যেদিন প্রথম পলিথিন ব্যাগ বাংলাদেশের বাজারে আসে, তখন কেউ ভাবতেও পারেনি এই হালকা ও সস্তা জিনিসটি একদিন পুরো জাতির জন্য বিষবৃক্ষে পরিণত হবে। সময়ের সাথে সাথে যেমন মানুষের জীবনধারা দ্রুতগতিতে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে, তেমনি দৈনন্দিন কাজেও আধুনিকতার মোড়কে ঢুকে পড়েছে পরিবেশবিধ্বংসী উপাদান। পলিথিন সেই সব কিছুর মধ্যে অন্যতম এক ভয়াবহ আবিষ্কার, যা শুরুতে ছিল আরামের প্রতীক, কিন্তু আজ তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের এক বিপর্যয়ের নাম।
২০০২ সালে বাংলাদেশ সরকার পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল; সেই সময় বাংলাদেশ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম দেশ যারা পরিবেশ রক্ষায় এমন সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এই আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যর্থতা, দুর্নীতি, সীমিত বিকল্প এবং জনসচেতনতার অভাবের কারণে সেই নিষেধাজ্ঞা অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। আজ, দুই দশক পেরিয়ে, পলিথিন যেন শহরের অলিগলিতে, নদীর পাড়ে, বাজারে, এমনকি গ্রামের হাটেও শেকড় গেড়ে বসেছে।
পলিথিন ব্যবহার: এক ভয়াবহ পরিসংখ্যান- বাংলাদেশে বর্তমানে বছরে গড়ে ৮৭,০০০ টন পলিথিন ব্যবহৃত হয়, যার ৯০ শতাংশের বেশি ব্যবহার হয় রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায়। ঢাকা শহরের একজন বাসিন্দা বছরে গড়ে ৯৫০-১১০০ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করেন। প্রতিদিন শুধু রাজধানীতেই ব্যবহার হচ্ছে ১৪-১৫ মিলিয়ন প্লাস্টিক বা পলিথিন ব্যাগ। এগুলোর ৮৫-৯০ শতাংশই একবার ব্যবহারের পর ফেলে দেওয়া হয়। এসব পলিথিন ব্যাগের বেশিরভাগই যায় ড্রেন, নালা, খাল ও নদীর মধ্যে। কোনো বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় না থাকায় তা জমে গিয়ে সৃষ্টি করে ভয়াবহ জলাবদ্ধতা, পরিবেশ দূষণ, মাটির উর্বরতা হ্রাস এবং জলজপ্রাণীর মৃত্যু।
পলিথিনের পরিণতি: নীরব বিষক্রিয়া- পলিথিন সাধারণত ৪০০ থেকে ১০০০ বছর পর্যন্ত পরিবেশে টিকে থাকতে পারে। এটি মাটির ভেতর পচে না, বরং অক্ষুণ্ণ থেকে যায় দীর্ঘকাল। যখন পলিথিন নদীতে যায়, তখন তা জলজপ্রাণীর পেটে গিয়ে তাদের মৃত্যুর কারণ হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোতে হাজার হাজার টন মাইক্রোপ্লাস্টিক জমা হয়েছে, যা মাছের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে।
পলিথিন পোড়ানোর মাধ্যমে বর্জ্য কমানোর চেষ্টাও বিপদজনক, কারণ এতে নিঃসৃত হয় বিষাক্ত গ্যাস; যেমন ডাইঅক্সিন, কার্বন মনোঅক্সাইড, ফিউরান, যা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগ, ক্যানসার ও জন্মগত ত্রুটি সৃষ্টি করে। শিশুদের ক্ষেত্রে এই দূষণ আরো মারাত্মক প্রভাব ফেলে, কারণ তাদের শরীর প্রতিরোধক্ষমতা গঠনের প্রক্রিয়ায় থাকে। মাটির স্তরে পলিথিন জমে গেলে তা জল ধারণক্ষমতা কমায়, বৃষ্টির পানি মাটিতে প্রবেশে বাধা দেয়, যার ফলে তৈরি হয় খরা, জমি অনুর্বরতা এবং কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন হ্রাস।
কেন পলিথিন রোধ সম্ভব হচ্ছে না?
বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হলেও তা প্রকাশ্যে তৈরি ও ব্যবহৃত হচ্ছে। এই নিষিদ্ধ বস্তুটি এখনো বাজারে পাওয়া যাচ্ছে অতি সহজেই। এর প্রধান কারণ হচ্ছে; পলিথিন ব্যাগ তৈরিতে খরচ কম, পরিবেশবান্ধব বিকল্পের দাম তুলনামূলক বেশি, মনিটরিং ও আইনি প্রয়োগে দুর্বলতা, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর দণ্ড নেই, সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাব। ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় সস্তা পলিথিন ব্যবহার করেন, আবার ক্রেতারাও সচেতন না হয়ে দোকান থেকে বারবার পলিথিন ব্যাগ গ্রহণ করেন। অনেক সময় স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনেই পলিথিন তৈরি ও সরবরাহ হয়, কিন্তু কার্যকর প্রতিরোধ নেই।
সম্ভাবনার দ্বার: পাট থেকে তৈরি সোনালি ব্যাগ- বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (BJRI) আবিষ্কার করেছে ‘সোনালি ব্যাগ’, যা পলিথিনের বিকল্প হিসেবে কাজ করতে সক্ষম। এটি পাটের সেলুলোজ থেকে তৈরি, দেখতে ও ব্যবহারেও প্রায় পলিথিনের মতোই, কিন্তু সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব। এই ব্যাগটি বায়োডিগ্রেডেবল, অর্থাৎ মাটিতে পচে যায় ৬-৮ মাসে, এবং মাটি বা পানি দূষণ করে না। বিশ্বের বহু দেশে PLA (Polylactic Acid), PHA (Polyhydroxyalkanoates) এবং ক্যাসাভা স্টার্চ দিয়ে তৈরি বায়োপলিমার ব্যবহার হচ্ছে, যা থেকে তৈরি ব্যাগ খুব সহজেই পরিবেশে মিশে যায়। বাংলাদেশেও এই প্রযুক্তি আমদানি ও স্থাপন করে শিল্পায়নের সুযোগ রয়েছে।
এই পরিবর্তন কিভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব?
সোনালি ব্যাগকে বাস্তবতার মাটিতে নিয়ে আসতে হলে চাই; সরকারী ভর্তুকি ও বিনিয়োগ, পাটকল আধুনিকায়ন ও উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, উদ্যোক্তাদের সহায়তা ও সহজ শর্তে ঋণ প্রদান, আমদানি নির্ভর কাঁচামাল হ্রাস করে দেশীয় প্রযুক্তিতে জোর দেওয়া,
জনগণকে সচেতন করার জন্য মিডিয়া, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ।
সোনালি ব্যাগের উৎপাদন খরচ বর্তমানে কিছুটা বেশি হলেও, ব্যাপক উৎপাদন ও চাহিদা বাড়লে সেটি অনেকটা কমে যাবে। পাট বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ; এই সম্পদকে কাজে লাগিয়ে যেমন পলিথিন দূষণ রোধ করা যাবে, তেমনি নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, পাটশিল্প পুনরুজ্জীবিত হবে, এবং রপ্তানি আয় বাড়বে।
করণীয়: সরকার ও জনগণের যৌথ দায়- এই সংকট সমাধানে সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আইন করে নিষিদ্ধ করলেই হবে না, তা বাস্তবায়ন করতে হবে দৃঢ়ভাবে। অবৈধ পলিথিন কারখানায় জরিমানা নয়, আদালতের মাধ্যমে সিলগালা করা প্রয়োজন। প্লাস্টিক ও পলিথিন আমদানির ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা দরকার।
পাশাপাশি, সরকারকে পরিবেশবান্ধব ব্যাগ উৎপাদনে প্রণোদনা দিতে হবে। যেমন কর অবকাশ, উৎপাদন ভর্তুকি, মার্কেটিং সহায়তা। ‘সোনালি ব্যাগ’ জাতীয় ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। জনগণের পক্ষেও রয়েছে দায়িত্ব। বাজারে গেলে কাপড় বা পাটের ব্যাগ সঙ্গে নেওয়া, পলিথিন গ্রহণ না করা, দোকানদারকে বিকল্প ব্যবহারে উৎসাহিত করা, স্কুলে সন্তানদের পরিবেশ বিষয়ে শিক্ষিত করা; এসব ছোট ছোট পদক্ষেপ একটি বৃহৎ পরিবর্তনের সূচনা করতে পারে।
ভবিষ্যতের বাংলাদেশ: স্বপ্ন নাকি ভয়াবহতা?
