প্রতিটি জেলায় একটি করে নদী দখল-দূষণমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছিল সরকার। সে উদ্যোগ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ৬২ জেলা থেকে ৬২টি নদী নির্বাচন করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। রাঙ্গামাটি ও নওগাঁ জেলা থেকে এখনো কোনো নদীর নাম তালিকাভুক্ত হয়নি। জেলা প্রশাসকদের দেয়া সময় অনুযায়ী সব জেলার একটি করে নদী দূষণমুক্ত করতে সময় লাগবে ১৬ দিন থেকে সর্বোচ্চ এক বছর তিন মাস। এর আগে জেলা প্রশাসকদের কাছে নদীর নাম ও দখল-দূষণমুক্ত করার সম্ভাব্য সময়সহ আনুষঙ্গিক তথ্য চাওয়া হয়। জেলা প্রশাসকরা সময় ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠান। দুটি জেলা বাদে সব জেলার নদীর নাম পাওয়া গেছে বলে মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
নদ-নদী দূষণমুক্ত করার তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তালিকা আমাদের হাতে চলে এসেছে। দুই-একটা জায়গায় আমরা নদীর নাম পরিবর্তন করতে বলেছি।’
জেলা প্রশাসকদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে দেখা গেছে, তারা নিজ নিজ এলাকার নদী দখল ও দূষণমুক্ত করার জন্য ভিন্ন সময় নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলার শীতলক্ষ্যা নদী সবচেয়ে কম সময়ে দখল ও দূষণমুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। নদীটি মাত্র ১৬ দিনে পরিষ্কার করা হবে বলে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া সবচেয়ে বেশি সময় লাগবে ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদীর ক্ষেত্রে। এ নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে সময় লাগবে এক বছর তিন মাস।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে ৬২টি জেলার একটি করে নদী দূষণমুক্ত করা হবে। পরে ধীরে ধীরে দেশের সব নদ-নদী দূষণমুক্ত করা হবে। এ লক্ষ্যে চূড়ান্ত হওয়া তালিকা এখন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তালিকায় দেখে গেছে ঢাকা বিভাগের ১৩টি জেলার ১৩টি নদী হলো ঢাকা জেলার জয়পাড়া, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা, মুন্সিগঞ্জের রজতরেখা, গাজীপুরের লবণদহ, নরসিংদীর খড়িদেয়া, টাঙ্গাইলের লৌহজং, কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা, শরীয়তপুরের জয়ন্ত, মাদারীপুরের কুমার লোয়ার, ফরিদপুরের কুমার, রাজবাড়ীর চত্রা, গোপালগঞ্জের মাদারীপুর বিল রুট (এমবিআর) ও মানিকগঞ্জের কালীগঙ্গা।
চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলার ১০টি নদী হলো চট্টগ্রামের হালদা, কক্সবাজারের বাঁকখালী, নোয়াখালীর ছোট ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস, কুমিল্লার গোমতী, ফেনীর মহাদিয়া খাল, লক্ষ্মীপুরের ডাকাতিয়া, চাঁদপুরের ডাকাতিয়া, বান্দরবানের ম্যাক্সি ও খাগড়াছড়ির চেংগী। এ বিভাগের রাঙ্গামাটি জেলা থেকে কোনো নদীর নাম দেয়া হয়নি। এ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট জেলা থেকে বলা হয়েছে, এ জেলার নদ-নদীতে কোনো দূষণ নেই।
ময়মনসিংহ বিভাগের ময়মনসিংহ জেলার সুতিয়া, খিরু, বানার ও ব্রহ্মপুত্রের মধ্যে যেকোনো একটি, নেত্রকোনার মগড়া, জামালপুরের পুরান ব্রহ্মপুত্র ও শেরপুরের মহারশি নদী।
রংপুর বিভাগে আট জেলার নদীগুলো যথাক্রমে রংপুরের আলাইকুড়ি, নীলফামারীর হরিভাঙ্গা, পঞ্চগড়ের বেরং, ঠাকুরগাঁওয়ের শুক রিভা, লালমনিরহাটের সতি, কুড়িগ্রামের গিরাই, দিনাজপুরের গর্ভেশ্বর ও গাইবান্ধার আলাই নদী।
সিলেট বিভাগের চারটি জেলার নদীগুলো যথাক্রমে সিলেটের সুরমা, সুনামগঞ্জের লাউয়া, হবিগঞ্জের সুতান ও মৌলভীবাজারের মনু নদ। বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার নদীগুলো যথাক্রমে বরিশালের কীর্তনখোলা, ভোলার জাঙ্গালিয়া, পিরোজপুরের বেলুয়া, বরগুনার পায়রা, ঝালকাঠির ধানসিঁড়ি ও পটুয়াখালীর পটুয়াখালী নদী। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার নদীগুলো হলো খুলনার সালতা, বাগেরহাটের মরাচিত্রা, সাতক্ষীরার বেতনা, যশোরের আপারভদ্রা, ঝিনাদগের চিত্রা, মাগুরার নবগঙ্গা, নড়াইলের চিত্রা, কুষ্টিয়ার কালীগঙ্গা, চুয়াডাঙ্গার মাথাভাঙ্গা ও মেহেরপুরের ভৈরব নদ। রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলার নদীগুলো যথাক্রমে রাজশাহীর বড়াল, সিরাজগঞ্জের ফুলজোড়, বগুড়ার করতোয়া, পাবনার আত্রাই, নাটোরের নারোদ, জয়পুরহাটের চিড়ি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদী। তবে এ বিভাগের নওগাঁ জেলার কোনো নদীর নাম পাওয়া যায়নি।