সকল খবর দেশের খবর

ঈশ্বরগঞ্জ রায়ের বাজারে অবৈধ ইটভাটায় ভয়াবহ পরিবেশদূষণ প্রশাসন নির্বিকার!

নিজস্ব প্রতিবেদক, অনিন্দ্যবাংলা:

প্রকাশ : ২০-১১-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৯২


ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার রায়ের বাজার, আঠারো বাড়ি এলাকায় লাইসেন্সবিহীন, পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়া আইনবহির্ভূতভাবে পরিচালিত হচ্ছে ‘ভাই ভাই ব্রিক্স’সহ আরো দুটি ইট ভাঁটা। পরিবেশ আইনের নিয়ম-কানুন অমান্য করে জনবহুল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ইট পোড়ানোর কারণে এলাকায় দূষণের মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। অথচ স্থানীয়দের অভিযোগ; প্রশাসন এখনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ।


অভিযোগ অনুযায়ী, ইটভাটাটির চারপাশে রয়েছে. কয়েকটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়,কলেজ,মাদ্রাসা, পুলিশ উপকেন্দ্রসহ দারুল মদিনা জামে মসজিদ। যেখানে প্রতিদিন শতশত যানবাহন, সাধারণ মানুষ,যাত্রীসহ,শিশু ও শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ইট ভাটার কালো ধোঁয়া, সালফার-কার্বনভিত্তিক বিষাক্ত গ্যাস, কয়লার ছাই এবং উড়ন্ত ধুলাবালু শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ করে শিশুদের মধ্যে- শ্বাসকষ্ট, কাশ, নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি, চোখ জ্বালা, মাথাব্যথা, ত্বকের অ্যালার্জি বাড়িয়ে তুলছে।


স্থানীয় অভিভাবক সালাহ উদ্দিন বলেন, “আমাদের বাচ্চারা প্রতিদিন বিষাক্ত ধোঁয়া গিলছে। বাইরে বের হলেই চোখ জ্বালা করে। গ্রামের আকাশ পর্যন্ত কালো হয়ে থাকে।” অথচ প্রশাসন নির্বিকার।

 

কৃষিপ্রধান রায়ের বাজারের শত শত কৃষিজমি বর্তমানে ইটভাটার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। কৃষকেরা জানিয়েছেন; অতিরিক্ত তাপ বিকিরণ, অ্যাসিডিক ধোঁয়া, কয়লার ছাই, মাটির অবৈধ উত্তোলন, ধুলাবালুর স্তর ,ফসলি জমির উর্বরা শক্তি দ্রুত হ্রাস করছে। একসময় যে জমিতে প্রচুর ফলন হতো, এখন সেখানে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

 

উত্তর বনগাঁও এর কৃষক জমির উদ্দীন ক্ষুব্দ হয়ে বলেন  “আমাদের জমি শেষ! বারবার ইটভাটার মালিকদেরকে বলেও কোন লাভ হচ্ছে না।”


ইটভাটা বন্ধের দাবিতে স্থানীয় মানুষ- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক , জেলা প্রশাসন ,ময়মনসিংহ বরাবরে অনেকগুলো লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে ছিল গ্রামবাসীর স্বাক্ষর, পরিবেশ দূষণের সরেজমিন প্রতিবেদন, স্বাস্থ্যঝুঁকি ও জমির ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ। তাদের দাবি; দূষণ প্রমাণ সত্ত্বেও প্রশাসনের দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।


স্থানীয় কৃষক আব্দুল হাই অভিযোগ করে বলেন, “ প্রশাসনে অভিযোগ দেয়ার পর মালিক অবৈধ ভাটা বন্ধ তো করেনইনি, উল্টো আমাদেরকে হুমকিসহ নানাভাবে ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।”এমনকি আমাকে মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছেন।তারা অনেক বড় সস্ত্রাসী,তাদেরকে প্রতিরোধ করার কেউ নেই!


ইটভাটার অবৈধতা নিয়ে প্রতিবাদ করায় মালিক ও তার সহযোগীদের কাছ থেকে নিয়মিত হুমকি–ধমকির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় অধিবাসীরা। অনেকেই জানিয়েছেন, “মুখ খুললেই হুমকি আসে। প্রশাসন যদি ব্যবস্থা না নেয়, আমরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকব।”


বর্তমানে নতুন মৌসুমে প্রকাশ্যে ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি গ্রামবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে।


পরিবেশবাদী ও আইনজীবীরা বলছেন; জনবহুল এলাকায় লাইসেন্স ছাড়াই ইটভাটা পরিচালনা করা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫,ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ সংশোধিত আইন, ২০১৯সরাসরি লঙ্ঘন করছে। বাংলাদেশে ইটভাটা স্থাপন ও পরিচালনা করতে হলে প্রথমেই পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন ও ছাড়পত্র সংগ্রহ করা বাধ্যতামূলক। 


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটাগুলো বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা ও ফসলী জমির সাথে স্থাপন করা হয়েছে। এসব ইটভাটার ন্যূনতম কোন কাগজপত্র নেই, নেই ট্রেড লাইসেন্স, নেই পরিবেশের ছাড়পত্র,  নেই বিআরটিএ অনুমোদিত ধোঁয়া নির্গমন পরীক্ষা, শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, জেলা প্রশাসনের নিবন্ধন, ভূমির ব্যবহার সংক্রান্ত ছাড়পত্র এবং রাজস্ব পরিশোধের রেকর্ডও নিয়মিত কোন আপডেট। ভাটা যদি উন্নত প্রযুক্তিতে পরিচালিত হয় (যেমন জিগ-জ্যাগ), তবে সেই প্রযুক্তির সার্টিফিকেশনও সংরক্ষণ করতে হয়।


কৃষক, শিক্ষক, অভিভাবক, পরিবেশবাদী ও সাধারণ মানুষের একটাই দাবি; অবিলম্বে ভাই ভাই ব্রিক্সসহ সকল অবৈধ ইটভাটার সকল কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে।