বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মোবাইল ফোন

কল মার্জিং: হ্যাকারদের নতুন প্রতারণার উপায়

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ২৩-৩-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৭২

বর্তমান ডিজিটাল যুগে প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবনকে সহজ করেছে, তেমনি এর অপব্যবহারও বাড়িয়েছে। সম্প্রতি একটি নতুন প্রতারণার পদ্ধতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, তা হলো কল মার্জিং। অনেকেই হয়তো বুঝে উঠতে পারছেন না এই কল মার্জিং কী এবং কীভাবে এটি ব্যক্তিগত ও আর্থিক নিরাপত্তার জন্য হুমকির সৃষ্টি করছে। আসুন, বিস্তারিতভাবে জানি কল মার্জিং কী এবং এর মাধ্যমে কীভাবে প্রতারণা করা হয়।
কল মার্জিং কী?
কল মার্জিং হলো একাধিক ফোন কলকে একত্রিত করে কনফারেন্স কলে পরিণত করার একটি প্রক্রিয়া। এটি সাধারণত অফিসিয়াল মিটিং, বন্ধুদের সঙ্গে একযোগে কথা বলার জন্য বা জরুরি আলোচনার জন্য ব্যবহৃত হয়। তবে বর্তমানে হ্যাকাররা এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করছে। তারা কল মার্জিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হচ্ছে, যা ব্যক্তিগত ও আর্থিক নিরাপত্তার জন্য গুরুতর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কল মার্জিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণা কীভাবে করা হয়?
সিম সুইপিং বা ফ্রড কল
প্রতারক প্রথমে একজন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তারপর আরেকজন ব্যক্তিকে কল করে তাদের কথোপকথন শুনিয়ে বিভ্রান্ত করে। এতে ভুক্তভোগী সহজেই বিশ্বাস করেন এবং প্রতারকরা তাদের গোপনীয় তথ্য হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়।
ভুয়া পরিচয় ব্যবহার
প্রতারকরা নিজেকে ব্যাংক কর্মকর্তা, পুলিশ, অথবা সরকারি সংস্থার সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে। এমনকি, তাদের কথায় বিশ্বাস করানোর জন্য কল মার্জিংয়ের মাধ্যমে তাদের কথোপকথনে একাধিক লোক যোগ করে।
পার্সোনাল ইনফরমেশন হাতিয়ে নেওয়া
কল মার্জিংয়ের মাধ্যমে কথোপকথনের মাঝে ব্যক্তিগত তথ্য যেমন ওটিপি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর বা পাসওয়ার্ড সংগ্রহ করা হয়। এসব তথ্য ব্যবহার করে হ্যাকাররা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারে এবং অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে।
ব্ল্যাকমেইল
যদি কেউ কল মার্জের মাধ্যমে আপনার কথোপকথন রেকর্ড করে রাখে, তাহলে পরে সেই রেকর্ডিংটি ব্ল্যাকমেইল করার জন্য ব্যবহার করতে পারে। এজন্য সজাগ থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কল মার্জিং প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে কীভাবে সতর্ক থাকবেন?
অপরিচিত নম্বর থেকে আসা কল সম্পর্কে সতর্ক থাকুন
যদি কোনো অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসে এবং আপনাকে ব্যাংক বা মোবাইল অপারেটরের প্রতিনিধির পরিচয়ে কিছু জানতে চাওয়া হয়, তবে তার সাথে ব্যক্তিগত বা গোপনীয় তথ্য শেয়ার করবেন না।
কল রেকর্ড ও ট্র্যাকিং ফিচার ব্যবহার করুন
মোবাইল ফোনের কল রেকর্ডিং অপশন চালু রাখুন বা কল ট্র্যাকিং সফটওয়্যার ব্যবহার করুন। এতে সন্দেহজনক কলগুলোর রেকর্ড রাখা সম্ভব হবে।
ওটিপি বা গোপন তথ্য কারো সঙ্গে শেয়ার করবেন না
যেকোনো ব্যাংক, বিকাশ বা নগদ-এর মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠান কখনোই ফোনে ওটিপি বা গোপন তথ্য চাইবে না। এমনকি কেউ যদি তা চায়, তবে বুঝতে হবে এটি প্রতারণা হতে পারে।
কল ওয়েটিং ও ফরওয়ার্ডিং চেক করুন
প্রতারকেরা মাঝে মাঝে আপনার কল ফরওয়ার্ড করে দেয়, তাই আপনার ফোনের কল ফরওয়ার্ডিং সেটিংস নিয়মিত চেক করুন।
সন্দেহজনক হলে কল কেটে দিন ও ব্লক করুন
যদি কল মার্জ করে আপনাকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলে মনে হয়, তাহলে দ্রুত কল কেটে দিন এবং সেই নম্বর ব্লক করুন।
বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারকে সচেতন করুন
বয়স ও প্রযুক্তি সম্পর্কে কম জানেন এমন মানুষ সহজেই প্রতারণার শিকার হতে পারে। তাই তাদের এই বিষয়ে সচেতন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করুন
যদি সন্দেহজনক কল বা কোনো প্রতারণার শিকার হন, দ্রুত স্থানীয় পুলিশ অথবা সাইবার ক্রাইম ইউনিটে রিপোর্ট করুন। তাদের সাহায্যে দ্রুত সমস্যার সমাধান সম্ভব।
প্রযুক্তির এই যুগে প্রতারণার পদ্ধতিগুলোও দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। কল মার্জিং একটি নতুন উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতারকদের কাছে, যা থেকে সুরক্ষিত থাকার জন্য আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে এবং আর্থিক নিরাপত্তা বজায় রাখতে নিয়মিত সাবধানতা অবলম্বন করুন।