সকল খবর ময়মনসিংহের খবর

ময়মনসিংহে সাবলেটের ফাঁদে কলেজছাত্র, আটকে রেখে মারধর করে মোবাইল-ল্যাপটপ-টাকা ছিনতাই

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ১৩-৯-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫১১৬

ময়মনসিংহ নগরীতে ফেসবুকে সাবলেট ভাড়ার বিজ্ঞাপন দিয়ে ডেকে নিয়ে এক অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রকে আটকে রেখে মারধর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে সংঘবদ্ধ একটি চক্রের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) এ ঘটনায় ভুক্তভোগী কলেজছাত্র থানায় লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চক্রের দুই নারী সদস্যকে আটক করেছে। উদ্ধার হয়েছে ছিনতাই হওয়া মুঠোফোন ও ল্যাপটপ।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান (নাঈম) আনন্দ মোহন কলেজের গণিত বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার ভূরারবাড়ী গ্রামে। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ নগরের কলেজ রোডের মীরবাড়ি এলাকায় একটি মেসে থেকে পড়ালেখা করছেন।

নাজমুল জানান, পড়ার সময় ট্রেনের শব্দে সমস্যা হওয়ায় তিনি নতুন বাসার খোঁজ করছিলেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ফেসবুকের ‘টু লেট ময়মনসিংহ’ গ্রুপে ব্যাচেলরদের জন্য সাবলেট ভাড়ার একটি বিজ্ঞাপন দেখতে পান। বিজ্ঞাপনে দেওয়া নম্বরে কল করলে তাকে জানানো হয়, একটি দুই রুমের বাসায় এক দম্পতি থাকেন এবং অপর রুমটি ভাড়া দেওয়া হবে। এরপরে বাসাটি দেখতে গুলকিবাড়ী এলাকার ফখরুজ্জামান টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় যান তিনি।

বাসায় ঢোকার কিছুক্ষণের মধ্যেই চারজন নারী ও চারজন যুবক কক্ষে ঢুকে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মারধর করতে থাকে। চক্রটি দাবি করে, নাজমুল খারাপ কাজ করতে এসেছে। এরপর তারা তার আইফোন, ল্যাপটপ এবং সঙ্গে থাকা নগদ ৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে ভয়ভীতি দেখিয়ে একটি লিখিত জবানবন্দিও নেয়, যাতে প্রমাণ করা যায় সে অনৈতিক কাজে এসেছিল।

এতে থেমে থাকেনি চক্রটি। পরে তাকে জিম্মি অবস্থায় একটি এটিএম বুথে নিয়ে গিয়ে আরও ২০ হাজার টাকা তুলে নেয় এবং হেলথ অফিসারের গলিতে নামিয়ে দিয়ে হুমকি দেয়, বিষয়টি নিয়ে কাউকে কিছু বললে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।

পরে নাজমুল সাহস করে কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ পাওয়ার পর শুক্রবার বিকেলে পুলিশের একটি দল অভিযানে যায় এবং ওই বাসা থেকে দুই নারী সদস্যকে আটক করে। আটকরা হলেন কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার সাদিয়া জাহান ওরফে মেঘলা (২১) এবং ফারিয়া আক্তার ওরফে পায়েল (১৯)। সাদিয়া ময়মনসিংহ কমার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং ফারিয়া সহিলাটি মুক্তিযোদ্ধা কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছে পুলিশ।

তাদের জিম্মা থেকে ছিনতাই হওয়া আইফোন ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। এ চক্রে চারজন নারী ও চারজন পুরুষ সদস্য রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তারা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে এবং পরিকল্পিতভাবে ফেসবুকে টু-লেট বিজ্ঞাপন দিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়ে আসছিল।

শুক্রবার সন্ধ্যায় নাজমুল হাসান দুই তরুণীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন। রাতেই সেটি নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করে পুলিশ।

কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মো. শিবিরুল ইসলাম জানান, “এ ঘটনায় জড়িত চক্রের অন্যান্য সদস্যদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। আটক দুই তরুণীকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।”