সকল খবর ময়মনসিংহের খবর

পলিটেকনিক ইনস্ট্রাক্টর হুমায়ুন: শতকোটি টাকার মালিক !

অনিন্দ্যবাংলা ডেস্ক:

প্রকাশ : ৯-৩-২০২৫ ইং | নিউজটি দেখেছেনঃ ৫০২৪

ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর (নন-টেক) মো. হুমায়ুন কবীর, তার স্ত্রী বেবী আলিয়া হাসনাত ও বাবা আলী হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে ২০ কোটি ১৭ লাখ টাকার বেশি অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং সাড়ে ১৬ কোটি টাকার সম্পদ গোপন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ৫ মার্চ দুদকের ময়মনসিংহ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপসহকারী পরিচালক মো. শাহাদত হোসেন বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন।  

দুদক সূত্রে জানা যায়, হুমায়ুন কবীরের বিরুদ্ধে ১৩ কোটি ৬ লাখ ১২ হাজার ১৪০ টাকার সম্পদ গোপন এবং ১৫ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার ৮২৯ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া, তার স্ত্রী বেবী আলিয়া হাসনাতের বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪৬ টাকার সম্পদ গোপন এবং ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকার অসঙ্গতিপূর্ণ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে।  

দুদকের অনুসন্ধানে জানা গেছে, হুমায়ুন কবীর ও তার স্ত্রীর নামে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে মোট ৫১৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ জমির মালিকানা রয়েছে। এসব জমির বাজার মূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকার বেশি। তবে দুদকের হিসাবে দালিলিক মূল্য ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ১১ লাখ ৬৭ হাজার ১২৫ টাকা।  

দুদকের অভিযোগ অনুযায়ী, হুমায়ুন কবীর তার ক্রয়কৃত জমির অধিকাংশ স্ত্রী ও বাবার নামে ক্রয় করে পরে নিজ নামে হেবা করে নিয়েছেন। এভাবে তিনি অবৈধ সম্পদ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তর করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে। এছাড়া, তার নামে স্কাবো মেডিকেল টেকনোলজি (প্রাইভেট) লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে ১ হাজার ৩৫০টি শেয়ার রয়েছে। তাদের সিঙ্গাপুর ও ভারতসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের তথ্যও পাওয়া গেছে।  

দুদকের নোটিশে সম্পদের হিসাব জমা দেওয়ার পর হুমায়ুন কবীর ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর ৪ কোটি ৩৫ লাখ ২৩ হাজার ৯৯৭ টাকার সম্পদের ঘোষণা দেন। কিন্তু দুদকের যাচাইয়ে তার নামে ১৭ কোটি ৪১ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৭ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনি ১৩ কোটি ৬ লাখ ১২ হাজার ১৪০ টাকার সম্পদ গোপন করেছেন।  

এদিকে, হুমায়ুন কবীরের স্ত্রী বেবী আলিয়া হাসনাত দুদকে ১ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার ৮৯ টাকার সম্পদ ঘোষণা করলেও যাচাইয়ে তার নামে ৪ কোটি ৬৫ লাখ ২ হাজার ৪৩৫ টাকার সম্পদ পাওয়া যায়। অর্থাৎ তিনি ৩ কোটি ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৩৪৬ টাকার সম্পদ গোপন করেছেন।  

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, হুমায়ুন কবীর ২০১২ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বিভিন্ন কৌশলে ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে ৪৪৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ জমির মালিকানা অর্জন করেছেন। এসব জমির মৌজা মূল্য ১৭ কোটি ৩৭ লাখ ৯২ হাজার ৬৯০ টাকা হলেও বাজার মূল্য ১১৫ থেকে ১২০ কোটি টাকা। অন্যদিকে, তার স্ত্রীর নামে ৭০ শতাংশ জমি রয়েছে, যার বাজার মূল্য ১৫ থেকে ১৮ কোটি টাকা।  

এ বিষয়ে হুমায়ুন কবীর ঢাকা পোস্টকে বলেন, "আমি যতটুকু জানি তদন্ত চলমান ছিল। মামলা হয়েছে কি না জানা নেই। আমার যা সম্পদ তার হিসাব জমা দিয়েছি। এর বাইরে সম্পদ নেই। অর্জিত সব সম্পদের বৈধ উৎস রয়েছে। আমার কোনো অবৈধ সম্পদ নেই।"  

দুদকের আইন, ২০০৪ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর অধীনে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুদকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, মামলাগুলো দ্রুত বিচারাধীন আদালতে পাঠানো হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।