে পারেনি প্রিয়ন্তি!
পরদিন প্রিয়ন্তি ও তার মাকে সিলিংফেনের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ।
বাস্তবের প্রিয়ন্তিরারা মরে গিয়ে বাঁচে।
জীবদ্দশায় যেন ওদের বাঁচতে নেই!
********
রচনাকালঃ ১৯. ০৫. ২০১৯ খ্রিঃ
ময়মনসিংহ