পলিথিন দূষণ এখন এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে নীরবতা মানেই আত্মঘাতী নীতিতে অবিচল থাকা। আজ যেসব শিশুদের আমরা সুস্থভাবে বড় করে তুলতে চাই, তাদের ভবিষ্যৎ যদি হয় বিষাক্ত বাতাস, অচাষযোগ্য জমি, মৃত নদী ও রোগে জর্জরিত শরীর; তবে আমাদের উন্নয়নের সব পরিসংখ্যানই মিথ্যা। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে; সমস্যা চিহ্নিত হয়েছে, সমাধানের পথও আছে। এখন দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা, জনসচেতনতা এবং প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার।
বাংলাদেশ যদি এখনই পরিকল্পনা করে; ৫ বছরের মধ্যে সকল পলিথিন ব্যাগ বন্ধ করবে, সোনালি ব্যাগ উৎপাদন ১০ গুণ বাড়াবে, স্কুল পর্যায় থেকে সচেতনতা কর্মসূচি চালাবে, আইন অমান্যকারীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনবে, তাহলে এক দশকের মধ্যে বাংলাদেশ হতে পারে বিশ্বের অন্যতম পরিবেশবান্ধব একটি দেশ।
সোনালি ব্যাগ পাল্টে দিতে পারে বিপন্ন পরিবেশ!
সোনালি ব্যাগ; শুধু একটি ব্যাগ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের পরিবেশ-সঙ্কট নিরসনের এক প্রতীক, এক সম্ভাবনার নাম। পলিথিনের ক্রমাগত পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে যখন সমগ্র জাতি দিশেহারা, তখন পাট থেকে তৈরি এই পরিবেশবান্ধব ব্যাগ আলো দেখাতে শুরু করেছে। “সোনালি ব্যাগ” যে শুধু টেকসই ও বিকল্প একটি পণ্য; তা নয়; বরং এটি পলিথিনের ভয়াবহ দখলদারিত্ব থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার একটি প্রযুক্তিনির্ভর পথ, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের অর্থনীতি, কৃষি, স্বাস্থ্য এবং আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিও।
সোনালি ব্যাগ মূলত তৈরি হয় বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ “পাট” থেকে। এই ব্যাগ দেখতে যেমন পলিথিনের মতো, ব্যবহারেও তেমনি টেকসই ও নমনীয়। তবে পার্থক্য হলো; এই ব্যাগ মাটিতে, পানিতে কিংবা পরিবেশে সহজেই মিশে যায়, কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক অবশিষ্ট রাখে না। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই এটি জৈব পচন ঘটিয়ে মাটির সঙ্গে একীভূত হয়, ফলে এটি পরিবেশের উপর কোনো দীর্ঘমেয়াদি বোঝা সৃষ্টি করে না। পলিথিন যেখানে শতাব্দীর পর শতাব্দী মাটিতে পড়ে থেকে কৃষিকে ধ্বংস করে, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে এবং নদী ও সাগরে প্রাণহানি ঘটায়, সেখানে সোনালি ব্যাগ হয়ে উঠেছে তার বিপরীত এক পরিবেশ-রক্ষাকারী শক্তি।
সোনালি ব্যাগ শুধু পরিবেশে পচে যায় বলেই নয়, এটি পরিবেশ ও কৃষির স্বার্থে আরও নানা দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এখানকার জমি, জল ও প্রকৃতির উপর নির্ভর করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা। যখন পলিথিন মাটির নিচে জমে জমির জলধারণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং ফসলের মূল বাধাগ্রস্ত করে, তখন সোনালি ব্যাগের মতো পচনশীল পণ্যের ব্যবহার সেই জমিকে পুনরায় প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারে। এটি মাটির উর্বরতা অক্ষুণ্ণ রাখে, পানি সঞ্চালন ব্যাহত করে না এবং জীবাণু ও কীটপতঙ্গ প্রতিরোধেও কোনো বাধা সৃষ্টি করে না।
শুধু পরিবেশ নয়, বাংলাদেশের পাটশিল্পকে পুনর্জীবিত করার ক্ষেত্রেও সোনালি ব্যাগ এক যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। এক সময় সোনালী আঁশ খ্যাত পাট ছিল বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। কিন্তু প্লাস্টিক ও পলিথিনের আগ্রাসনে সেই শিল্প ধুঁকতে ধুঁকতে একপ্রকার মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে। সোনালি ব্যাগ সেই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে আবারো পুনর্জন্ম দেওয়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। দেশের অব্যবহৃত পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করে, কৃষকদের উৎপাদিত পাটের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে, এবং শিল্প মালিকদের উদ্ভাবনী উদ্যোক্তায় পরিণত করে এই ব্যাগ জাতীয় সম্পদে পরিণত হতে পারে।
বিশ্ববাজারেও পরিবেশবান্ধব পণ্যের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। উন্নত বিশ্বের অনেক দেশ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক নিষিদ্ধ করছে। এই আন্তর্জাতিক প্রবণতার মধ্যে সোনালি ব্যাগ বাংলাদেশকে রপ্তানি-ক্ষমতাসম্পন্ন পরিবেশবান্ধব ব্যাগের জোগানদাতা হিসেবে বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। সোনালি ব্যাগের সফলতা নির্ভর করে ব্যাপক উৎপাদন, সহজলভ্যতা এবং জনগণের গ্রহণযোগ্যতার উপর। বর্তমানে এর উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেশি হলেও, সরকার যদি ভর্তুকি দেয়, কর অবকাশ দেয়, এবং উৎপাদন ব্যবস্থাকে শিল্পোন্নত করে তোলে, তাহলে এটি খুব দ্রুত পলিথিনের প্রতিস্থাপনকারী হতে পারবে। নাগরিকদেরকেও সচেতন হতে হবে, যাতে তারা সস্তা হলেও পরিবেশবিধ্বংসী পলিথিনের বদলে সোনালি ব্যাগকেই বেছে নেয়। প্রতিটি বাজারে, প্রতিটি দোকানে, প্রতিটি বাড়িতে এই ব্যাগ পৌঁছে দিতে পারলেই শুরু হবে এক বিপ্লব, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ নিজেকে পরিচিত করতে পারবে ‘পরিবেশবান্ধব উদ্ভাবনের’ পথিকৃৎ দেশ হিসেবে।
এই ব্যাগের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো; এর বহুমুখী ব্যবহার। কেবল বাজারে কেনাকাটা নয়, খাদ্য প্যাকেজিং, কৃষিপণ্য মোড়ক, অফিস সামগ্রী বহন, এমনকি শিল্পপণ্যের মোড়ক হিসেবেও এটি ব্যবহারযোগ্য। ফলে এটি শুধু পরিবেশবান্ধব বিকল্প নয়, বরং একটি অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বারও উন্মোচন করে।
সবশেষে বলতেই হয়, সোনালি ব্যাগ কেবল একটি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন নয়; এটি একটি জাতীয় প্রগতির প্রতীক, একটি ভবিষ্যৎমুখী চিন্তা যার মাধ্যমে আমরা এক ভয়ংকর সঙ্কট থেকে বেরিয়ে এসে এক নতুন পথের দিশা পেতে পারি। পলিথিন যদি হয় এক বিষাক্ত অভ্যাস, তবে সোনালি ব্যাগ হলো সেই সুস্থ স্বপ্ন, যা ধারণ করলে বাংলাদেশ যেমন পরিবেশ রক্ষা করতে পারবে, তেমনি অর্থনৈতিক ও আন্তর্জাতিক অগ্রযাত্রায় নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারবে। এখন শুধু দরকার যথাযথ পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং আমাদের সম্মিলিত সদিচ্ছা।
সর্বশেষে, আজ থেকে বিশ বছর আগে যেটি ছিল একটি অদৃশ্য বিপদ, তা আজ দৃশ্যমান দুর্যোগে রূপ নিয়েছে। পলিথিন কেবল একটি বর্জ্য নয়, এটি একটি নীরব যুদ্ধ। এই যুদ্ধের শত্রু দৃশ্যমান নয়, কিন্তু তার প্রভাব সর্বত্র। শিশুর খাদ্য, মানুষের রক্ত, নদীর তলদেশ, সবখানেই প্লাস্টিকের ছায়া। তাই এই সংকটের মোকাবিলা আমাদের অস্তিত্বের প্রশ্ন।
পরিবেশবান্ধব বিকল্প রয়েছে, প্রযুক্তি আমাদের হাতে, পাট আমাদের ঐতিহ্য, এখন প্রয়োজন সম্মিলিত সদিচ্ছা ও নীতিগত দৃঢ়তা। যদি আমরা এখনই পদক্ষেপ নেই, তবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম আমাদের ধ্বংসস্তূপের উত্তরাধিকারী হবে। তবে যদি আমরা জাগি, বাংলাদেশ হতে পারে এমন এক দেশ, যেখানে প্রযুক্তি, প্রকৃতি ও প্রজন্মের মধ্যে থাকবে এক মহাজাগরণ।