সকল খবর ময়মনসিংহের খবর

ময়মনসিংহের ক্রীড়াঙ্গনে নতুন প্রাণের সঞ্চার: শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫ ও লিটন আকন্দের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

প্রতিবেদন: মজিবুর রহমান মিন্টু

প্রকাশ : ২৫-৬-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০৮০

সুস্থ ও সুন্দর জীবনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো নিয়মিত খেলাধুলা। এটি শুধু দেহ-মন সুস্থ রাখে না; তরুণ প্রজন্মকে শৃঙ্খলা, সহনশীলতা ও দলগত নেতৃত্বের আদর্শেও গড়ে তোলে। অথচ কালের আবর্তে, নগরায়ণের চাপে, মাঠ সংকটে এবং নীতিনির্ধারকদের অবহেলায় ময়মনসিংহ শহরের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়াঙ্গন এক সময় প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। মাঠে ছিল না খেলোয়াড়; গ্যালারিতে ছিল না দর্শক।

এই দীর্ঘ স্থবিরতা ভাঙতে এগিয়ে এসেছেন ময়মনসিংহ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এবং সমাজসেবী এনামুল হক আকন্দ লিটন। এক ব্যতিক্রমী চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তিনি শহরের ক্রীড়াজগতকে ঘুম থেকে জাগাতে শুরু করেছেন একের পর এক টুর্নামেন্টের আয়োজনের মাধ্যমে। তাঁর উদ্যোগে গঠিত “শহীদ জিয়া স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৫” ইতোমধ্যেই ময়মনসিংহে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

এই বৃহৎ টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে মোট ৪০টি দল; যা তরুণদের মধ্যে অসাধারণ উৎসাহ ও প্রতিযোগিতার সঞ্চার করেছে। প্রতিদিনই চলছে জমজমাট খেলা; মাঠে দর্শকের ঢল, গ্যালারিতে উল্লাস আর খেলোয়াড়দের প্রাণবন্ত পারফরম্যান্স যেন হারিয়ে যাওয়া এক ক্রীড়াচিত্রকে আবার ফিরিয়ে এনেছে।

আজকের এক জমজমাট খেলায় মাঠে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সম্মানিত সভাপতি আজিজুল হাকিম আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন। তাঁরা টুর্নামেন্টের মূল উদ্যোক্তা লিটন আকন্দ বসের সঙ্গে বসে খেলা উপভোগ করেন এবং খেলোয়াড়দের পাশে থেকে উৎসাহ দেন। মাঠে এমন নেতৃবৃন্দের উপস্থিতি তরুণ খেলোয়াড়দের মাঝে অনুপ্রেরণার জোয়ার বইয়ে দেয়।

লিটন আকন্দ বলেন, “আমরা যদি মাঠে ফেরাতে না পারি আমাদের সন্তানদের, তাহলে তারা মোবাইল ও মাদকেই ডুবে যাবে। তাই ক্রীড়ার মাধ্যমে তাদের জীবনকে গঠন করতে চাই।” তিনি বিশ্বাস করেন; খেলাধুলা কেবল বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি মাদকমুক্ত সমাজ গড়ার হাতিয়ার, তরুণদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখার একটি কার্যকর উপায়।
ময়মনসিংহের ক্রীড়াঙ্গন বরাবরই গৌরবময় ইতিহাসের অংশ। এখানকার ব্রহ্মপুত্র নদঘেঁষা মাঠগুলোতে কখনো জাতীয় দলে খেলা তারকা ফুটবলার ও ক্রিকেটাররা নিজেদের শুরু করেছিলেন। দেশের বিখ্যাত ক্রীড়াবিদদের মধ্যে অনেকে এই শহরের ক্রীড়া পাঠশালায় বেড়ে উঠেছেন। একসময় ময়মনসিংহ স্টেডিয়ামে জাতীয় পর্যায়ের খেলাও অনুষ্ঠিত হতো।

এই শহরেই গড়ে উঠেছে ময়মনসিংহ জেলা ক্রীড়া সংস্থা, বহু ঐতিহ্যবাহী ক্লাব, যেমন ব্রাদার্স ইউনিয়ন, মোহামেডান, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র প্রভৃতি। ময়মনসিংহের স্কুল ও কলেজগুলোতেও বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ। সময়ের ব্যবধানে এসব অনেক কিছুই আজ বিলুপ্তির পথে; খেলোয়াড়েরা হারিয়ে যাচ্ছে পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে, মাঠ হারাচ্ছে আধুনিক স্থাপনার নিচে।

এই প্রেক্ষাপটে লিটন আকন্দের উদ্যোগ যেন মরুর বুকে এক ফোঁটা বৃষ্টি। তিনি শুধু টুর্নামেন্ট আয়োজনেই থেমে থাকেননি; বরং স্থানীয় ক্লাবগুলোকে উৎসাহিত করতে খেলোয়াড়দের জার্সি, খেলার সামগ্রী বিতরণ করেছেন; এমনকি আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া প্রতিভাবান খেলোয়াড়দের পাশে দাঁড়িয়েছেন চিকিৎসা ও শিক্ষা সহায়তা দিয়ে।

এই ধারা অব্যাহত থাকলে ময়মনসিংহ আবার ফিরে পেতে পারে তার হারানো ক্রীড়াগৌরব। এখানকার মাঠে আবার গর্জে উঠতে পারে উল্লাসধ্বনি; জন্ম নিতে পারে জাতীয় পর্যায়ের আরও কৃতি ক্রীড়াবিদ। লিটন আকন্দ বলেন, “আমার স্বপ্ন; ময়মনসিংহের প্রতিটি পাড়ায় খেলাধুলার ধারা ফিরিয়ে আনা; যাতে এখানকার প্রতিটি শিশু জানে, মাঠের খেলাই জীবনের বড় খেলায় জয়ী হতে শেখায়।”

তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশে তিনি বলেন, “তোমরা একদিন বড় হবে; ময়মনসিংহের মুখ উজ্জ্বল করবে। শুধু পড়ালেখা নয়; মাঠে নামো, খেলো, শেখো; তোমরাই আগামী দিনের গর্ব।”

আজ যখন জাতীয় পর্যায়ে জেলা ক্রীড়াঙ্গনের দুরবস্থা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে; তখন লিটন আকন্দের মতো একান্ত অনুপ্রেরণাদায়ী উদ্যোক্তা হয়ে ওঠেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তিনি দলীয় রাজনীতির গণ্ডি পেরিয়ে সমাজ গঠনের বৃহত্তর দায়িত্বে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।

ময়মনসিংহ শহরের মানুষ আশাবাদী; এই উদ্যোগ কেবল স্বল্পমেয়াদী প্রদর্শনী নয় বরং একটি সুদূরপ্রসারী সামাজিক আন্দোলনের শুরু। তরুণদের মাঝে খেলাধুলার এই ধারাবাহিকতা আগামীদিনেও অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আর এই আন্দোলনের কেন্দ্রে রয়েছেন মাঠের মানুষ; মাঠ ভালোবাসা একজন সমাজসেবক লিটন আকন্দ।