চীনের বিজ্ঞানীরা ক্যান্সার চিকিৎসায় এক যুগান্তকারী পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা বিশ্বজুড়ে ক্যান্সার গবেষণা ও চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। এই পদ্ধতিতে মানবদেহের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই উদ্ভাবন ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।  

কী এই নতুন পদ্ধতি?  
এই চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিশেষভাবে পরিবর্তিত একটি ভাইরাস ব্যবহার করা হয়, যা ক্যান্সার কোষকে এমনভাবে রূপান্তরিত করে যে তা দেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থার কাছে ‘বহিরাগত’ হিসেবে চিহ্নিত হয়। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা টিউমার কোষগুলোকে আক্রমণ করে এবং ধ্বংস করে। এই পদ্ধতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এটি শুধুমাত্র ক্যান্সার কোষকে লক্ষ্য করে এবং সুস্থ কোষের কোনো ক্ষতি করে না। ফলে প্রচলিত কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপির মতো ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এড়ানো সম্ভব।  

প্রাথমিক সাফল্য  
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই গবেষণা গত ১৮ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান জার্নাল ‘সেল’-এ প্রকাশিত হয়েছে। প্রাথমিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে ৯০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি সফল হয়েছে। বিশেষ করে যকৃত, ডিম্বাশয় ও ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এই চিকিৎসা কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। যাদের প্রচলিত চিকিৎসায় উন্নতি হচ্ছিল না, তাদের ক্ষেত্রে টিউমারের বৃদ্ধি থেমে গেছে বা আকারে ছোট হয়ে এসেছে। এমনকি জরায়ুর ক্যান্সারে আক্রান্ত এক রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ ঘোষণা করা হয়েছে।  

বিশ্বব্যাপী আলোচনা  
চীনের এই উদ্ভাবন নিয়ে বিশ্বব্যাপী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পদ্ধতি আরও উন্নত করা গেলে তা ক্যান্সার চিকিৎসায় আমূল পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবে। গবেষকরা আশা করছেন, এই প্রযুক্তি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে এবং ভবিষ্যতে আরও বেশি রোগীর জীবন বাঁচানো সম্ভব হবে।  

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা  
এই পদ্ধতির সাফল্য ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। গবেষকরা এখন আরও বড় পরিসরে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালানোর পরিকল্পনা করছেন। যদি এই পদ্ধতি ব্যাপকভাবে কার্যকর প্রমাণিত হয়, তবে তা ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটি নতুন মাইলফলক হয়ে থাকবে।  
চীনের এই যুগান্তকারী উদ্ভাবন ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে আশার আলো দেখাচ্ছে এবং বিশ্বজুড়ে ক্যান্সার গবেষণাকে নতুন গতিতে এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে।