চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধারা আগামী মাস থেকেই মাসিক ভাতা এবং আজীবন চিকিৎসা সুবিধা পাবেন বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। সোমবার (২৪ জুন) সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ তথ্য জানান।
উপদেষ্টা বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত যোদ্ধাদের তালিকা করতে যেখানে ৫৪ বছর লেগেছে, সেখানে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মাত্র সাত-আট মাসে জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ ও আহতদের তালিকা চূড়ান্ত করেছি।” তিনি জানান, আহত ও শহীদদের সঠিক স্বীকৃতি দিয়ে তাঁদের পুনর্বাসনে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করছে।
আহত যোদ্ধাদের শারীরিক অবস্থার ভিত্তিতে ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে তাদের জন্য ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে। ‘এ’ ক্যাটাগরির যোদ্ধারা গুরুতর আহত, যারা একা চলাফেরা করতে অক্ষম—এদের সংখ্যা ৪৯৩ জন। তাঁরা মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা এবং এককালীন ৫ লাখ টাকা পাবেন। ইতোমধ্যে তাঁদের মধ্যে ২ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, বাকি ৩ লাখ টাকা আগামী মাসে দেওয়া হবে।
‘বি’ ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ৯০৮ জন, যারা আংশিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন। এদেরকে মাসে ১৫ হাজার টাকা এবং এককালীন ৩ লাখ টাকা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে ১ লাখ টাকা পরিশোধ হয়েছে, বাকি ২ লাখ টাকা দেওয়া হবে আগামী মাসে। অন্যদিকে, চিকিৎসার পর যারা সুস্থ হয়েছেন, তাঁদের ‘সি’ ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। এই ক্যাটাগরির ১০ হাজার ৬৪২ জন যোদ্ধা মাসে ১০ হাজার টাকা ভাতা এবং এককালীন ১ লাখ টাকা পেয়েছেন।
আহত যোদ্ধারা আজীবন সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসাসহ প্রয়োজন অনুযায়ী দেশি-বিদেশি চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। গুরুতর আহত ৭ জনকে ইতোমধ্যে চিকিৎসার জন্য তুরস্কে পাঠানো হয়েছে। আহতদের পুনর্বাসনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ এবং সরকারি ও আধা-সরকারি চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তাঁদের জন্য সরকার পরিচয়পত্রও দিচ্ছে।
শহীদদের স্বীকৃতি দিতেও সরকার বড় পরিসরে উদ্যোগ নিয়েছে। গেজেট আকারে ৮৩৪ জন ‘জুলাই শহীদের’ তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকের পরিবার এককালীন ৩০ লাখ টাকা করে পাবেন। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা জাতীয় সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০ লাখ টাকা আগামী অর্থবছরে প্রদান করা হবে। শহীদ পরিবারগুলোকে প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা এবং চাকরির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ফারুক-ই-আজম বলেন, “যদি কেউ অভিযোগ করেন যে তাঁর স্বজন নিখোঁজ, তাহলে গণকবর থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে তাঁর পরিচয় শনাক্তের জন্য সরকার উদ্যোগ নেবে।” ওয়ারিশ জটিলতার কারণে ১৩৪টি শহীদ পরিবারের ভাতা প্রদানে বিলম্ব হয়েছে, তবে তা দ্রুত সমাধান করা হবে বলে জানান তিনি।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে স্মরণীয় করে রাখতে সরকার প্রতি বছর ৫ আগস্টকে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতীয় দিবসের মর্যাদায় দিনটি উদযাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম।