সকল খবর ময়মনসিংহের খবর

কেওয়াটখালি ব্রিজের অনিয়ম নিয়ে হাইকোর্টের রুল জারি

বিশেষ প্রতিনিধি :

প্রকাশ : ৪-৬-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫১৭৯

ময়মনসিংহ শহরের অন্যতম আলোচিত প্রকল্প ‘কেওয়াটখালি আর্চ স্টিল ব্রিজ’ ঘিরে নকশা জালিয়াতি, অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ, এবং সংযোগ সড়কে অস্বাভাবিক ব্যয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে আজ হাইকোর্ট একটি রুল জারি করেছে। রুলে বলা হয়েছে, ময়মনসিংহ কেওয়াটখালী আর্চ স্টিল ব্রিজ একনেকের অনুমোদকৃত নকশায় কেন বাস্তবায়ন হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে বিবাদীদের কাছে। 

ময়মনসিংহ শহরের অন্যতম আলোচিত প্রকল্প ‘কেওয়াটখালি আর্চ স্টিল ব্রিজ’ ঘিরে নকশা জালিয়াতি, অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ, এবং সংযোগ সড়কে অস্বাভাবিক ব্যয়ের অভিযোগে জনমনে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। প্রকল্পের একনেক অনুমোদিত মূল নকশা থেকে সরে গিয়ে ক্ষমতাসীন মহলের প্রভাব খাটিয়ে পরিবর্তন করা হয়েছে ব্রিজের নকশা ও সংযোগ সড়কের পরিকল্পনা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, মূল নকশা অনুযায়ী ব্রিজটি সরাসরি বাইপাস সড়কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা পরিবর্তন করে শহরের ভেতরে দুটি ব্যস্ত সড়কের সঙ্গে একত্র করা হয়েছে। এর ফলে আগামীতেই সৃষ্টি হবে ভয়াবহ যানজট ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

ময়মনসিংহ শহরের অন্যতম মেগা উন্নয়ন প্রকল্প ‘কেওয়াটখালি আর্চ স্টিল ব্রিজ’-কে ঘিরে অনিয়ম, নকশা পরিবর্তন, অতিরিক্ত ব্যয় ও জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জোরালো সমালোচনার ঝড় উঠেছে। একনেক অনুমোদিত ব্যয় ৩২৬০ কোটি টাকা হলেও প্রকৃত বাস্তবায়ন ব্যয় গিয়ে দাঁড়াতে পারে প্রায় ৫০০০ কোটি টাকা। প্রকল্পের প্রাথমিক লক্ষ্য ও জনস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে এটি এখন হয়ে উঠছে একটি বিতর্কিত, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত ও দুর্নীতিবান্ধব প্রকল্প; এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
উল্লেখ্য যে, প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা অনুমোদিত নকশা লঙ্ঘন করে প্রায় ২ কিলোমিটার অতিরিক্ত সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছেন, যা একনেক অনুমোদিত ব্যয়ের বাইরে। এই সংযোগ সড়কের জন্য প্রায় ৩১ একর অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে, যা নিয়ে ইতোমধ্যেই জমির মালিক ও স্থানীয় নাগরিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।



বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, পেশাজীবী পরিষদ এবং সচেতন নাগরিকরা বলছেন, “এই প্রকল্পটি এখন একটি লুটপাট ও দুর্নীতির উৎসবে পরিণত হয়েছে। একনেকের অনুমোদনকে পাশ কাটিয়ে যে নকশা পরিবর্তন করা হয়েছে তা শুধু বেআইনিই নয়, তা জনগণের অর্থের সঙ্গে প্রতারণার শামিল।”

ময়মনসিংহের সচেতন নাগরিক সমাজ -এর মুখপাত্র “বিপ্লব নিভ” এক বিবৃতিতে বলেন, “দ্রুত এই অনিয়মের তদন্ত না হলে, আমরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবো। শহরের সাধারণ মানুষ আজ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে।”

এতোসব অভিযোগ সত্ত্বেও প্রকল্প বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ব্যাখ্যা বা জবাব দেয়নি। জেলা প্রশাসন এবং সিটি কর্পোরেশন বিষয়টি নিয়ে কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না বলেই অভিযোগ উঠেছে।

একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নকশা পরিবর্তনের জন্য কোনো নতুন একনেক অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি। এই পরিবর্তনের পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব এবং প্রভাবশালী একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে বলে জানা গেছে।

ময়মনসিংহের বিভিন্ন ছাত্র, যুব, সাংস্কৃতিক ও নাগরিক সংগঠন ইতোমধ্যে আগামী সপ্তাহে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পরিস্থিতি অনিয়ন্ত্রিত হলে ময়মনসিংহবাসীকে নিয়ে রাজপথে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে নাগরিক প্ল্যাটফর্মগুলো।

২০১৯ সালে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ‘কেওয়াটখালি আর্চ স্টিল ব্রিজ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ প্রকল্প’-এর অনুমোদন দেয়। প্রাক্কলিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ৩,২৬০ কোটি টাকা। মূল লক্ষ্য ছিল ময়মনসিংহ নগরীর যানজট নিরসন এবং উত্তরাঞ্চলের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ উন্নত করা।

একনেক অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী, ব্রিজটি নগরীর বাইপাস সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে শহরের বাইরে দিয়ে ট্রাফিক প্রবাহ নিশ্চিত করার কথা ছিল, যাতে নগরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো যেমন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, চরপাড়া, গাঙ্গিনারপাড়, বিদ্যাময়ী স্কুল, নতুন বাজার, আনন্দ মোহন কলেজ, টাউনহল, রেলস্টেশন, এবং পুরাতন ব্রহ্মপুত্র ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা যানজটমুক্ত থাকে।

সাংবাদিক মজিবুর রহমান শেখ মিন্টু বলেন, “অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী জমির পরিমাণ অনেক কম হওয়ার কথা ছিল। সংযোগ সড়কের নকশা পরিবর্তনের ফলে অতিরিক্ত জমি অধিগ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।”

জাতীয় অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এমন একটি বড় প্রকল্পে অনিয়ম, দুর্নীতি ও পরিকল্পনাহীনতা ময়মনসিংহবাসীকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তদন্ত না হলে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হবে এবং সেক্ষেত্রে ‘উন্নয়ন’ নয়, বরং জনরোষই প্রকল্পটির নিয়তি হতে পারে।